শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

জলাবদ্ধতায় দিশাহারা মানুষ

| প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সোলায়মান মোহাম্মদ : কর্মজীবীরা কেউ হাঁটু পানি আবার কেউ কোমর পানিতে নেমে ভিজেই অফিসে যাতায়াত করছেন। অফিস থেকে যারা দূরে থাকেন তারা সময় মত পাচ্ছেন না কোনো যানবাহন। আর পেলেও এক ঘণ্টার রাস্তা যেতে সময় লাগছে ৩-৪ ঘণ্টা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত শিক্ষালয়ে যেতে পারছে না। এতে তাদের লেখা পড়ার মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। শহরের নিচু এলাকায় অফিস ও বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকছে। এক কথায় জলাবদ্ধতায় শহরবাসীর জনজীবন থমকে গেছে।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আষাঢ়-শ্রাবণ এই দু’মাস বর্ষকাল। ঋতু অনুযায়ী এই দু’মাস বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। বিগত বছরগুলোতেও বর্ষাকালে একাধারে বৃষ্টি পড়ার কারণে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এবার বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ভঙ্গ করে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
কিন্তু কেন এই জলাবদ্ধতা, কেন শহরবাসীর এই বন্দিজীবন? কেন এই মহাদুর্ভোগের সৃষ্টি? এর কারণ কি শুধুই বৃষ্টি না রয়েছে আরো অনেক কারণ? শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণে এমন ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির প্রশ্নই আসে না। পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হলে নি¤œাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। ঢাকার আশে পাশে এক সময় প্রায় ৬৩টি নদী-নালা, খাল-বিল ছিল। বর্তমানে যার কয়েকটি ছাড়া প্রায় সবই প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টির শিকার হয়ে মরে যেতে বাধ্য হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই সমস্ত খাল ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। ফলে পানি কোথাও সরে যেতে পারছে না। অন্যদিকে পানি নিষ্কাশনের যে মাধ্যম অর্থ্যাৎ ড্রেনেজ ব্যবস্থা সেখানেও রয়েছে বিরাট সমস্যা। নগরবাসী তাদের খেয়াল খুশি মত নিত্য ব্যবহার্য আবর্জনার স্তূপ বিশেষ করে পলিথিন ও প্লাস্টিক যেখানে সেখানে ফেলে রাখছে; যেগুলো পরবর্তীতে সামান্য বাতাস বা বৃষ্টি হলেই পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে এসে জমছে এবং ধীরে ধীরে সেখানে ময়লার স্তূপ হয়ে উঠছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোনো পথ না থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে এই জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা এক দু’দিনেই যেমন সৃষ্টি হয়নি, তেমনি খুব স্বল্প সময়ে এর নিরসন করাও সম্ভব নয়।
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নির্মাণ ও পয়ঃনিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না করলে এই সমস্যা নিরসনের কোনো উপায় নেই বলেই। ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপন, বক্সকালভার্ট নিমার্ণ করতে হবে। সাময়িক পানি নিষ্কাশন ও ড্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন কর্মী থাকতে হবে। তাছাড়া সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি তা হলো, খালবিল নদীনালা ভরাট রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দুই সিটি কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা ও জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসা সম্ভব। অন্যথায় শহরবাসীসহ পর্যায়ক্রমে সারা দেশের মানুষকেই এর চরম মূল দিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন