শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন
দেশে জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এ জন্য জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কর্মসূচি রয়েছে। শিক্ষকগণকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষকরে তোলাই প্রশিক্ষণের মৌলিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। জীবন দক্ষতা হচ্ছে মনো-সামাজিক (psycho-social) দক্ষতা, যা আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে ও সমস্যা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, , Life skills are abilities for adaptive and positive behaviour that enable individuals to deal effectively with the demands and challenges of everyday life জীবন দক্ষতা এবং জীবিকা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এক নয়। জীবন দক্ষতা হলো ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির বা সমাজের সর্ম্পক বিষয়ক দক্ষতা যা বিভিন্ন সমস্যা উত্তরণে সাহায্য করে। ব্যক্তির নিজ জীবনের বা মনোগত সমস্যা সংকট উত্তরণের দক্ষতা। এ দক্ষতা শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সকল শক্তি ও সম্ভাবনার বিকাশ ঘটিয়ে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সফল হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। জীবন দক্ষতা ধারণাটি সুস্বাস্থ্যের সাথেও সম্পর্কিত। এ দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক আচরণ করতে এবং ঝুঁকি পূর্ণ আচরণ পরিহার করতে অভ্যস্ত করে নানা রকম রোগের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখে। তবে এখানে সুস্বাস্থ্য শব্দটি ত্রিমাত্রিক শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক এ তিন ধরনের নির্দেশ করে।
জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বা Life Skills Based Education (LSBE) এমন একটি শিখন শেখানো অভিজ্ঞতা বা অ্যাপ্রোচ যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জীবনের দক্ষতাসমূহ অর্জন করে। জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে আত্মসচেতন ও আত্ম বিশ্বাসী হতে, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সূ² ও সৃজনশীল চিন্তনে কার্যকর যোগাযোগ সৃষ্টিতে, সুস্থ সম্পর্ক গড়তে, অন্যের প্রতি সহমর্মী হতে এবং চাপ ও আবেগ মোকাবিলায় সমর্থ করে তোলে। এর ফলে শিক্ষার্থী ইতিবাচক আচরণ আত্মস্থ করার মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ ও বিচার বুদ্ধি সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। জীবন ও দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা শিক্ষার্থীকে সুরক্ষামূলক আচরণ করতে এবং ঝুঁকিপূর্ন আচরণ পরিহার করতে সমর্থ করে। শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও মানসিকতার মধ্যে ভারসাম্য বিধান করে শিক্ষার্থীর আচরণিক পরিবর্তন ঘটায়। এ শিক্ষা প্রদানে অংশগ্রহণমূলক ও শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিখন শেখানো পদ্ধতি আবশ্যক। কারণ, এ শিক্ষা কর্মসূচীর মধ্যেই প্রতিটি শিক্ষার্থী কর্তৃক প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য ব্যবস্থা সন্নিবেশিত থাকে। এ কারণে এ শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকের যথাযথ প্রশিক্ষণ একটি পূর্বশর্ত। জীবন দক্ষতা শনাক্ত করা যায়, প্রদর্শন করা যায়, উপদক্ষতা ও অনুদক্ষতা বিভাজন করা যায়, অনুকরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্জন করা যায়, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যায়। এসব কিছুই জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে সম্পাদন করা যায়। এ শিক্ষা জেন্ডার প্রবণ, অধিকারভিত্তিক ও বয়সোপযোগী। এটি ছেলে মেয়ে উভয়েরই ব্যক্তিগত ও সামাজিক সমস্যা প্রতিকূলতা মোকাবিলার ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে প্রস্তÍত করা হয়। এ শিক্ষা শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন করে মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কের উন্নয়ন সাধন করে। বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করে, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করে ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস করে। এ শিক্ষা শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন করে এবং উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে সক্ষম, সুস্থ, দক্ষ, নীতবান ও বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলে সুষ্ঠু সমাজ গঠনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার সার্বিক উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীর আধুনিক জীবন ও সমাজ সম্পর্কে সচেতন করা এবং সফলতা লাভের জন্য আত্মবিশ্বাসী করে তোলা। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতা থেকে উত্তরণে সক্ষমতা অর্জন এবং শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ সবল ও নিরাপদ জীবনযাপন করা। জীবন ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু প্রধানত জীবনের সমস্যা ও বিপদের সাথে সম্পর্কিত। এই বিষয়বস্তু, স্থান, কাল, পাত্র সামাজিক মূল্যায়ন, রীতিনীতি ও গোষ্ঠীর প্রত্যাশাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। বর্তমানে কিশোর কিশোরীরা তাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। (১) কিছু সাধারণ সমস্যা ও পরিস্থিতি যেগুলি বিশ্বব্যাপী সকল কিশোর-কিশোরীকেই মোকাবিলা করতে হয়। যেমন- মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি, বিভিন্ন যৌনরোগ ও এইচআইভিতে আক্রান্ত্র হওয়ার ঝুঁকি, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়। সহিংসতা এবং সন্ত্রাসের কবলে পড়া। কিন্তু সমস্যা, চ্যালেঞ্জ যেগুলো অঞ্চল বা দেশ বিদেশে দেখা যায়। (২) যেমন শিশু পাচার ও শিশুশ্রম, শারীরিক মানসিক ও যৌন নির্যাতন, যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও অকাল গর্ভধারণ পুষ্টিহীনতা, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা, জঙ্গিবাদ, জেন্ডার বৈষম্য ইত্যাদি
প্রধানত উন্নয়নশীল ও সল্পোন্নত দেশের শিশু কিশোরদের এসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা বেশি করতে হয়। বিশ্বব্যাপী ও অঞ্চল বিশেষে বিরাজমান সমস্যা উভয় ক্ষেত্রেই জীবন দক্ষতা কার্যকর সমাধান দেয়। তাই উপযুক্ত সকল বিষয়ই জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার বিষয়বস্তু। এসব ছাড়াও বিশেষ চহিদা সম্পন্ন শিশু যেমন অটিজম আক্রান্ত বা শারীরিকভাবে অসমর্থ এমন শিশুদের সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রেও জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা অত্যন্ত কার্যকর। এসব শিশুদের স্বাবলম্বী জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় মনোসামাজিক এবং মনোদৈহিক দক্ষতাগুলো জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। একারণে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এসব শিশুর নানা রকম চাহিদা পূরণের বিষয়টি জীবন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার আওতাভুক্ত। যেহেতু জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম উপায়, সেহেতু এই শিক্ষা কর্মসূচির সাথে সমাজ কল্যাণ বা সমাজ কর্ম বিষয়ক কর্মসূচির সম্পৃক্ততা আছে।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Bhola ghosh ২২ জানুয়ারি, ২০২২, ২:৫৪ পিএম says : 0
Vlo
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন