শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমার : কি করা উচিৎ বাংলাদেশের

মীর আব্দুল আলীম | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমার। দেশটি সীমালঙ্ঘন করছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি মানছে না। রোহিঙ্গাদের এদেশে ঠেলে দিয়ে উল্টো গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাইছে। এর অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বিশ্ব মোড়লদের ইশারা থাকতে পারে। তা না হলে কোন শক্তিতে মিয়ানমারের মতো দেশ বার বার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে? এ অবস্থায় উসকানিমূলক এ ধরনের কাজের জন্য ‘অনাকাক্সিক্ষত পরিণতি’ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এতটুকু প্রতিবাদ জরুরি ছিলো। দু’দেশের সম্পর্কের অবনতির ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে রোহিঙ্গা সঙ্কটের জেরে যা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার কর্তৃক বারবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘনের জের ধরে দুই দেশ যুদ্ধে জড়াতে পারে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউজ উইক। এতে মিয়ানমার কর্তৃক কয়েক দফায় বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন ও তার প্রতিবাদের বিষয় উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মিয়ানমার বনাম বাংলাদেশ যুদ্ধ কি তবে আসন্ন? বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত?
বাংলাদেশ কি কেবল প্রতিবাদ করবে, যুদ্ধ করবে, নাকি কৌশলী হবে? কী করবে বাংলাদেশ? সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মিয়ানমারকে চাপ প্রদানকারী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে সরকারকে দোষারোপ করলে হবে না। বিরোধী দল এ নিয়ে রাজনীতি করছে। দেশের স্বার্থেই সরকার যুদ্ধ করবে না এই ইস্যুতে।’ আমরা লক্ষ করছি, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব মোড়লরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সারা বিশ্বে আজ নানা কারণে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। এমন সময় কে কাকে সমর্থন করে এনিয়ে সংশয় রয়েছে। কঠিন কোন সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে আরও ভানবা-চিন্তা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ করেছি- চীন, রাশিয়া ও ভারত মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য বড় শক্তি অনেকটাই নিরব। এটা একটা ঝটিল অবস্থা।
কথিত আছে, রোহিঙ্গা বসবাসকারী এলাকায় গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ রয়েছে। ওই এলাকায় যদি মূল্যবান খনিজ সম্পদ থাকে তবে, নিকটবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশের সীমায়ও এমন সম্পদের সম্ভবনা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই অজানা মূল্যবান খনিজ সম্পদ কাল হচ্ছে নাতো? বিষযটি ভেবে দেখতে হবে। তা না হলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব মোড়লদের এত সমর্থন অথবা নিরবতা কেন?
মিয়ানমারের জাতি নির্মূল অভিযান এবং সহিংসতা থেকে রক্ষা পেতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা পালাতে বাধ্য হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এর তীব্র নিন্দা করলেও চীন মিয়ানমারের সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছে। রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমারের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ দাবি করে দেশটিতে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। ভারতের অবস্থানও মিয়ানমারের পক্ষে। রোহিঙ্গা সংকটকে ‘আন্তঃধর্মীয় বিরোধ’ আখ্যা দিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এটি মনে রাখা দরকার যে, একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছা আন্তঃধর্মীয় বিরোধই কেবল বাড়িয়ে দিতে পারে।
অন্যদিকে আমরা কী দেখছি? চীন এবং পাকিস্তান মিলে স¤প্রতি মিয়ানমারকে সামরিক সহায়তা করেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। দুই দেশেই অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। তাই চীন মিয়ানমারের সাথেই থাকছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী ডন পত্রিকার সূত্রে জানা যায়, এ বছর ডিসেম্বর মাস নাগাদ পাকিস্তানে তৈরি ১৬টি জেএফ-১৭ যুদ্ধ বিমানের একটি চালান যাবে মিয়ানমারে। জেএফ-১৭ বিমানটি পাকিস্তান অ্যারোনোটিক্যাল কমপ্লেক্স ও চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশনের যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। এই যুদ্ধবিমান ক্রয়কারী প্রথম দেশ হতে যাচ্ছে মিয়ানমার। বিশেষ করে নিজেদের সামরিক সরঞ্জাম রফতানির প্রয়োজনে মিয়নামারকে বেছে নিয়েছে পাকিস্তান। কৌশলগত অবস্থানের জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে চীনেরও সমঝোতা ভালো। চীন প্রতিবেশী পাকিস্তানকে নিজের করে রেখেছে ভারতকে চাপে রাখার জন্য।
রোহিঙ্গা ইস্যুটি কীভাবে সমাধান হবে? আসলে এ সংকট সহজে সমাধান হওয়ার নয়। এর পেছনে শুধু ধর্মই কারণ নয়, অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের সামনে এটা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এ কাজ শুধু সরকার বা প্রধানমন্ত্রীরই নয়, সারা জাতির এবং দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলের। এই জাতীয় সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের ডাকের পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। আমরা যে সংকটে রয়েছি, তার আশু নিষ্পত্তি হবে এমনটা মনে হয় না।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সরকার ও সেনাবাহিনীর অব্যাহত গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববাসী সোচ্চার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হচ্ছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ীরা। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে বার বার আহ্বান জানাচ্ছেন। এ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও সোচ্চার। কিন্তু কারো কথা শুনছে না মিয়ানমার। মানছে না কোনো কিছু। বিশ্ব স¤প্রদায়কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ¦ালিয়ে ছারখার করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের আরাকান ৬ লক্ষ ৭৬ হাজার বর্গমাইল ও লোকসংখ্যা ৭ কোটি আর বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গমাইল ও লোকসংখ্যা ১৬ কোটি। মিয়ানমার গোপনে গোপনে তার সামরিক শক্তিও বাড়াচ্ছে। মিয়ানমারের একটিভ সেনা সদস্য ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ও বাংলাদেশের ৪ লক্ষ ১০ হাজার। মিয়ানমারের ব্যাটল ট্যাংক ৮০০টি বাংলাদেশের ৬০০টি। মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান ১২৮টি, বাংলাদেশের ৮০টি। মিয়ানমারের এটাক হেলিকপ্টার ১০০ টি ও বাংলাদেশের মাত্র ২৯টি। মিয়ানমারের যুদ্ধাস্ত্রের সংখ্যা ৭,৪৬,০০০ আর বাংলাদেশের ৫,৪৭,০০০।
আসলে যে যাই বলি, যেভাবেই বলি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। এ জন্য আন্তর্জাতিক সহয়তা জরুরি। নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, শুধু তাদের নিয়ে ভাবলেই চলবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, বহু বছর ধরে রোহিঙ্গা নাগরিকরা এখানে এসেছেন। তাদেরও এদেশ থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে। এ কাজটি অনেক কঠিন। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বিবৃতি দিয়েছেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা হয়েছে। এমন আলোচনা বহু বছর ধরেই হচ্ছে কিন্তু রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ পথে এ সংকটের সমাধানই কাম্য।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
SHAUKAUT ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:৫৫ এএম says : 0
juddho noy amaderke vhalo diplomay jante jobe tobei amra jati jishabe ogroshor jote parbo thanks from venezuela.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন