শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

নির্বাচন ও সব দলের অংশগ্রহণ

অণুনিবন্ধ

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবু নোমান : জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ আবশ্যক বলে মনে করে দেশের মানুষ। শান্তি, শৃঙ্খলা, ব্যবসা, শিল্প ও বাণিজ্যের কথা বিবেচনায় রেখে নির্বাচনে সব দলের অংশ নেওয়া জরুরি। প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচন হলে কেউ কারচুপি, প্রত্যাখ্যান ও ছলচাতুরির সুযোগ পাবে না। ‘সালিশ মানি, কিন্তু তাল গাছ আমার’ নির্বাচন সামনে রেখে কোনো দলের এমন দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার আগেই জয়ী হওয়ার মাইন্ডসেট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণের ওপর আস্থা রাখতে হবে। যে কোনো মূল্যে জিততে হবে, এমন মানসিকতা থাকলে রাজনৈতিক ব্যাকরণ হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাকরণ অনুপস্থিত। ব্যাকরণ থাকলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য আজ এতো জটিল হতো না। এছাড়া ইসিকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
গত ৪৫ বছরেও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। এ কারণে নির্বাচন এলেই নানা ধরনের মতবিরোধ দেখা দেয়। বিএনপির সাম্প্রতিক বক্তব্যে বুঝা যায়, আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের আগ্রহ রয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, বিএনপিকে বাদ রেখে আরেকটি নির্বাচন করা কী সরকারের পক্ষে সম্ভব ও ঠিক হবে?
নির্বাচন ঘিরে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বর্তমান ইসি তার প্রজ্ঞা এবং গ্রহণযোগ্যতা কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নতুন আশার আলো দেখাবে বলে আশা করছে দেশের মানুষ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারার সমস্যাটি যতটা না আইনগত, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। কেবল যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ইসি থাকাই যথেষ্ট নয়। কেননা দেশে সুযোগ্য লোকের অভাব নেই। কিন্তু ইসিকে স্বাধীনভাবে, সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতায় কাজ করতে দেওয়ার মনোভাবের অভাব রয়েছে।
নির্বাচনপূর্ব একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা প্রবর্তন, দেশের সংকটকালে দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দলকে এক টেবিলে বসানো এবং সবরকম সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক পরিবেশ গঠনসহ নির্বাচনকে তার স্বাভাবিক পথে চলার চ্যালেঞ্জে ক্ষমতাসীন দল ও ইসিকেই সবচেয়ে বেশি মনযোগী হতে হবে। একুশ শতকের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্যে ইসিকে ন্যায়, নিরপেক্ষ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামীর সেই নতুন চ্যালেঞ্জগুলো সুনিরপেক্ষভাবে এবং সকল স্বার্থ ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে, কাউকে খুশি করার পরিবর্তে দেশের স্বার্থে করবে বলেই জনগণ প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেকোনো সরকারের জন্য শেষের সময়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ না পেলে শেষতক রাজনীতি কোন দিকে গড়াবে, বলা কঠিন। যদিও বর্তমানের রাজনৈতিক পরিবেশ স্বস্তিদায়ক ও শান্তিপূর্ণ হলেও এই পরিবেশ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বজায় থাকবে কি না, সেটি নির্ভর করছে ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছা ও ইসির দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ওপর। ক্ষমতাসীনরা যদি সংবিধানের দোহাই দিয়ে লোক দেখানো আলোচনা, সংলাপের মহড়া দিয়ে, সকল সম্ভাবনা ভন্ডুল করে তাহলে জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে। মনে রাখতে হবে, ক‚টকৌশলে জয়ী হলে চলবে না বরং গণতান্ত্রিক পরিবেশে, গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জয়ী হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন