শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

রাজধানীর যানজট নিরসনের উপায়

মীর আব্দুল আলীম | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহন প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা আয় নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের নতুন পরিবহন। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেয়ার সময় এখনই। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে যথাযথ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। যানবাহন এবং যানজট যে শহরের সচলতা শুধু কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও আঘাত হানছে। এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহর সে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এ শহর অচল হয়ে পড়বে।
আমাদের যতটুকু সড়কপথ আছে তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানাবিধ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশ্বের বড় বড় শহর এমনকি হজের সময় মক্কা, মদিনা; অলিম্পিক গেমসহ নানা বড় আসরের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে, সে সময় কত সহজেই না যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। চীনে যখন অলিম্পিকের মতো বড় আসর হলো তখন তারা একদিন পর পর জোড়-বেজোড় নাম্বারের প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করার অনুমতি দিয়ে নতুন কৌশল বের করেছিল। এক দিন জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় চলার অনুমতি দিয়েছে তো পরদিন দিয়েছে বেজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো। বিশেষ মুহূর্তগুলোতে বাইরের শহরের গাড়িগুলো শহরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে পত্রিকায় ঘোষণা দেয়া হয়, ফলে দুর্ভোগ হয় না, হয় না যানজটও। জোড়-বেজোড় নাম্বারের গাড়িগুলো আমাদের রাজধানীতেও একদিন পরপর চলাচল করতে দেয়া যেতে পারে। ঢাকা মহানগীরর যানজট, পার্কিং সমস্যা, পরিবেশদূষণ ও জনদুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় হলো পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিনামূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা, সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেয়া, পার্কিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহনের মানোন্নয়নে ব্যয় করা। নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট কার চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা, প্রাইভেট কারের লাইসেন্স সীমিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহনের ব্যবস্থা করা, প্রাইভেট গাড়িনির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিংয়ের স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা। পাবলিক পরিবহন, জ্বালানিমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করা। জায়গা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ও প্রাইভেট কারের পার্কিং সমস্যা সমাধানে পার্কিংয়ের জন্য সময় ও স্থান অনুসারে অর্থ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত।
যানজট রাজধানীর নগর জীবনকেই শুধু বিপর্যস্ত করে তুলছে তা নয়, ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবেও পরিচিতি এনে দিয়েছে। যানজট সমস্যার সমাধানে আরো বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। এ নির্মাণ কাজের জন্য ব্যস্ত সড়কের একাংশ ব্যবহৃত হওয়ায় ধারে কাছের সব সড়কে যানজট অনিবার্য হয়ে উঠছে। নির্মাণ কাজের শম্বুকগতি মানুষের ভোগান্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করছে।
যানজটে এমনই অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে যে, আধাঘণ্টা দূরত্বের সড়ক অতিক্রম করতে গড়ে ৭-৮ গুণ পর্যন্ত সময় লাগছে। রাজধানীর যানজটের জন্য প্রাইভেট কারের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যা বৃদ্ধিকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, রিকশার পাশাপাশি প্রাইভেট কারের আধিক্য অচলাবস্থার সৃষ্টি করছে। তবে অভিজ্ঞজনদের মন্তব্য, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা যানজটের জন্য প্রধানত দায়ী। ঢাকার রাজপথের এক বড় অংশ অবৈধ দখলদারদের দখলে চলে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবৈধ দখলদারিত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক টাউট, পাড়া-মহল্লার মস্তান এবং পুলিশের সম্পর্ক থাকায় রাজধানীর সড়কগুলো দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকানপাট উঠিয়ে দেয়া সম্ভব হলে যানজট এমনিতেই সহনীয় হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি কঠোরভাবে ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হলে যানজটের রাশ টেনে ধরা সম্ভব হবে।
লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন