শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ অংকন : এ দেশে বন্যা, খরা, পাহাড়ধস ও ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই আঘাত হানে। ভূমিকম্প নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি বিচলিত। ভূমিকম্প নিয়ে একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের আট কোটি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই ভূমিকম্পের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে বিপুল প্রাণহানি হতে পারে। ভূমিকম্প নিয়ে এমন আশঙ্কা মোটেও অমূলক নয়। বোঝা যাচ্ছে, এ দেশে ভূমিকম্প মহাআতঙ্কের নামে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না।
বাংলাদেশের প্রধান দুটি শহর হল ঢাকা ও চট্টগ্রাম। শহর দুটি অতি ঘনবসতিপূর্ণ। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এ দুটি শহরে ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর অঞ্চলেও প্রায় তিন কোটি মানুষ ভূমিকম্পের প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে।
শহরগুলোতে অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এসব বহুতল ভবনের বেশির ভাগই বিল্ডিং কোড বা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী করা হয়নি। ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তাও যাচাই করা হয়নি। বহুতল ভবন যাতে বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে সঠিকভাবে নিতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি এ দায়িত্বে অবহেলা করে বা সঠিকভাবে পালন না করে, তাহলে ভূমিকম্পঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যাবে। যারা ভবন নির্মাণ করবে, তাদের লক্ষ রাখতে হবে, যে মাটির ওপর ভবনটি তৈরি হবে, তা ভবনটিকে বহন করার ক্ষমতা রাখে কি না। দক্ষ প্রকৌশলী কর্তৃক এদিকটা যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশে সরকারি বহুতল ভবন নির্মাণে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করা হয়। প্রায়ই খবরের পাতায় ভেসে উঠে, যাচ্ছেতাই উপকরণ দিয়ে সরকারি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সা¤প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর খবর, রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণ করা। এরকম ঘটনা কলঙ্কের নতুন রেকর্ডও বটে। বহুতল ভবন নির্মাণে যদি এ ধরনের অবস্থা হয়, তাহলে তো ভূমিকম্পে অপরিমেয় ক্ষয়ক্ষতি হবেই। সা¤প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প নিয়ে বিজ্ঞানীদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাজনিত জরিপকে অবিশ্বাস করার সুযোগ আছে কি?
এখন কথা হল, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি শুধু ভবনধসের ওপরই নির্ভর করে কি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, বড় শহরগুলোতে যেভাবে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, এতে বড়মাত্রার ভূমিকম্প হলে শহরজুড়ে এক মহা অগ্নিকাÐের সূচনা হতে পারে। ভূমিকম্পজনিত ভবনধসে কেউ বেঁচে গেলেও আগুন থেকে বাঁচা সম্ভব নাও হতে পারে। দ্রæত প্রয়োজনীয় উদ্ধার কাজ চালাতে না পারলে বহু মানুষ মারা যেতে পারে। পৃথিবীজুড়ে এমন অভিজ্ঞতার কোনো অভাব নেই। ২০১০ সালে হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। ঐ বছর চিলিতে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৫৬২ জন মারা গিয়েছিল। তবে চিলিতে একটু কম মৃত্যুর কারণ সেখানে ভবনগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্মিত ছিল। পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মিত হলে ভূমিকম্পে প্রাণহানী ঘটে। অথচ বাংলাদেশে এমন হলে আর কারও রক্ষা মিলবে না। এছাড়া এদেশে বড় বড় উদ্ধার কাজ চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল নেই বললে বোধহয় ভুল হবে না। রাস্তাঘাটের যে বেহাল দশা, তাতে উদ্ধার করতে যেতে যেতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। যারা উদ্ধার করবে, তারাও যে বিপদে পড়বে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা আছে কি? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ঢাকায় ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে ৭০ হাজার দালান ধসে পড়তে পারে। অতএব, সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন