মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলি, গণধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হাজার হাজার অসহায় রোহিঙ্গারা প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না। ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, খাবারের পানি নেই, গোসলের পানি নেই, কোন টয়লেট নেই, তেমন কোন চিকিৎসা ক্যাম্প নেই। মানবেতর জীবন নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া, লেদা, হোয়াইক্যং পুটিবিলা, উখিয়ার থাইংখালী ও বালুখালী, কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে।
পাহাড়ের ঢালুতে ছোট ছোট পলিথিন মোড়ানো ঘরের সামনে এলেই রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, কেউ ত্রাণ নিয়ে এসেছেন। হুমড়ি খেয়ে পড়েন আবাল বৃদ্ধ বনিতা। পাহাড়ের পাদদেশে ছোটকূপ তৈরি করে সেখানকার ঘোলা পানি বালতি, কলসি ও মগে করে ব্যবহারের জন্য শিশুরা বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত রোহিঙ্গা রোগীরা চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছেন আশ্রয় শিবিরে। রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় আশ্রয় এবং খাবার পাচ্ছে না তারা।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় তৈরি করা অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের আর স্থান সংকুলান হচ্ছে না। কোথাও জায়গা না পেয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে মানবেতর অবস্থায় দিনযাপন করছে। এদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
৭০ বছরের বৃদ্ধ নজির আহমদ বলেন, পানির অভাবে ঠিকমতো নামাজের অজু করতে পারি না। পানির অনেক অভাব এখানে।
মিয়ানমারের মংডু হাসসুরাতার বাসিন্দা সেতারা বেগম বলেন, এখানে পানির অভাবে কষ্টে আছি। গোসল করতে পারছি না। খাবার পানির তীব্র অভাব। পানি খেতে মন চাইলে পারা যাচ্ছে না। এভাবে থাকতে থাকতে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘুরে গতকাল দেখা গেছে, এখনো ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রশাসন কোনো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। যে যার ইচ্ছেমতো ত্রাণ দিচ্ছে। খাবার ও নগদ অর্থের জন্য হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রাত-দিন কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে অবস্থান করছেন। গাড়ি দেখলেই তারা দৌড়ে আসছেন ত্রাণের আশায়। রোদ-বৃষ্টি, কাদা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একমাত্র কাজ হচ্ছে ত্রাণ সংগ্রহ করা।
টেকনাফে রোহিঙ্গা মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার : লাশের সংখ্যা দাঁড়াল-১১২
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নির্যাতনে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। তবে আসার পথে নৌকা ডুবে চলতি মাসে ১১২ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর মাযেরপাড়া সাগরসৈকতে ভেসে এসেছে আরও এক রোহিঙ্গা মহিলার লাশ। ওই নারীর নাম জানা যায়নি। তাঁর আনুমানিক বয়স ২২ বছর।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মাইন উদ্দিন খান বলেন, গত ২৯ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে ২৩টি নৌকাডুবির ঘটনায় শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৫৭টি, নারী ৩২ জন, পুরুষ ২৩ জন রয়েছে।
টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকজন অসাধু মাঝি টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। এ যাবত শতাধিক দালালকে আটক করে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে এবং তাদেরকে সাজা প্রদান করেছে।
অন্যদিকে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মালামাল লুটপাটের অভিযোগে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাবেক মেম্বার ইসমাইলকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল শনিবার সকালে শাহপরীরদ্বীপ থেকে তাকে আটক করে কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ড শাহপরীর দ্বীপ স্টেশনের পেটি অফিসার মোস্তফা কামাল জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ইসমাইল মেম্বারকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন জানান, আটক ইসমাইলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ইসমাইল একদিকে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে এদেশে ঢুকিয়ে দেয়। প্রত্যেক রোহিঙ্গার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করে। আর যারা দেয় না তাদেরকে নৌকায় ধস্তধস্তি করে নৌকা ডুবে দেয় এবং নির্যাতন করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের টাকা-মালামাল। নৌকায় রোহিঙ্গাকরার কারণে নৌকাডুবিতে অনেকে রোহিঙ্গার মৃত্যু হয় বলেও তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন