শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পঁচাত্তরের কাল রাতের প্রথম শহীদ শেখ কামাল

| প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এ দিনের ঘটনায় প্রথম শহীদ হন শেখ কামাল। খুনি বজলুল হুদা তার স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালকে হত্যা করে। আদালতে দেয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, বাড়িতে প্রথম প্রবেশ করে মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরো কয়েকজন। বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাকে গুলি করে। শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবনের আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারী এবং হত্যা মামলার বাদী মুহিতুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মধ্যেও এ বর্ণনার কথা রয়েছে।
তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকে বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে যা বলেছিলেন তাতেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। ১৯৮৭ এবং ১৯৯৩ সালে দুটি সাক্ষাৎকারে সফিউল্লাহ বলেছেন, বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু জলদি ফোর্স পঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধ হয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’
প্রবাসী লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিষদ বিবরণ দিয়েছেন। শেখ কামাল নিহত হওয়ার পর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গীরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে মুজিবকে খুঁজতে থাকে। শেষে তার দেখা পায় সামনের বারান্দায়। সাহসের প্রতিমূর্তি মুজিব দাঁড়িয়ে আছেন প্রশান্তভাবে- হাতে পাইপ। তাকে দেখে খুনি মহিউদ্দিন পর্যন্ত ভড়কে যায়। বঙ্গবন্ধুকে গুলি করতে পারেনি। কেবল বলে- ‘স্যার, আপনে আসেন’। শেষে যখন তাকে ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামাতে আরম্ভ করে তখন বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলেন, ‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?’ এ সময় মহিউদ্দিনকে এক পাশে সরতে বলে হুদা আর নূর স্টেনগান দিয়ে গুলি করে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুর ওপর। ভোর পাঁচটা চলি­শে মুখ থুবড়ে বঙ্গবন্ধু লুটিয়ে পড়েন সিঁড়িতে। তখনো তার ডান হাতে ধরা পাইপ। কয়েকটা গুলি তার বুকের ডান দিকে এবং পেটে লেগেছিল। ফলে যখন সূর্য ওঠার কথা, সেই সূর্য ওঠার সময় বঙ্গের গৌরব-রবি গেলো অস্তাচলে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকদের মিশন তখনো শেষ হয়নি। মহিউদ্দিন, হুদা ও নূর বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার পর ল্যান্সার আর আর্টিলারির সেনাদের নিয়ে আসে আজিজ পাশা আর মুসলেউদ্দীন। পাশা তার সঙ্গীদের নিয়ে দোতলায় যায়। আগে থেকেই সেখানে ছিল সুবেদার ওয়াহাব জোয়ারদার। তারা গিয়ে রাসেল, শেখ নাসের এবং বাড়ির এক ভৃত্যকে নিচে নিয়ে যায়। শোবার ঘরে গিয়ে বেগম মুজিব, শেখ জামাল এবং কামাল ও জামালের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীদের স্টেনগানের গুলি দিয়ে হত্যা করে পাশা আর মুসলেম উদ্দীন।
নিচে গিয়ে ঘাতকরা রাসেলকে প্রথমে বসিয়ে রেখেছিল গেইটের পাশে পাহারাদারের চৌকিতে। রাসেল তখন মায়ের কাছে যাবে বলে কাঁদছিল। পাশা একজন হাবিলদারকে তখন হুকুম দেয় রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। সেই দানব হাবিলদার সত্যি সত্যিই তাকে মায়ের কাছে পাঠিয়েছিল দোতলায় নিয়ে গিয়ে- একেবারে কাছ থেকে গুলি করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন