শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোহিঙ্গা সঙ্কটে আলেম সমাজের সর্বপ্লাবী সেবা

জাতীয় ঐক্য নির্মাণে ইনকিলাবের অবিস্মরণীয় ভূমিকা

উবায়দুর রহমান খান নদভী : | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সীমান্তে শরণার্থী সঙ্কট এখন জাতীয় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণকার্যে আর্মি যুক্ত হওয়ায় মানুষ খুশি। শুরু থেকে কাজ করে আসা আলেম সমাজও স্বস্তি পেয়েছেন। জাতির আস্থাভাজন ও প্রিয় সংস্থা সেনাবাহিনী নামায় সারা দেশের ইমাম ও আলেমগণ শুকরিয়া আদায় করছেন। কারণ, তারা ময়দানে কাজ করতে গিয়ে বহু সমস্যা আঁচ করছিলেন। রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, কিছু খারাপ লোক মজলুম রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগে নানা দুষ্কর্ম শুরু করে দিয়েছিল। কেউ সামান্য টাকা, খাবার ও ওষুধ ইত্যাদির বিনিময়ে নারীদের নাক-কান-গলার অলঙ্কার নিয়ে যাচ্ছিল। লাখ টাকার সোনার বালা পাঁচ হাজারে, ২০ হাজারের কানের দুল এক হাজারে কেনার ধুম পড়ে গিয়েছিল। আতঙ্ক বিরাজ করছিল শিশু ও নারী পাচারকারীদের হামলার। বেশি সময় পেলে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় হতো। কিছু ত্রাণ বিতরণকারী পর্দাশীলা নারীদের ছাউনির বাইরে এসে ত্রাণ নিতে বাধ্য করছিল। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের অনেক সামানপত্র কোনো কোনো নেতার বাড়ি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। দালাল ও প্রতারক গ্রেফতার করা হয়েছে শ’ দুয়েক। ত্রাণের টাকা ও দ্রব্য লুটপাট হওয়ার আশঙ্কা করছিল মানুষ। আর্মি ত্রাণ তৎপরতার দায়িত্ব নেয়ায় স্বস্তি নেমে এসেছে। তারা প্রথম দিন পরিস্থিতি রেকি করার সাথে সাথে ৬০ ভাগ বিশৃঙ্খলা কমে যায়। কাজে নামার পর তা ৭০ ভাগে এসেছে। আলেম, ইমাম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রকৃত ও বহু পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক সৎ নিষ্ঠাবান শক্তির এই মানবিকতার সংগ্রাম সফল হবেই। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা এ দেশকে সকল শত্রæর শ্যেনদৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। মজলুমদের সেবার শক্তিই আলাদা।
আর্মি যাওয়ার আগে-পরের অবস্থা আর পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন মোবাইলে জানাতে থাকেন উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত আলেম দল। ইনকিলাবের কক্সবাজার ব্যুরো ও টেকনাফ প্রতিনিধির ত্যাগ ও পরিশ্রমের কথাও তারা বলেন। ইনকিলাবের প্রধান কার্যালয় থেকে একজন বিশেষ প্রতিনিধি বেশ কয়েকদিনের জন্য শরণার্থী আশ্রয় এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিবেদন সরেজমিন দেখে তৈরির জন্য এখন কক্সবাজারে, এ কথা উলামাদের জানালাম। তারা আরো আনন্দ প্রকাশ করলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বিশিষ্ট উলামা-মাশায়েখের একটি আধ্যাত্মিক মাহফিল বসে। দীন, দেশ ও মানবতার সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়। জিকির, মোরাকাবা ও আমল হয়।
মোবাইল ফোনে কথা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাথে। সেখানে কর্মরত দীনি কাজের কন্ট্রাক্ট গ্রুপের লোকেরা জানান, কক্সবাজারে এখন শুধু আলেম আর আলেম। উখিয়া-টেকনাফ এলাকাজুড়ে সাদা পোশাক, নূরানী চেহারা দরদী দৃষ্টি উলামা-মাশায়েখ, পীর-বুযুর্গ, মাদরাসার শিক্ষার্থী, ধার্মিক তরুণ ও দীনদার নাগরিকদের প্রাচুর্য। মহিলা মাদরাসার তরফ থেকে আমাদের নারীরা মজলুম রোহিঙ্গা মা-বোনদের সহমর্মিতার জন্য সেখানে আছেন। সেবার ৯০ ভাগ দেশের আলেম সমাজের হাতেই সম্পাদিত হচ্ছে গত প্রায় এক মাস ধরে। আর্মি যুক্ত হওয়ায় আজ সবার মনেই আনন্দ। মোবাইলে কথা বলিয়ে দেন একজন মুহাজিরের সাথে। রোহিঙ্গা ভাষায় তিনি যা বলেন তার অর্থ হলো- ‘আমরা মগ আর্মিদের চেহারা ও আচরণ দেখে এসেছি, এখানে এসে দেখলাম বাংলাদেশি আর্মি। পিশাচ শয়তানের কবল থেকে আমরা যেন এসে পৌঁছেছি ফেরেশতাদের মাঝে। এরাও আর্মি, তারাও আর্মি। ভাবলাম, এ ইসলামেরই দান।’ স্বাধীন বাংলাদেশ যে মহান আল্লাহর কত বড় নেয়ামত তা আজ পাঁচ লাখ (নতুন-পুরনো সব মিলিয়ে ১০-১২ লাখ) মজলুম রোহিঙ্গা বুঝতে পারছে। আমরা ১৬ কোটি মানুষও সেটি অন্তর দিয়ে বুঝি। ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা নেজামী ত্রাণ ও সংহতি শেষে তার দলসহ ঢাকার পথে রওয়ানা হচ্ছিলেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমীর আল্লামা মাহমুদুল হাসান তার কাফেলাসহ দুর্গত এলাকায় গেছেন। আর্মির সহায়তায় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই কাফেলা কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী বিলি করবে। হাজার হাজার তাঁবু, পোশাক, বোরকা, শুকনো খাবারের প্যাকেট, ওষুধ, স্যালাইন, তৈজসপত্র ছাড়াও তাদের ইচ্ছা আছে শতাধিক মসজিদ, মক্তব ও মাদরাসার কাজ শুরু করার। কিছু ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি যাচ্ছেন আর্মি নামার পর। আগে যারা আলেমগণের মাধ্যমে সহায়তা করেছিলেন, তারা এখন একই আস্থায় আরো বেশি সহায়তা করছেন। আল্লাহর শুকরিয়া, বাংলাদেশ তার সচেতন নাগরিকদের সেবা পাচ্ছে তার সঙ্কট দিনে। চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী, প্রগতিশীল লোকজনের নাম-নিশানাও দেখা যাচ্ছে না। নেই নারীবাদী ও গলাবাজ নেত্রীরাও। যারা উদ্দেশ্যমূলক ইস্যুতে আসমান-জমিন একাকার করে ফেলেন, তাদের কাছে হাজার হাজার ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারী কোনো ইস্যু নয়। কেউ সেখানে যাননি। বড় বড় এনজিও, সাহায্য সংস্থা, মানবাধিকার সংগঠন কোথায় যেন ঘাপটি মেরে আছে। খুব কমই তাদের নড়াচড়া দেখা যায়। আর যারা নিজেরাই সমাজে নিগৃহীত, মিডিয়ায় উপেক্ষিত শুধু নয়, বরং নেতিবাচক প্রচারণার শিকার। সেই জনপ্রিয়তম আলেম সমাজ এবার যে ভ‚মিকা রেখেছে দীন ও ধর্মের, দেশ ও জাতির ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সঙ্কট শুরুর পর দেশের শীর্ষ ইসলামী নেতৃত্ব, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের প্রধানগণ, দেশের শীর্ষ উলামা-মাশায়েখ ও তরুণ ইসলামী নেতৃবৃন্দ বলতে গেলে প্রায় সবাই সাক্ষাত ও ফোনে যত যোগাযোগ করেছেন, সবগুলোতেই নাম এসেছে দৈনিক ইনকিলাবের। এর প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান রহ.-এর ব্যক্তিত্ব ও উদার সমন্বয়বাদী চেতনার কথা সবার মুখেই উচ্চারিত হয়েছে। চলমান রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিশেষ করে যা দেশ ও জাতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দুর্যোগ বটে। তিনি কিভাবে সকল চিন্তা ও মতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতেন অতীত বাস্তবতার আলোকে অনেকেই এসব কথা বলেন। তারা ইনকিলাবের সম্পাদক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের ব্যক্তিত্ব চিন্তা ও কর্মধারায়ও বিশাল সমন্বয়বাদী চেতনার ছাপ দেখতে পান। দেশের প্রতিটি দীনি কাজের প্রতি তার সমান দরদ ও অভিনিবেশ থেকে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দৈনিক ইনকিলাব এখনো বৃহৎ ইস্যুতে জাতীয় গণঐক্য-প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের বিকল্পহীন মাধ্যম। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আওতায় দেশের প্রখ্যাত সব পীর-মাশায়েখ ও প্রভাবশালী শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক এবং শিক্ষার্থী-অভিবাবকের যে নেটওয়ার্ক আছে, অন্য ইসলামী নেতৃত্ব ও সকল মত-পথের আলেমসমাজ যে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বৃত্তে তার চেতনা ও কর্মের সাথে যুক্ত, এ বিশাল চ্যানেল বাংলাদেশকে জাগাতে ও আন্দোলিত করতে পারে খুবই সফল ও অর্থবহ উপায়ে। এ যোগাযোগটি বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ।
দোহারে ইসলামী আন্দোলনের যুব শাখা বিশাল ঈদ পুনর্মিলনী করে। লাখো যুবকের সমাবেশ। বৃহত্তর ঢাকার ইসলামী শক্তির সম্মিলন। পীর সাহেব চরমোনাই সেক্রেটারি শাহাদত সাহেবের মাধ্যমে গাড়ি পাঠান। আমার সেখানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করার কথা। কিন্তু অসুস্থতার জন্য যাওয়া হয়নি। তারা রোগশয্যায় আমার খোঁজখবর নেন। এই যুবসমাজ এখন রোহিঙ্গা সঙ্কটের কার্যকর কর্মশক্তি। পরের সপ্তাহে গাজীপুর রাজবাড়ী মাঠে ঢাকার উত্তর জেলা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জ থেকে প্রায় তিন লাখ আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ, ইমাম ও ধর্মপ্রাণ মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা ও সংহতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত করে। অঞ্চলের বর্ষীয়ান আলেম মাওলানা আশেকে মুস্তফার সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে এমন কোনো দল, সংগঠন, দরবার, মসজিদ, মাদরাসা নেই যারা শরীক হননি। কথা ছিল কিছুটা সুস্থ বোধ করলে আমি যাবো। অনুষ্ঠানের দিন বারবার উদ্যোক্তারা ফোন করলেও এক শ’ চার ডিগ্রি জ্বর থাকায় আমার যাওয়া হয়নি। উদ্যোক্তা এক বন্ধু দুপুরে বললেন, গাজীপুরের প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করছে। সমবেত আলেম সমাজ আপনাকে খুব মিস করছে। আমাদের কাছে সুযোগ আছে, একটু কষ্ট করে আপনি হেলিকপ্টারে করে ১০ মিনিটের জন্য হলেও মঞ্চে আসুন। আপনি বললেই আপনাকে নেয়ার ব্যবস্থা করব। আমি বললাম, ‘ভাই আমার অবস্থা উঠে দাঁড়াবার মতোও নয়। আপনারা সম্মেলন শেষ করে ফেলুন। আল্লাহ চাইলে পরে একসাথে কাজ করব। এই বিশাল ও সম্মিলিত ধর্মীয় কমিউনিটি এখন দিল খুলে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে রাতদিন কাজ করে চলেছে। দল-মত, প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে সবাই খুব ঘনিষ্ঠ ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত। অতীত যুগের ওলি-আওলিয়াদের নিঃস্বার্থ পন্থায় উদারপন্থী সমন্বয়বাদী দীনি কন্ট্রাক্ট গ্রুপ তাদের ঘিরেই কাজ করছে। দৈনিক ইনকিলাব একটি চিন্তা ও আইকন হয়ে গত প্রায় তিন যুগের মতো আজও সবাইকে পরম মায়ায় এক ছাতার নীচে আগলে রেখেছে। সুখে-দুঃখে, সুদিনে-দুর্দিনে আল্লাহর বান্দা ও বিশ্বনবীর উম্মতকে এক প্ল্যাটফর্মে জড়িয়ে রাখার জন্য যে পত্রিকাটির জন্ম। আজও দেশ ও জনগণের, ধর্মীয় নেতৃত্ব ও তৌহিদি জনতার যেটি বড় আশ্রয়, সচেতন পথনির্দেশক।
মজলুম রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ইনকিলাবে সংবাদ, চিত্র, প্রতিবেদন ও নিবন্ধ প্রকাশের যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তার সাথে আমরা খুব পরিচিত। তবে অন্যসব মিডিয়ার দায়িত্বশীলেরা এসব শুনে অবাক হয়ে যান। বিশিষ্টজনেরা ভেবে কুল পান না, একটি সংবাদপত্র কী করে এতটা প্রভাবশালী হতে পারে। এত বিপুল সংখ্যক মানগত মানুষের কাছে অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা নিয়ে সত্যই ইনকিলাব ধন্য। ইনকিলাব সফল, ইনকিলাব অনন্য। রাজধানীর অভিজাত এলাকার এক বড় মসজিদের ইমাম ফোন করে বললেন তাদের ত্রাণ তৎপরতার কথা। কুটনৈতিক জোনের বিখ্যাত মসজিদের খতিব জানালেন তাদের টিম সোমবার যাচ্ছে কক্সবাজার। এর আগে তাদের মুসল্লি দল কোটি কোটি টাকার খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, তৈজসপত্র, তাঁবু, বিছানা, জামাকাপড়, বোরকা ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। ইনকিলাব ভবনের আশপাশসহ ঢাকা দক্ষিণের বহু ইমাম-খতিব জানিয়েছেন তাদের ত্রাণ তৎপরতার কথা। জবাবে বলেছি, আলহামদুলিল্লাহ, দেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ যে ভ‚মিকা রাখছেন তাতে বাংলাদেশ এ মুহূর্তে সফল। এসবের বর্ণনা প্রচলিত মিডিয়ায় প্রায় অনুপস্থিত। আর ইনকিলাব এ বাস্তবতা তুলে ধরার জন্যই রীতিমতো যুদ্ধ করে টিকে আছে। ৩১ বছর কঠিন সংগ্রাম আর পরীক্ষার মধ্য দিয়েই ইনকিলাব নির্মোহভাবে কেবল দেশ ও জনগণের জন্যই কাজ করে গেছে। যার ফলে ইনকিলাবের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে দেশ ও জনগণের হৃদয়ের আওয়াজ। স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্রের ধ্বনি। দেশের মানুষের আস্থাভাজন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় তরুণ নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর। আর এ জন্যই দেশের মানুষ ইনকিলাবকে এত ভালোবাসে। আলাদা নজরে দেখে। এর বিশেষায়িত উপস্থাপন ছাড়া তাদের যেন চলেই না। অবহেলিত দীনি অঙ্গন আর উপেক্ষিত ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার যখন কোনো অবলম্বন ছিল না, তখন এ গুরুভার মাথা পেতে নিয়েছিল ইনকিলাব। শত প্রতিক‚লতা সত্তে¡¡ও এ জিম্মাদারি আদায়ে ইনকিলাব সতত সচেষ্ট রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, দেশের প্রতিটি ধর্মীয় কার্যক্রম ইনকিলাবের পাতায় যথারীতি পরিবেশিত হবে। ইতিহাসে জায়গা করে দিবে এ দেশের প্রকৃত সুনাগরিকদের কর্মময় জীবনের সংগ্রাম ও সাধনাকে।
গত দু’সপ্তাহে দু-একটি ছাড়া দেশের এমন কোনো বড় ইসলামিক সংগঠন দল ও প্রতিষ্ঠান নেই যার দায়িত্বশীলগণের সাথে আমাদের কথা না হয়েছে। স্বাস্থ্যগত সমস্যায় বিছানাবন্দী ছিলাম বলে অনেকে দেখতে এসেছেন। উভয় পক্ষের কষ্ট হবে বলে অনেককে আসতে দেইনি। অনেকে ফোনে রোগমুক্তির দোয়া করেছেন। মাসনুন দোয়া পড়ে দম করেছেন। এ সময়ই সারা দেশের আলেমসমাজ রোহিঙ্গাদের দুর্দিনে কঠিন বিচলিত হন। প্রবাসী আলেমরা খোঁজখবর জানতে চেয়েছেন। আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কথা বলেছেন। মাওলানা কাসেমী ফোন করেছেন। বেফাক নেতৃবৃন্দ ও দাওয়াতুল হকের আমীর সাহেব বহুবার কথা বলেছেন। হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস প্রভৃতি সংগঠনের নেতৃবর্গ শলাপরামর্শ করেছেন। খেলাফত আন্দোলনের আমীর শাহ আতাউল্লাহ্ হাফেজ্জী দেখতে চলে এসেছেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সাময়িক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হন। একটু সুস্থ হয়েই আবার প্রেসক্লাবে সেমিনার ডেকেছেন। এক কথায় রোহিঙ্গাদের কষ্ট গোটা বাংলাদেশকে স্পর্শ করেছে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত ঈমানদার মানুষ দুঃখ-বেদনায় ক্ষোভে-যন্ত্রণায় যেমন কাতর হয়ে উঠেছে, তেমনি তারা নিন্দা ও প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। এককথায় জাতীয় দুর্যোগ ও রোহিঙ্গা সঙ্কটে গোটা বাংলাদেশ তার ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃত্বের সঙ্গী হয়ে নজিরবিহীন আন্দোলিত হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব তাদের তৎপরতার সাক্ষী। তাদের চেতনার সঙ্গী। নিউজ ছেপে শেষ করা যায় না। ছবি ছেপে কুলানো যায় না। সবাইকে হৃদয়ে জায়গা দিয়ে কাজ সারতে হয়। পর্যায়ক্রম ছাড়া কাগজে স্পেস দিয়ে আমরা শেষ করতে পারি না। অথচ এ দেশে বিখ্যাত কাগজই আছে ২০টির অধিক। কিন্তু ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার কথা তাদের পাতায় অতীতে যেমন জায়গা পায়নি, এখনো জায়গা পায় না। একই অবস্থা ইলেকট্র্রনিক মিডিয়ার। সভা-সমাবেশ, টকশোতেও ধর্মপ্রাণ মানুষ যথারীতি উপেক্ষিত। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে মাঠে-ময়দানে জাতির সঙ্কটে দেশের বিপদে, মানবতার দুর্দিনে এরাই পরীক্ষায় ফুল মার্ক পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশকে তার নিজ শক্তি সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হতে হলে এই মহাসত্যটি বুঝতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Asadullah ghalib ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৫:২১ এএম says : 0
Voice of soul.thanks inqilab.
Total Reply(0)
আতিক ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৭:৩১ এএম says : 0
বড় কথা ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে, বাংলাদেশে ইসলামিক শক্তির পতন ঘণ্টা জামাতিরা বাজাল এটা সম্পর্কে তো কিছু বললেন না। দেলোয়ার হোসেন সাইদি জামিয়াতুল মুদারিসিন এর কাউনটারে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদ গঠন বাংলাদেশের আলেমদের বিভক্ত করে এর পর নয়া দিগান্ত পত্রিকা বের করে ইনকিলাব নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল কারা? সেই ষড়যন্ত্রের ফল আজ বাংলার কোটি কোটি মানুষ কে ভোগ করতে হচ্ছে, রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে শুরু করে মিডিয়া সব জায়গায় অযোগ্য অমুসলিম, নাস্তিকরা। জাতী একতা চায়, কিন্তু জামাতে ইসলাম নামের বেঈমানের সাথে একতার কোন মূল্য নেই এটা বুঝতে হবে আলেমদের।
Total Reply(0)
মাও হাফেজ মিজানুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৮:৫১ এএম says : 0
আলহামদুলিললাহ ইনকিলাব পরিবার কে অনেক অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ আপনাদের কে জান্নাতের এ সব নেক কাজের পুরস্কার দান করবেন ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
গালীব পাশা ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৪৭ এএম says : 0
আলেম সমাজের ভুমিকা আমরা যথেষ্ট নয় বলে মনে করি।
Total Reply(0)
সেলিম উদ্দিন ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৩২ পিএম says : 0
এই জন্যই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে আছি। ভবিষ্যতে থাকবো ইনশা আল্লাহ
Total Reply(0)
কামরুল ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫২ পিএম says : 0
আলেম, ইমাম ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রকৃত ও বহু পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক সৎ নিষ্ঠাবান শক্তির এই মানবিকতার সংগ্রাম সফল হবেই। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা এ দেশকে সকল শত্রুর শ্যেনদৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। মজলুমদের সেবার শক্তিই আলাদা।
Total Reply(0)
তানিয়া ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
মহান আল্লাহ তায়ালা আপনাদের এই প্রচেষ্টাকে কবুল এবং মঞ্জুর করুক। আমিন
Total Reply(0)
শাহাদাৎ হোসাইন ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:৫৪ পিএম says : 0
ইনকিলাবের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে দেশ ও জনগণের হৃদয়ের আওয়াজ। স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্রের ধ্বনি। দেশের মানুষের আস্থাভাজন আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় তরুণ নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর। আর এ জন্যই দেশের মানুষ ইনকিলাবকে এত ভালোবাসে।
Total Reply(0)
মিরাজ হুসাইন ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১:২১ পিএম says : 0
হে আল্লাহ! আপনি আলেমদের আরো কবুল করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন