শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায় সম্পাদক পরিষদ

| প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং নতুন কোনো আইনে এই ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদ বলেছে, এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।
বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সম্পাদক পরিষদের এক সাধারণ সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এই দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরিষদের এই প্রস্তাবের কথা জানানো হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই ১৯ ধারাতেও তথাকথিত মানহানি, সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা বিশেষভাবে রাখা হয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে ৫৭ ধারাটি থাকছে না, কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯ ধারায় আরও শক্তভাবে তা রাখা হচ্ছে। আমরা এটা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে প্রস্তাবিত খসড়ার ১৫(৫) ধারা চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি বড় বাধা হবে। কারণ এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য সরকারি ভাষ্যের বিপরীত হলে তা “ডিজিটাল সন্ত্রাসী অপরাধ” হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান পর্যালোচনা ও সংশোধন করে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ করে দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি।
সম্পাদক পরিষদ অনলাইন গণমাধ্যমবিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এতেও ৫৭ ধারাসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই খসড়া নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ, এতেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয় এমন সব বিধিবিধান বাদ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানাচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেওয়ার বিধানও বাদ দেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছে। সম্পাদক পরিষদ এ ধরনের বিষয়ের প্রতিবিধানের জন্য সবার আগে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার আহŸান জানাচ্ছে। দেওয়ানি অভিযোগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দাবির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।

সম্পাদক পরিষদের প্রস্তাবে বলা হয়, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের কোনো নীতিমালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, তাদের সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল মিডিয়া তথা ওয়েবসাইট, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের আহŸান, তারা যেন গণমাধ্যমের প্রচলিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।
সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে এসব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সম্পাদক ও সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় যত মামলা আছে, তা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি করছে।
সবশেষে আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই, আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করুন এবং কোনো নতুন আইনে এই ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, এই আইনের ধারাগুলো সংবিধান পরিপন্থী এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতটপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক সমকাল-এর সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন মাহ্ফুজ আনাম, তাসমিমা হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী, শ্যামল দত্ত, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, মতিউর রহমান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন