শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

ইসলাম মানবজাতির জন্য সর্বোচ্চ নেয়ামত

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : এ পৃথিবীতে মানব জাতিকে যে সর্বোচ্চ নেয়ামত দান করে আল্লাহ তা’য়ালা সম্মানিত করেছেন তা হচ্ছে ইসলাম। মুসলিম জাতি এ দ্বীনকে অনুসরণ করার সৌভাগ্য অর্জন করে ধন্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ইসলাম যে মানব জাতির জন্য আল্লাহ তা’য়ালার সর্বোচ্চ নেয়ামত সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। আমার নেয়ামতকে তোমাদের প্রতি পরিপূর্ণ করে দিলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করে দিলাম। (আলমায়েদা: ৩) আল্লাহ তা’য়ালা আরও বলেন, তিনি তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কষ্ট ও সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে অটল থাকো। তিনি তোমাদেরকে মুসলিম হিসেবে নামকরণ করেছেন পূর্বে এবং এ কিতাব যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষ্যদাতা হয়ে যান এবং তোমরার সাক্ষ্যদাতা হয়ে যাও মানব জাতির জন্য। সুতরাং তোমরা নামাজ কায়েম করো,যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ করো। তিনিই তোমাদের প্রভু। আর কতই না উত্তম প্রভু এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী তিনি। (হজ্ব:৭)
আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, এ নেয়ামতের শোকর গোযার হওয়া। যে দায়িত্ব পালনের জন্য আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের বাছাই করেছেন, তা পালন করা। সেটা হচ্ছে, মানব জাতির কাছে সত্যের সাক্ষ্য পেশ করা। আর তা করার জন্য শুধু ইসলাম সম্পর্কে সুন্দর বক্তৃতা দিলেই হবে না। নিজেরা ইসলামের প্রকৃত ধারক বাহক হয়ে পথহারা মানবতাকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ, ইসলাম শুধু কতগুলো ঠুনকো আক্বীদা বিশ্বাসের নাম নয়। ইসলাম হচ্ছে স্বচ্ছ আকীদা,বিশ্বাস,পরিচ্ছন্ন ও যুক্তিসঙ্গত ইবাদত অনুষ্ঠান, সুস্থ ও সাবলীল এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠনের সমন্বিত প্রয়াস। মুসলিম জনতা,ইসলাম যে আল্লাহর কত বড় নেয়ামত তা উপলদ্ধি করতে হলে তাকিয়ে দেখুন পৃথিবীর অন্যান্য জাতিগুলোর প্রতি। বিজ্ঞানের চরম উন্নতি সাধন সত্তে¡ও আক্বীদা বিশ্বাস, ইবাদতের অনুষ্ঠান এবং জীবন বিধান ও নৈতিকতার দিক থেকে মানুষ মূর্খতার অতল গহবরে নিমজ্জিত। জীবন পরিচালনার নৈতিক ধ্বস সভ্য সমাজের মানুষকে বন্য জন্তÍর চেয়েও নিকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে। নারী পুরুষের মিলনের পবিত্র ও সুমহান প্রতিষ্ঠান বিবাহকে তুলে দিয়ে জেনা ব্যভিচারকেই শুধু বৈধ মনে করা হচ্ছে না, সমকামিতার মত অভিশপ্ত আচরণ ছড়িয়ে দিয়ে তা বৈধ করার দিকে এগিয়ে চলছে মানব সভ্যতা! ইসলামের দৌলত থেকে বঞ্চিত থাকার কারণেই মানবতার আজ এ অধঃপতন। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করে, যারা ঈমানদার, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কাফের হয়ে গেছে, তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত খোদাদ্রোহী শক্তি)। এরা তাদের আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে যায়। এরাই হলো জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরদিন অবস্থান করবে।(বাক্বারা:২৫৭) এমন সুন্দর একটা দ্বীনের নেয়ামতের কারণেই ইসলামের দুশমনরা আজ আমাদের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে। কারণ অন্যদের কাছে ধর্ম নামে যা রয়েছে তার অসারতা তাদের কাছে লুকায়িত নয়। মানব জাতিকে পথ দেখানো এবং নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা তাতে নেই। সে ব্যবস্থা একমাত্র ইসলামেই রয়েছে। ইসলামের কারণেই মুসলমানদের ব্যাপারে তাদের এত দুশমনি। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেছেন, আহলে কিতাবদের অনেকেই চাই যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কাফির বানিয়ে দিতে। তাদের কাছে সত্য উদ্ভাসিত হওয়ার পরও প্রতিহিংসা বশত: তারা এমনটি করে যাচ্ছে।..”(বাক্বারা): ১০৯) আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, তারা চায় তোমরা কাফির হয়ে যাও, যেভাবে তারা কাফির হয়ে গেছে, তাহলে তোমাদের আর তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবেনা। (আন নিসা:৮৯) এ অবস্থা শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঘটছে তাই নয়। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর সময় থেকে তা শুরু হয়েছে, দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তারা সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদেরকে দ্বীন থেকে সরিয়ে নিতে পারে, যদি তা সম্ভব হয়.....। (বাক্বারা: ২১৭) কিন্তু আল্লাহ কি তাদের সফল করবেন? আল্লাহ বলেছেন, “তারা চায় মুখের ফুৎকার দিয়ে আল্লাহর আলোকে নিভিয়ে দিতে। আর আল্লাহ চান অবশ্যই তার আলোকে পূর্ণতায় পৌঁছিয়ে দিতে। তা কাফেরদের যতই অপছন্দ হোক।” (তাওবা: ৩২)
ইসলামের ব্যাপারে তারা যতই দুশমনি অব্যাহত রাখুক না কেন, ইসলামকে পর্যুদস্ত করতে তারা কখনো সফল হবে না। কারণ ইসলামের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ কুরআনকে আমি নাযিল করেছি। আমিই তার হেফাযত করবো।-(হিজর: ৯) এর বাস্তব প্রমাণ হলো দেড় হাজার বছর থেকে দুশমনদের পক্ষ থেকে ইসলাম বহুমুখী ও চরম আক্রমণের শিকার হওয়া সত্তে¡ও ও তার চরিত্রে বৈশিষ্ট্যে এতটুকু কলঙ্ক লেপন করতে তারা সক্ষম হয়নি। ইসলামের সুমহান বাণী আজও পর্যন্ত সাবলীল ও সতেজভাবে বহমান রয়েছে যেমনি ছিল স্বয়ং নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর সময়ে। শত অসৎ প্রচেষ্টায় মোকাবিলায় দ্বীনে ইসলামের সাবলীল নির্ভেজাল রুপকে ধরে রাখার জন্য একদল নিরলস কর্মী বাহিনীকে আল্লাহ সর্বদাই নিয়োজিত রাখছেন। তারা এ দ্বীনের রক্ষণাবেক্ষণে অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করেন। দুশমনের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন। মানুষের কাছে দ্বীনের সঠিক চিত্র উদ্ভাসিত করে তোলেন। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের একটি অংশ সদা সর্বদা হকের উপর এমন মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে যে, প্রতিপক্ষ তাদের সাথে যতই দুশমনি করুক না কেন, তাদের এ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারবে না। আল্লাহর চুড়ান্ত সময় না আসা পর্যন্ত তারা কাজ চালিয়ে যেতেই থাকবে । (বুখারী) অন্য হাদীসে তিনি বলেছেন,আল্লাহ তায়ালা এ উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর মাথায় এমন লোককে পাঠাবেন যে, তাদের জন্য দ্বীনকে নবায়ন করবেন”-(আবু সাউদ)। অর্থাৎ মুজাদ্দিদ পাঠিয়ে দ্বীনের আসল রুপকে পুনরায় উদ্ভাসিত করে দেবেন।
মোট কথা দ্বীন হারিয়ে যাবে, লুপ্ত হয়ে যাবে অথবা বিকৃত হয়ে যাবে-দুশমন এর সুযোগ কখনো পাবেনা। দ্বীনকে এমন বিপদগ্রস্ত হতে দেবেন না আল্লাহ কোন দিনই। কিন্তু বিপদগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে মুসলিম হিসেবে আমাদের। ইতিমধ্যেই আমরা বিপদগ্রস্ত হয়ে গেছি। চতুর্দিক থেকে মুসলিম উম্মাহ হামলার শিকার হয়ে গেছে। বিশেষ করে প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যে,মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতেও যেন অনেকের সাহস হচ্ছে না। মুসলিম নাম ধারণ করেও কেউ কেউ মনে হয় বিপদে পড়ে গেছেন।
অনেকেই হয়তো আল্লাহ’র প্রতি অভিমান করে আছেন, মুসলমানরা কেন এত নিগৃহীত হচ্ছে! আল্লাহ’র সাহায্য কেন আসছে না!অথচ আমরা আত্মসমালোচনা করে দেখিনা যে, সত্যিই কি আমরা আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার উপযুক্ত ? আমরা কি আল্লাহর দ্বীনকে সত্যিকারভাবে ধারণ করেছি? এত সম্মানিত নেয়ামত দ্বীন ইসলামের অনুসারী হতে পেরে কি সত্যি আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি? আল্লাহ বলে দিয়েছেন, প্রকৃত ইজ্জত সম্মানও মর্যদার অধিকারী তো হচ্ছেন আল্লাহ ও তার রাসূল ও মুমিনগণ। কিন্তু মুনাফিকগণ তা উপলদ্ধি করে না। (মুনাফিকুন:৮)
প্রকৃত মর্যাদা ও সম্মান পেতে হলে আমাদের অবশ্যই আল্লাহর দ্বীনের দিকে ফেরত আসতে হবে। ইসলামের নেয়ামতকে উপলদ্ধি করতে হবে। এ নেয়ামতের ক্বদর করে শোকার গোযার হতে হবে। ইসলামের সুমহান বাণীকে প্রচার মাধ্যমের ধুম্রজাল ছিন্ন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হবে আস্থা ও আত্মমর্যাদা সাথে। ওমর (রাঃ) বলেছেন,আমরা সে জাতি, যাদেরকে আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সম্মানে ভুষিত করেছেন। আমরা যদি কখনো ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতে আমাদের মর্যাদা অন্বেষণ করি, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের অপদস্ত করবেন। সে পরিস্থিতিরই আমরা শিকার হয়ে আছি নিঃসন্দেহে। তবে আমাদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই, আমরা যদি আন্তরিকভাবে ইসলামের দিকে ফেরত আসি, আল্লাহর পক্ষ থেকে নুসরত আসার নিশ্চিত সুসংবাদ আমাদের জন্য রয়েছে, আর তোমরা নিরাশ হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, তোমারা বিজয়ী হবে, যদি তোমরা (সত্যিকার মুমিন হও। (আল ইমরান: ১৩৯) আল্লাহ আরও এরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদেও কথামতো চলো, তাহলে ওরা তোমাদের পেছনে ফেলে দেবে,তাতে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বরং আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তার সাহায্য হচ্ছে উত্তম সাহায্য। খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ ওরা আল্লাহর সাথে শরীক বানিয়ে নিয়েছে যা সম্পর্কে কোন দলিল অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো জাহান্নামের আগুন। বস্তুত যালিমদের ঠিকানা অত্যান্ত নিকৃষ্ট। (আল ইমরান:১৪৯)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন