মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার তার আফগান কৌশল ঘোষণা করেছেন। তবে নতুন মার্কিন নীতির ফলে কেউ যদি স্পষ্ট বিজয়ী হয়ে থাকে সে হচ্ছে চীন। এটি আসলে চীনের জন্য একটি উপহার।
ট্রাম্পের বক্তৃতায় পাকিস্তানের প্রতি কঠোর তিরস্কার রয়েছে। তিনি পাকিস্তানকে সভ্যতা, শৃঙ্খলা ও শান্তির প্রতি তার অঙ্গীকার প্রদর্শনের আহবান জানান। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আর চুপ করে থাকতে পারে না। ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলোও এ ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছিল, কিন্তু ট্রাম্প এ ব্যাপারে নমনীয়তা পরিহার এবং অ-ন্যাটো মিত্রের প্রতি কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এ এক মারাত্মক ভুল। পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের জায়গা দিলেও তার ভূমিকার পরিবর্তন ঘটেছে। দেশটি আল কায়েদা ও তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সাহায্য করেছে। পাকিস্তান আফগানিস্তানে ন্যাটো সৈন্যদের রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ পথ। ট্রাম্পের বক্তৃতা পাকিস্তানকে চীনের কাছে ঠেলে দেয়ার এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে দুর্বল বেসামরিক-সামরিক ভারসাম্য ব্যাহত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এক বক্তৃতায়ই তিনি এ অঞ্চলে বহু বছরের সতর্ক কূটনীতির বারোটা বাজিয়েছেন। পাকিস্তানের প্রতি ট্রাম্পের আক্রমণ একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে চীনের বৃহত্তর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে। চীনের সাথে পাকিন্তানের ঘনিষ্ঠতার শুরু ১৯৫০ সালে। পাকিস্তান হয় নতুন কম্যুনিস্ট শাসনকে স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর অন্যতম। তাদের সম্পর্ক এখন এত ঘনিষ্ঠ যে তা ভারত ও মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে বেইজিং ৫৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে এবং মার্চে পাকিস্তানের জাতীয় দিবস উদযাপনে বিদেশী কুচকাওয়াজে চীনা সৈন্যরা অংশ নেয়।
ট্রাম্পের বক্তৃতা যে দু’দেশকে আরো কাছাকাছি করবে তার সুস্পষ্ট লক্ষণ হিসেবে চীন তার মিত্রের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে। চীন বলেছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে রয়েছে।
চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সমস্যা, কারণ সে এ অঞ্চলে চীনের উত্থানে ভারসাম্য রক্ষা করতে ভারতকে ব্যবহার করতে চায়। চীন পাকিস্তানকে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা দেয়, তার আংশিক কারণ হচ্ছে সীমান্তে ভারতের সাথে উত্তেজনা তুঙ্গে রাখা। যুক্তরাষ্ট্রে এক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বিষয়টি স্বীকার করে তার দেশকে ভারতের বিরুদ্ধে স্বল্পব্যয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রতিবন্ধক বলে আখ্যায়িত করেন। ভারত যদি সমস্যার মধ্যে থাকে তাহলে চীন এ অঞ্চলে চ্যালেঞ্জহীনভাবে বেড়ে উঠবে । পাকিস্তানকে একপাশে সরিয়ে রাখতে এবং চীনকে তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হতে বাধা দেয়া তাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্পের বক্তৃতার কারণে পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার বিপাকে পড়বে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ভারতের হুমকিকে ব্যবহার করে বাজেটের বড় টুকরোটি হাতিয়ে নেয় এবং বেসামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করে। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রভাব এত বিরাট যে কিছু স্থানীয় টেলিভিশন সেনাবাহিনীর যে কোনো সমালোচনা বন্ধের জন্য সরাসরি সম্প্রচারে একটি ৩০ সেকেন্ড বাফার চালু করেছে।
সাম্প্রতিক কালে সেনাবাহিনীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইরত পাকিস্তানের বেসামরিক সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। ২০১১-র এক কূটনৈতিক সংকটে এটা প্রকাশ পায়। যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি একটি মেমোর জন্য পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ঐ মেমোতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার নিজেদের সৈন্য দিয়ে একটি অভ্যুত্থান প্রতিহত করতে তিনি সাহায্য চেয়েছিলেন। বেইজিংয়ের কাছে এ ধরনের কোনো সাহায্যের আবেদন যায়নি, কারণ গণতন্ত্রের প্রতি তাদের কোনো নমনীয় অনভূূতি নেই। পাকিস্তানে গণতন্ত্রের শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকের অনুপস্থিতিতে সামরিক অভ্যুত্থানের আশংকা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়বে।
সর্বশেষ, ট্রাম্পের বক্তৃতায় আফগানিস্তানে আরো সাহায্যের জন্য ভারতের প্রতি আহবান বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকর। যদি এর লক্ষ্য হয় ইসলামাবাদকে দূরে ঠেলে দেয়া তাহলে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রতিদ্ব›দ্বী ভারতকে আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে সম্পূর্ণ বিপরীত ফলদায়ক। আরো কথা, ভারত সামরিক বা অন্যভাবে আফগানিস্তানে তার কর্মকান্ড বিস্তার করছে বলে যদি ইঙ্গিত মেলে তা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পুনরায় ভারত দ্বারা বেষ্টিত হওয়ার ধুয়া তোলার এবং বেসামরিক-সামরিক ভারসাম্যকে তাদের অনুকূলে নেয়ার সুযোগ দেবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন