মহিউদ্দিন খান মোহন : দেশে বর্তমানে যে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজিত নেই সেটা অস্বীকার করা যাবে না। সর্বত্র একটা ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিনিয়ত এমনসব ঘটনা ঘটছে যেগুলোকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়া কঠিন। কিছু কিছু ঘটনা থেকে যাচ্ছে রহস্যের কুয়াশার আড়ালে। রাষ্ট্র জনসাধারণকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না বললে কেউ কেউ রুষ্ট হলেও এ চরম সত্যকে অস্বীকার করা যাবে না। সাধারণ মানুষের জীবন, সম্পদ অনেক আগেই হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাহীন। এখন দেশে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তাও প্রশ্নের সম্মুখীন।
কবি গবেষক ও মুক্ত চিন্তার লেখক ফরহাদ মজহারের এক দিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া এবং দ্রæত প্রত্যাবর্তন প্রমাণ করে দিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশে কেউই আর নিরাপদ নয়। ঘটনাটি এতোটাই আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত ছিল যে, সবাই শোনা মাত্র বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষত. তার এ অন্তর্ধান এবং উদ্ধারের ঘটনা এতোটাই রহস্য ঘেরা যে, এখনো সর্বত্র জল্পনা কল্পনা চলছে। ফরহাদ মজহারের পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি ৩ জুলাই ভোর পাঁচটায় বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন ‘ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এর পর তার ফোন অফ হয়ে যায়। ঘটনা দ্রæত ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। প্রতিবাদ নিন্দার ঝড় ওঠে। বিরোধী দল এ ‘অপহরণে’র জন্য সরকারকে দায়ি করে। সারাদিন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত বিষয় হয়ে থাকেন ফরহাদ মজহার। অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে শোনানো হয় যশোরের নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের কাহিনী। এর আগে সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে যে, ফরহাদ মজহারের খোঁজে পুলিশ র্যাব খুলনায় ব্যাপক তল্লাশী চালাচ্ছে। সেখানকার একটি সড়ক ও কয়েকটি বাড়ি পুলিশ র্যাব সারাদিন ঘেরাও করে রেখেছিল এমন কথাও প্রচার করা হয়। ছাড়ানো হয় খুলনার একটি কাবাবের দোকানে তার সবজি-ভাত খাওয়ার কথা। পরে বলা হয়, যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর তাকে ঢাকায় আদাবর থানায় আনা হয়, সেখান থেকে তাকে হাজির করা হয় আদালতে। আদালত তাকে নিজ জিম্মায় পরিবারের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন। বর্তমানে ফরহাদ মজহার হাসপাতালে চিকিৎসাদিন আছেন।
ঘটনাটি রহস্যময় সন্দেহ নেই। কেননা, ফরহাদ মজহারের মতো একজন মানুষ বালকদের মত ঘর পালিয়ে পরিবারকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নিশ্চয়ই যশোর চলে যাননি। তিনি কীভাবে যশোর গেলেন, কারা তাকে নিয়ে গেল, কেন তাকে অপহরণ করা হলো-এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায় নি। ফরহাদ মজহার নিজে যা বলেছেন তাও সংক্ষিপ্ত। তিনি বলেছেন, তাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কারা কোন উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছিল, কীভাবে তিনি যশোর নওয়া-পাড়ায় একটি বাসের পেছনের সীটে মুক্ত অবস্থায় বসে থাকলেন সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি তিনি।
এদিকে অনান্য ঘটনার মতো ফরহাদ মজহারের ঘটনা নিয়েও রাজনৈতিক বেøইম গেইম চলছে। বিএনপি বলেছে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও বিরোধী দলকে ভয় পাইয়ে দিতে সরকার ফরহাদ মজহারের অপহরণের নাটক মঞ্চস্থ করেছে। গত ৪ জুলাই এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির এ বক্তব্যকে ‘উদভ্রান্তের প্রলাপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাসান মাহমুদ একই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ছে।
সব মিলিয়ে একটি রহস্য ঘেরা পরিস্থিতি। পুলিশ বলছে তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কিছুই বলা যাবে না। আবার ফরহাদ মজহারের বক্তব্য আমলে নিলে প্রশ্ন উঠে সরকারকে বিব্রত করতে কারা তাকে অপহরণ করেছিল ? এ ক্ষেত্রে অভিযোগের তীর যে সরকারবিরোধীদের দিকেই যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ফরহাদ মজহারের সা¤প্রতিক লেখালেখি বা কথাবার্তা সরকারের পক্ষে ছিল না। বরং বিভিন্ন বিষয়ে তিনি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। এমতাবস্থায় সরকার তাকে ভয় দেখানোর জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছিল এটা ধারণা করা অসঙ্গত নয়। কিন্তু যে সরকারের সমালোচনায় তিনি মুখর, সে সরকারকে বিব্রত করার জন্য কারা তাকে অপহরণ করেছিল, এটা ফরহাদ মজহারকে পরিষ্কার করতে হবে। না হলে বিষয়টি হয়ে পড়বে আরো জটিল, আরো রহস্যাবৃত।
ফরহাদ মজহারের অপহরণ ও উদ্ধারের পর সামনে চলে এসেছে বেশ কিছু বিষয়। বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জননিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আবার নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে গত ৬ জুলাই আমাদের সময় পত্রিকায় ‘রহস্যের শেষ নেই’ শীর্ষক এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে তিন বছরে দেশে অনেক রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ফিরে আসেননি। তারা কোথায় কি অবস্থায় আছেন তাও জানা যায়নি। পত্রিকাটি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত অপহরণ বা রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন ২৮৪ জন। এদের মধ্যে ৪৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৩৬ জনকে আইন শৃংখলা বাহিনী গ্রেফতার দেখিয়েছে। আর পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে ২৭ জন। ২৮৪ জনের মধ্যে ১৭৭ জনের কোনো হদিস এখনো পর্যন্ত মেলেনি।
এ চিত্র কোনো সুস্থ সামাজিক পরিবেশের পরিচয় বহন করে না। রাষ্ট্র নাগরিকদের যাবতীয় নিরাপত্তা দেয়ার কথা থাকলেও তা যে এখন আর সম্ভব হচ্ছে না সেটা না বললেও চলে। কেননা, বেশিরভাগ অপহরণ ঘটনা ঘটে চলেছে কোনো না কোনো আইন শৃংখলা বাহিনীর নামে। তাদের পরিচয়ে সাদা পোষাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একেকজনকে। তারপর হয় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে কোনো রাস্তার পাশে কিংবা নদী-খালের ডোবায় অথবা কিছুদিন পর তাকে দেখানো হচ্ছে গ্রেফতার। যারা ফিরে আসতে পারছে তারা যে অতীব ভাগ্যবান সে কথা না বললেও চলে। কিন্তু যারা ফেরত আসেনি বা আসে না তাদের ভাগ্যে কী ঘটে তা কেউ জানে না। যদি ধরেও নেয়া হয় যে সরকারের কোনো সংস্থা ওইসব অপহরণ বা রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনার সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়; তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, সরকার কি এর দায় এড়াতে পারে ? যদি কোনো দুষ্কৃতকারী চক্র সরকারকে বিব্রত করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তাহলে তো ওই চক্রকে চিহ্নিত করে এ অপরাধকর্ম নির্মূলে সরকারের সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করার কথা। প্রশ্ন যেখানে সরকারের ভাবমর্যাদার, সেখানে সরকার কী করে নিশ্চুপ নির্বিকার বসে থাকতে পারে ? তাছাড়া আরেকটি বিষয় জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে। তাহলো অপহরণ বা নিখোঁজের পর যারাই ফিরে এসেছেন, তারা ঘটনা সম্পর্কে পরবর্তীতে আর মুখ খোলেনি। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ, আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিক, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভির আহমদ, ডা. ইকবাল মাহমুদসহ যারাই ভাগ্যগুণে জীবন নিয়ে ফিরতে পেরেছেন তারাই মুখ বন্ধ করে ফেলেছেন। শুধু বলেছেন, তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পরে কোথাও ফেলে দিয়ে গেছে। কিন্তু কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল, কেন তুলে নিয়েছিল, কেনইবা ফেরত দিল এ সম্পর্কে তারা আর কোনো মন্তব্য করেনি। অনেকেই ধারণা করছেন যে, অপহৃত অবস্থায় তাদেরকে এমন ভয়ভীতি দেখানো হয়ে থাকতে পারে যে, পরবর্তীতে বড় ধরনের কোনো বিপদের হাত থেকে বাঁচার জন্যই তারা আর মুখ খুলতে সাহস করেন না।
সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যেহেতু সব সময় এ ধরনের অপহরণ ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে আসছে, সেহেতু আমরা ধরে নিতে পারি যে, কোনো একটি অপরাধী চক্র দেশে একটি আতংকজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সরকারের উচিত ওই অপরাধী চক্রকে খুঁজে বের করে একদিকে নিজেদের ইমেজকে ‘ক্লিন’ রাখা, অন্যদিকে জনমনে সৃষ্ট সংশয়-সন্দেহ ও শঙ্কা দূরীভূত করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সরকারের তরফ থেকে সে ধরনের কোনো উদ্যোগ আয়োজন বা পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার কেন এমন অমনোযোগী এবং নির্বিকার সেটাও এক রহস্যময় ব্যাপার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর একটি প্রতিবেদন সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। গত ৬ জুলাই প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী শত শত মানুষকে বেআইনীভাবে ধরে নিয়ে গোপন স্থানে আটক করে রেখেছে। ৮২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালেই অন্তত ৯০ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আর ২০১৭ সালের প্রথম পাঁচ মাসে একইভাবে নিখোঁজ হয়েছে ৪৮ জন। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, তুলে নিয়ে গুমের ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা দিতেও বাংলাদেশ সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সঙস্থাটির এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যড অ্যাডামস বলেছেন, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো নিয়ে যথেষ্ট তথ্য থাকার পরও বাংলাদেশের সরকার আইনের শাসনের তোয়াক্কা না করে ওই ভয়ঙ্কর চর্চা চালিয়ে যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন যে সরকারকে ভীষণ ধাক্কা দিয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দুইজন মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায়। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী এবং শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলা উচিত কোথায় কোথায় গুম অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করে বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (হিউম্যান রাইটস ওয়াচ) এত গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন ? (সূত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব, ৭ জুলাই, ২০১৭)।
সরকারের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন সরকারের গায়ে লেগেছে। তারা এ প্রতিবেদনকে যতই ভিত্তিহীন বা সুনির্র্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণবিহীন বলুন না কেন, তা যে মোটেও ভিত্তিহীন নয়, সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কেননা, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত অপহরণ, খুন গুমের ঘটনা সমূহের খবরের ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের গুরুত্ব ও প্রভাব সরকার অনুধাবন পারছে এটা ঠিক। এ প্রতিবেদন যে সরকারের ‘সুশাসন’ বিষয়ক প্রচারণার ক্ষেত্রে বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবে ঝুলে থাকবে সেটা না বললেও চলে। তাই অপহরণ খুন গুমের ঘটনা সরাসরি অস্বীকার না করে মন্ত্রীদ্বয় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিরুদ্ধে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া যে সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা তা বোধকরি বলার প্রয়োজন পড়ে না।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৬ জুলাই বনানীস্থ সেতু ভবনে একটি সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে আরো নাটক ঘটবে। তিনি বলেছেন, ফরহাদ মজহার সাহেবের ব্যাপারে তো অনেক কথা আছে। তিনি (ফরহাদ মজহার) নিজেই বলেছেন, দেশে বিদেশে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য নাটক বা অপহরণ করা হয়েছে। এটা তার নিজেরই জবানবন্দি। আমিও যদি তার কথার প্রতিধ্বনি করে একই কথা বলি তাহলে এ ঘটনাকে কী গুম বা অপহরণ বলা যাবে? আর এটা সরকারই করেছে এ কথা কী বলা যাবে? ( দৈনিক ইনকিলাব, ৭ জুলাই ২০১৭)।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ইঙ্গিতবহ মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ফরহাদ মজহারের ঘটনা যদি ‘নাটক’ই হয়ে থাকে, তাহলে এর পর্দার অন্তরালের কুশীলব কারা তা জানা অত্যন্ত জরুরি। সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে ওইসব নাটকের নির্মাতাদের। তা না করে প্রতিপক্ষের দিকে ইশারা করেই যদি সরকার দায়িত্ব শেষ করতে চায়, তাহলে সেটা হবে বিরাট ভুল। কেননা তাতে ‘আরো নাটকে’র নির্মাতারা থেকে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে আগামী রাজনীতি। সুতরাং সরকারের কাছে যদি এমন তথ্য থেকে থাকে যে, নির্বাচনের আগে আরো ‘নাটক’ হবে- তাহলে সেগুলো যাতে মঞ্চস্থ হতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। অন্যথায় এসব কথাবার্তা বেøইম গেইম হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
লেখক; সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন