বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত একমাত্র ইসলামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ৩ যুগ পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল ছাত্র সমাবেশ ও লাখো কণ্ঠে ইয়া নবী সালাম আলাইকা পাঠ করা হয়। গত ২৩ জানুয়ারি শনিবার সকাল ১০ টায় ছাত্রসেনার ৩৬ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সমাবেশ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতি সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চেয়ারম্যান আল্লামা এম এ মান্নান। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মহাসচিব আল্লামা এম এ মতিন। ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথি আল্লামা এম এ মান্নান শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের অমর্যাদা করে মর্যাদাশীল জাতি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। দেশে আজ গণতন্ত্র, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই। রাজনৈতিক দলগুলো ও শাসকগোষ্ঠী নিজেদের দলীয় ও গোষ্ঠী স্বার্থে রাজনীতি করায় দেশবাসীর স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ এই গরিব দেশে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গণকল্যাণমুখী সমন্বয়ের রাজনীতি বড় প্রয়োজন। তিনি সরকারি দল ও বিরোধী দলকে দল ও গোষ্ঠী স্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে সমঝোতার ভিত্তিতে গণকল্যাণমুখী রাজনীতি করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি সুফিবাদী মানবতাবাদী চেতনার ধারক ও বাহকরাই ইসলামের প্রতীক বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান বক্তা মাওলানা এম এ মতিন পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পদক্ষেপ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ প্রদান এবং কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যার অপরাধে মওদুদীবাদী ও হেফাজতদের বিচারের জন্য শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠনের দাবি জানান। আইএস, আল-কায়েদার মানসপূত্র জামাত-হেফাজতদের সাথে সরকারের গোপন আঁতাতের অভিযোগ তুলে ইসলামী ফ্রন্ট নেতা বলেন, সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়ীয়া হেফাজতের কাছে সরকারের অসহায় আত্মসমর্পণ জাতিকে হতবাক করেছে। যারা ইসলামের কথা বলে বোমাবাজি ও কথিত জিহাদের ধোঁয়া তুলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদি তৎপরতায় লিপ্ত তাদের অপকর্মের যথার্থ বিচার দাবি করেন।
বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের যুগ্ম মহাসচিব স. উ. ম আবদুস সামাদ সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তারকৃত কথিত জঙ্গিদের ব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করে বলেন, কওমী-হেফাজতরা বিদেশের মাটিতে বসে আজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। কওমী মাদ্রাসা পরিচালনায় সরকারকে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
সম্মেলনে বক্তারা ছাত্র ভর্তির কোনো নিয়ম-নীতি না করার সুযোগে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগামহীন বেতন ও ভর্তি ফি বাড়ানোর তীব্র নিন্দা এবং ইতোমধ্যে অতিরিক্ত আদায়কৃত অর্থ ছাত্র বেতনের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
ছাত্রনেতা মুহাম্মদ নুরুল হক চিশতি বলেন, ছাত্র রাজনীতি পেশিশক্তি নির্ভর হওয়ায় চলমান ঘুণেধরা ছাত্র সংগঠনগুলো থেকে ছাত্র সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছাত্র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় ছাত্রসেনা। সুন্নিয়ত প্রচারে ও জ্ঞানবান্ধব ছাত্র রাজনীতির পুরোধা ছাত্রসেনার আদর্শিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে তিনি ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান। ছাত্র সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন রব্বানির স্বাগত বক্তব্য ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, যুবসেনা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পীরে তরিক্বত আল্লামা আবদুল করিম সিরাজনগরী, আলহাজ শাহ্ আহসানুজ্জামান, আল্লামা সৈয়দ মসিহুদ্দৌলা, আল্লামা আবুল কাশেম নূরী, আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, আলহাজ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন, আবু জাফর মুঈনুদ্দীন, সৈয়দ মোজাফ্ফর আহমাদ, অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, অধ্যাপক এম এ মোমেন, আল্লামা মাসউদ হোসাইন আলকাদেরী, কাজী মুহাম্মদ সোলায়মান চৌধুরী, অধ্যক্ষ আলী মুহাম্মদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট কাজী ইসলাম উদ্দীন দুলাল প্রমুখ। প্রবাসী সুন্নি সমিতির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সংগঠক গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির। ছাত্র সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মো. জামাল উদ্দিন রব্বানী ছাত্র সমাবেশ ও লাখো কণ্ঠে ইয়া নবী সালাম আলাইকা সফল করায় সমবেত সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন