শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

গৃহশ্রমিকের ওপর জুলুম-নির্যাতন

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ অংকন : বর্তমানে গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকদের উপর শারীরিক নির্যাতন, যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। শুধু শারীরিক নির্যাতনই নয়, থাকা-খাওয়ার বেলায়ও এদের ওপর অমানবিক আচরণ করা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহশ্রমিকদের কারোরই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো চুক্তিপত্র নেই। তাদের গড় মজুরি ৫০৯ দশমিক ৬ টাকা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ নিয়মিত মজুরি পায় এবং বাকী ৪০ শতাংশ অনিয়মিত মজুরি পায়। এত অল্প মজুরিতেও তারা নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বকাঝকার শিকার হয়, ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, ৬৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ সামর্থ্যরে অতিরিক্ত কাজ করে, ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ যৌননিপীড়ন সহ্য করে, ৬৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ মানসিক হতাশায় ভোগে। গৃহশ্রমিকের ঘুমানোর জন্য যথার্থ স্থানও দেওয়া হয় না। ড্রইং রুমে ২০ শতাংশ, রান্নাঘরে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, বারান্দায় ১৬ দশমিক ৬৭, স্টোর রুমে ৩ দশমিক ৩৩, বেড রুমের মেঝেতে ২০ দশমিক ৬৭ এবং আলাদা রুমে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ গৃহকর্মী ঘুমায়। অনেকেই আবার নিকটবর্তী বস্তিতে বসবাস করে।
অপর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাসা-বাড়ির কাজে নিযুক্ত ৯৫ শতাংশ শিশু গৃহকর্তা বা গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক পরিবারের প্রধান কর্তা ছাড়া নির্যাতনকারীদের ৩০ শতাংশ পরিবারের অন্যান্য সদস্য রয়েছে। এসব শিশুর মধ্যে ৫২ শতাংশ নিয়মিত নির্যাতিত হয়। ৯৫ শতাংশ মৌখিক (গালি) নির্যাতনের শিকার হয়। আর ৮৬ শতাংশ শিশু শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়। বেশির ভাগ এসব নির্যাতন করে গৃহের মহিলাগণ। ৯৩ শতাংশ নিয়মিত খাবার পায়, আর ৮২ শতাংশ পরিবার সময়মতো খাবার দেয়, ৫০ শতাংশ শিশু সময়মতো জামা-কাপড় পায়। বাকীরা পায় না।
বাংলাদেশে বর্তমানে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি ও এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী ও শিশুশ্রমিক রয়েছে। এই নারী ও শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ও তাদের নিরাপত্তা ও আইনী অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি উচ্চ আদালতে ২০১০ সালে একটি জনস্বার্থ মামলা করে। পরবর্তীতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সরকারের প্রতি ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি রায় প্রদান করেন। কিন্তু আজও সেই রায়ের কোনো প্রতিফলন আমরা দেখিনি। গৃহশ্রমিক নির্যাতন বন্ধে সরকারের কোনো দৃশ্যমান ও কার্যকর উদ্যোগ রায় প্রদানের পরও নেওয়া হয়নি। গৃহশ্রমিক নির্যাতন প্রতিহত করতে আইনের ধারা পাল্টিয়ে নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন