শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

৫৭ ধারার কালাকানুন বহাল রাখা হলে সাংবাদিক সমাজ মানবে না সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলোপের পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেন, কোন টালবাহানা না করে এখনই ৫৭ ধারাসহ মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে। নতুন নামে আইনটি আনা হলে তা হবে নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশনের সমান। ৫৭ ধারার মতই নতুন আইনেরও অপপ্রয়োগ হবে। প্রস্তাবিত স¤প্রচার আইনও গণমাধ্যমের কন্ঠ স্তব্ধ করার জন্য ভয়ানক কালো ধারা যুক্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, নাম পাল্টে একই আইন রাখা হলে তা দেশের সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন । তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার প্রতিবাদে এবং মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ -২২ ধারা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন- ডিইউজে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, প্রমুখ।
সমাবেশে শওকত মাহমুদ বলেন, ৫৭ ধারা এই মুহূর্তে বাতিল করতে হবে। এ ধারায় হওয়া সব মামলা এখনই প্রত্যাহার করতে হবে। আর নতুন করে যাতে কোন মামলা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫৭ ধারার আদলে নতুন কোন আইন বা ধারাও সাংবাদিক সমাজ মানবে না। তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা পরিবর্তন করে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের’ ১৯ থেকে ২২ ধারায় একই বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রস্তাবিত স¤প্রচার আইনে কোন সংবাদে সরকার অসন্তুষ্ট হলে সাংবাদিককে ৭ বছরের জেল ও ৫ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। সাংবাদিক নেতারা নামে বা বেনামে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী কালো আইন মাথায় ঝুলিয়ে রাখার মানে হচ্ছে ভীতি ও আতঙ্কে রাখা । তিনি বলেন, ৫৭ ধারা কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই নয়, বহু তরুণের বিরুদ্ধে ঠুনকো অজুহাতে মামলা ও সাজা দিয়ে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এর ভয়ে অনেক যুবক দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজকে এ কালো আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানান।
রুহুল আমীন গাজী বলেন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে অতীতে কোন স্বৈরাচারী সরকার রক্ষা পায় নি। বর্তমান অবৈধ সরকার গদি রক্ষার জন্য একের পর এক কালো আইন করছে। তাতে শেষ রক্ষা হবে না। তিনি অবিলম্বে সাগর-রুনী হত্যাকারিদের গ্রেফতারের দাবি জানান ।
এম আবদুলবলাহ তাঁর বক্তব্যে ৫৭ ধারার পক্ষে সংসদে তথ্য মন্ত্রীর সাফাই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গত এক মাসে ৫৭ ধারায় বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকায় আজমল হক হেলাল, গোলাম মুজতবা ধ্রুব, নাজমুল হোসেন, আহমদ রাজু, ছিদ্দিকুর রহমান, চট্টগ্রামে তৌফিকুল ইসলাম বাবর, হবিগঞ্জের গোলাম মোস্তাফা রফিক কয়েক দিনের ব্যবধানে ৫৭ ধারার শিকার হয়েছেন। নতুন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, ৫৭ ধারা শুধু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্যই নয়, গণতান্ত্রিক চেতনা ধ্বংসের জন্য এটা করা হয়েছে। এটা আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী ।
এদিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) নেতৃবৃন্দ। এই সময়ের মধ্যে ৫৭ ধারা বাতিল না হলে আন্দোলন আরও কঠিন হবে বলে ঘোষণা দেন তারা। গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সদস্যসহ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার ও ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিতে ক্র্যাব আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি আবু সালেহ আকন। তিনি বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে ৫৭ ধারার মতো কালো আইন বাতিল করতে হবে। এছাড়া সাংবাদিক ধ্রæব’সহ অন্যান্য সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তা না হলে সাত দিন পর আমরা একই জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবো। এরপরও ৫৭ ধারা বাতিল না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান কামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আক্তার হোসেন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন