শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মহীনতার তালিম

| প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ জাতি গঠনের মাধ্যম শিক্ষা। অথচ আমাদের শিক্ষাঙ্গণগুলোতে নৈতিক শিক্ষার অভাবেই অনেক বিপর্যয় সংঘটিত হচ্ছে। আর এ বিপর্যয় রোধে প্রয়োজন ছাত্রদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান। আর নৈতিকতা অর্জিত হয় ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে। অতএব নৈতিকতার উন্নয়নে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। একথা দ্রæব সত্য যে, আদর্শিক নির্দেশনাবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখতে পারে না। বিখ্যাত মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, If you give there ‘R’ sie reading, writing and arithmetic and do not give the bourth ‘R’ i e religion they are sure to became the fifth ‘R’ ‘i’ ‘e’ mescal. অর্থাৎ আপনি শিক্ষার্থীকে কেবল পঠন, লিখন ও অংক কষা শেখালেন কিন্তু ধর্ম শেখালেন না তাহলে সে দুষ্ট হতে বাধ্য। এ কারণেই আলবার্ট সিজারও শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মিকতার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, a Three kinds of progress are significant : progress in knowledge and technology, progress in socialization of man and progress in spirituality. The last one is most important
আজ আমাদের উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষাঙ্গণের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী বার্ট্রান্ড রাসেল বর্ণিত ঋরভঃয ‘জ’ Fifth ‘R’ iersscal-এর শিকার। আর এ অবস্থায় ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের দোষী করা যায় না। ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রæটি, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারে প্রচার মাধ্যমগুলোর ব্যর্থতা কম দায়ী নয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অনেক শিক্ষক আছেন যারা ক্লাশে পাঠদানের মাঝে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ধর্মহীনতার তালিম দেন, ‘¯্রষ্টা বলতে কিছু নেই’ এই ধারণা প্রদান করে থাকেন। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীদের মাঝে জবাবদিহিতার অনুভ‚তি থাকে না। তারা নিজেদেরকে স্বাধীন ও বন্ধনহীন মনে করে যে কোন পাপ কর্মে প্রবৃত্ত হতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
এর কারণ পর্যালোচনা করতে গিয়ে Professor Harold H. Tital লিখেছেন, ‘সাধারণ জ্ঞানভাÐারের অভাবের চেয়েও অধিকতর মারাত্মক হচ্ছে সাধারণ আদর্শ ও প্রত্যয়ের অনুপস্থিতি। শিক্ষা-সত্যপণ, দৃঢ় বিশ্বাস ও নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধ এবং বাধ্যতা থেকে বিজ্ঞান ও গবেষণা বিপজ্জনকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা অতীতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য থেকে নিজকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে এবং তদস্থলে বিকল্প মূল্যবোধ প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
আজকাল শিক্ষাক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন মনে করা হয়। ধর্মকে অস্বীকার করা হয় অথচ শিক্ষার সূচনা মানব সৃষ্টির সূচনাতেই। আল্লাহ পাক প্রথম আদম (আ.)কে সৃষ্টি করেই তাঁকে বিশ্বের যাবতীয় বস্তুর নাম শিক্ষাদান করেন। স্বয়ং আল্লাহপাকই হলেন বিশ্ব মানবতার প্রথম শিক্ষক। আর আদম (আ.)-এর শিক্ষার কাছে পরাস্থ হলেন ফিরিশতাকুল। পৃথিবীতে প্রেরিত সকল নবী ও রাসুলকে প্রথমে অহীর জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেই আল্লাহপাক তাদেরকে নবুওয়াত ও রেসালাতের দায়িত্ব দেন। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ প্রথম অহী ও নির্দেশ ছিল, ‘ইকরা’ ‘পড়’। আল্লাহপাক তাঁকে সর্বপ্রথম অহীতে পড়া ও লেখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বনবী (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি’। আর শিক্ষক হিসেবে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মানুষের নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন।
এদিকে লক্ষ করেই মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য হল আত্মার উন্নতি সাধন। আত্মার উন্নতি হলে সেই মানুষের সকল কর্মকাÐ সুষম মÐিত হতে বাধ্য। মূলতঃ ধর্মীয় শিক্ষাই মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে শিখায়। এ জন্য বিশ্বনবী (সা.) নারী-পুরুষ সকলের জন্য জ্ঞানার্জন করাকে আবশ্যিক করেছেন। আল্লাহপাকও জ্ঞানী ব্যক্তির মর্যাদাকে বুলন্দ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য ধর্মকে শিক্ষা থেকে পৃথক করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সংস্কারবাদী লেখক ইমদাদুল হক বলেন, ‘জ্ঞান ও ধর্ম এ দুটি শব্দের মধ্যে অর্থের কোনো ভিন্নতা নেই। ধর্মের উদ্দেশ্যে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যা শিক্ষার উদ্দেশ।’ এ বক্তব্যের আলোকে বর্তমান সমাজের অশান্তি ও অরাজকতার জন্য ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করলে অত্যুক্তি হবে না।
Islam is the complete code of life হিসেবে মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার সকল দিক ও বিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করেছে। এ সম্পর্কে মিশরীয় দার্শনিক মুহাম্মদ কুতুবেরThe concept of Islamic education গ্রন্থের উদ্ধৃতিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামের কাজ হলো পরিপূর্ণ মানবসত্তাকে লালন করা, গড়ে তোলা এমন একটি লালন কর্মসূচী যা মানুষের দেহ, তার বুদ্ধিবৃত্তি এবং আত্মা, তার বস্তুগত আত্মিক জীবন এবং পার্থিব জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের একটিকেও পরিত্যাগ করে না। আর কোনো একটির প্রতি অবহেলাও প্রদর্শন করে না।’
মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। এ শিক্ষা ব্যবস্থা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা ব্যবস্থা। এর উদ্দেশ্য ব্যাপক ও বহুমুখী। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ঈমান, আমল, অনুভ‚তি, আচরণ, নৈতিকতা, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি সকল দিক ও বিভাগেরই নির্দেশনা বিদ্যমান। মুসলমানদের নৈতিক, চারিত্রিক ও আদর্শিক বিপর্যয় রোধে এবং হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আবার ঐশী জ্ঞানের মশাল কুরআন ও হাদীসের শিক্ষার দিকে ফিরে যেতে হবে। বিশ্বনবীর (সা.) বিদায় হজ্বের বাণী যুগে যুগে পথভ্রান্ত মানবতাকে আহŸান জানিয়ে যাচ্ছে, ‘তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ তোমাদের কেহ বিপদগামী করতে পারবে না।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন