মো. তোফাজ্জল বিন আমীন
রাজধানী ঢাকার যতগুলো সমস্যা পরিলক্ষিত হয় তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ছোট-বড় গর্তে ভরে গেছে রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক। ভাঙাচুরা সড়ক ও জলাবদ্ধতার পাশাপাশি অসহনীয় যানজট জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঢাকা শহরের এমন কোন সড়ক বা অলিগলি নেই, যেখানে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে না। সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ বিভিন্ন সংস্থা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি ইচ্ছেমতো খুঁড়ছে। দেখা যায় যে এক সংস্থা একটি রাস্তা কেটে মাত্র মাটি ফেলেছে, পরদিন আরেক সংস্থা এসে আবার ওই রাস্তাই কাটছে। আবার এমনও দেখা যায় যে, একই রাস্তায় ওয়াসার পানি ও স্যুয়ারেজ লাইন, তিতাসের গ্যাসলাইন, পিডিসি ও বিটিসিএলের নতুন কেবল লাইন বসানো বা মেয়ামতের কারণে প্রায় বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ওইসব কাজ পরিচালনার জন্য মহানগরীর রাস্তার এক বিরাট অংশ কেটে ফেলা হয়। ফলে জনগণের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। কখনও ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন ফেটে তরল বর্জ্যে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমের শেষের দিকে শুরু হয় বেশির ভাগ সংরক্ষণ ও মেরামতের কাজ। এ সময়ে বয়ে যাওয়া দমকা বাতাসে খোঁড়া রাস্তার ধুলোবালিতে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যায়। নিঃশ্বাসের সাথে ধুলা-বালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয় হাজারো নগরবাসী। যদিও খোঁড়াখুঁড়ির পূর্বশর্ত হলো প্রতিদিনের খনন করা অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকা, আড়াআড়ি খননের ক্ষেত্রে স্টিলের পাত দিয়ে গর্ত ঢেকে রাখা, সাইনবোর্ড টাঙিয়ে খননের উদ্দেশ্য, কাজ শুরু ও সমাপ্তির তারিখ প্রদর্শন করা। অনিবার্য না হলে খননকাজ শুধু রাতেই করতে হবে এবং সকাল হওয়ার আগে খনন করা মাটি বা পরিত্যক্ত নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে হবে। ওইসব কথা কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে কিছুই পরিলক্ষিত হয় না। যে কারণে দুই মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায় তীব্র যানজটে। কবে এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে নগরবাসী সেটা আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন।
বর্ষা মৌসুম এলেই রাজধানীতে শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। ঢিলেতালে থেমে থেমে চলতে থাকে কাজ। বছরজুড়ে বাজেট পাস করে কাজ শুরু করা হয় ঝড়-বৃষ্টির দিনে। কারণ বৃষ্টির পানিতে একবার করা কাজ ভেসে গেলে পরবর্তী বছরগুলোতে আবারও একই কাজের বাজেট পাস করা হয়। উন্নয়নের নামে হরিলুটের টাকা সুইস ব্যাংকে জমা রাখা যায়। অনেক জায়গায় এই খোঁড়াখুঁড়ির ফলে রাস্তার মধ্যে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টির পানিতে এসব গর্ত পরিণত হয় মৃত্যুকূপে। প্রতিনিয়ত রিকশা, লেগুনা, বাস উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিভিন্ন ওয়ার্ডের গলিপথগুলোর। খানাখন্দ, ম্যানহোলের ঢাকনাবিহীন উঁচু-নিচু সড়কে পিচ, ইট, সুরকি খোয়া উঠে তৈরি হয়েছে ছোট বড় গর্ত। বিশেষ করে মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, মৌচাক, রামপুরা, কাকরাইল, নয়া পল্টন, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুরসহ রাজধানীর অধিকাংশ সড়কের বেহাল অবস্থা। নারী ও শিশুদের পক্ষে এ পথে চলা দুরূহ। নগরীতে এ মুহুর্তে কোথাও ফ্লাইওভার নির্মাণের নামে, কোথাও পানি, কোথাও গ্যাস, কোথাওবা বিদ্যুতের পাইপ লাইন মেরামতের নামে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে বেড়েছে যানজট এবং চলাচলের বিড়ম্বনা। কবে এই খোঁড়াখুঁড়ির অবসান হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব মিলিয়ে মনুষ্যসৃষ্ট এ দুর্ভোগে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখলেও এক বছরের কাজ তিন বছরে বাস্তবায়নের কারণে যে জনভোগান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তা লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলার সঙ্গে তুলনীয়। উন্নয়নের কাজের জন্য সাময়িক অসুবিধা মেনে নেয়ার ব্যাপারে নাগরিকদের আপত্তি নেই; কিন্তু তা যদি অনন্তকালের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তবে সে উন্নয়নের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। আমরা আশা করব, সরকার খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগের হাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন