স্টাফ রিপোর্টার : নির্বাচন কমিশনে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধীদল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাপসহ নিবন্ধিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গতকাল সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যার যার দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করে। এরমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সদস্যর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অন্যদিকে বাংলাদেশ ন্যাপের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া আয়-ব্যয়ের হিসাবে আগের বছরের তুলনায় আয় কমলেও আওয়ামী লীগের তহবিলে জমা আছে ২৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, টানা দুই বছর ঘাটতির পর এবার লাভের মুখ দেখেছে বিএনপি। আগের বছরের তুলনায় গতকাল জমা দেয়া গত বছরের দলের তহবিলে ১৪ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে দলটি। গত বছর কাউন্সিলে তোলা চাঁদা থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবার উদ্বৃত্তের কারণ বলে জানিয়েছেন রিজভী।
সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন আইন অনুযায়ী আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। এর পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো এই হিসাব জমা দিয়ে আসছে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়ার সময় দলগুলো তাদের আয়-ব্যয়ের চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করে। কিন্তু এর বিস্তারিত জানায় না কখনও। আর নির্বাচন কমিশন কখনও এই আয়-ব্যয়ের বিষয়ে কিছু বলে না। আর গত নয় বছর ধরে জমা পড়া এই হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এখন পর্যন্ত কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেটাও প্রকাশ করা হয়নি।
আওয়ামী লীগ তহবিলে জমা আছে ২৫ কোটি টাকা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় আয় গতবছর বেশ খানিকটা কমলেও দলীয় তহবিলে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য নির্বাচন কমিশনে দলটি জমা দিয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার এক কোটি ৯০ লাখ ২২ হাজার ১৭১ টাকা আয় কমেছে আওয়ামী লীগের।
গতকাল সোমবার দলের তিন সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল ২০১৬ সালের দলীয় আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের জন্য আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যান। দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ছিলেন।
আওয়ামী লীগের জমা দেয়া আয়-ব্যয়ের তথ্যে বলা হয়, ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে চার কোটি ৮৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯৯ টাকা। এই হিসাবে এক বছরে দলের তহবিলে যোগ হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৯ টাকা। আর আগের জমা মিলিয়ে বর্তমানে আওয়ামী লীগের তহবিলে আছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৪৪১ টাকা।
হিসাব জমা দেয়ার পর ড. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তহবিলের বড় একটি অংশ আমরা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা রাখি। বাকি একটি অংশ নিয়মিত ব্যয়ের জন্য রেখে দেই। এ বছর আমরা ব্যাংকে আমানত রেখে সুদ পেয়েছি এক কোটি ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৯৬ টাকা।
ব্যাংক আমানতের সুদ ছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় কমিটি, সহ-সম্পাদক, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি ও প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের ফি এবং সংসদ সদস্য, উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিক্রি, অনুদান এবং ব্যাংক থেকে পাওয়া অর্থকে দলের আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের হিসাব বিবরণীতে।
আর ব্যয়ের খাত হিসেবে কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, আপ্যায়ন ও অন্যান্য খরচ, কেন্দ্রীয়/জনসভা, নির্বাচনী অফিস ব্যয়, পত্রিকা প্রকাশনা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের তথ্য দেয়া হয়েছে।
টানা দুই বছর ঘাটতির পর এবার লাভের মুখ দেখেছে বিএনপি
টানা দুই বছর ঘাটতি পর এবার নির্বাচন কমিশনে দেয়া বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের আর্থিক বিবরণীতে দলের তহবিলে ১৪ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে বিএনপি। গত বছর কাউন্সিলে তোলা চাঁদা থেকে এবার তহবিলে এই অর্থ জমা থাকে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গতকাল সোমবার বিকালে আগারগাঁয়ে নির্বাচন কমিশনে ২০১৬ সালের গত আর্থিক বছরের আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন জমা দেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
গতকাল আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিয়ে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, গত আর্থিক বছরে বিএনপির আয় ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। এর বিপরীতে ব্যয় ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮৫২ টাকা। উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৮৭৮ টাকা। কাউন্সিলে আমরা কিছু ডোনেশন পেয়েছি, তাই এবার উদ্বৃত্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
রিজভী বলেন, দলীয় সদস্যদের চাঁদা, সদস্য ফরম, দলের বিভিন্ন প্রকাশনা বিক্রি ও ডোনেশন থেকে আমাদের আয় হয়। অন্যদিকে দলীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, ইফতার পার্টিসহ সাংগঠনিক কর্মকান্ডে আমাদের অর্থ ব্যয় হয়েছে।
বাংলাদেশ ন্যাপের উদ্বৃত্ত সাড়ে ৮ হাজার টাকা
আগের বছরের চেয়ে ৮হাজার ৫শত ৭৬ টাকার উদ্বৃত্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ)। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে (ইসি) ২০১৬-১৭ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে দলটি। বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়ার নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল এই হিসাব জমা দেন। তার সঙ্গে ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মো. নুরুল আমান চৌধুরী।
গোলাম মোস্তফা ভুইয়া জানান, দলের আয়ের উৎস হচ্ছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, প্রেসিডিয়াম, উপদেষ্টা পরিষদের মাসিক ও বিশেষ অনুদান। এবারে আগের বছরের চেয়ে আমাদের দলে উদ্বৃত্ত আছে মোট সাড়ে ৮ হাজার টাকার চেয়ে কিছু বেশি।
ব্যয়ের প্রধান খাত হিসাবে অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, কেন্দ্রীয় সভা/ আলোচনা সভা/ কর্মী সভা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, সাংগঠনিক খরচ এবং অন্যান্য খরচ উল্লেখ করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন