উত্তর বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট একটি গভীর স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে শেষ শরতে আবহাওয়ায় পালাবদল সূচনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সমুদ্র এখনও উত্তাল থাকায় বন্দরে সতর্ক সঙ্কেত বহাল রয়েছে। গভীর স্থল নিম্নচাপ এবং মোটামুটি সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গতকালও (সোমবার) দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিক্ষিপ্ত এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কতার কথা জানায় আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে মাদারীপুরে ১১৩ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় স্বল্পবৃষ্টি, চট্টগ্রামে ৯ মিমি, রাজশাহীতে ২ মিমি, খুলনায় ৩৭ মিমি, বরিশালে ৮৯ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকায় তাপমাত্রার পারদ আরও নেমে গিয়ে গতকাল ছিল সর্বোচ্চ ২৯.৩ ও সর্বনিম্ন ২৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌসুমি বায়ুর ঘোর বজায় থাকায় মেঘ-বৃষ্টির মাঝে এখনো কুয়াশাপাত না হলেও হালকা শীতল পরশের আলামত দেখা যাচ্ছে। তবে সাগরে ফের লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আবহাওয়ার রূপ পাল্টে যেতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ সূত্র জানায়, গত রোববার সৃষ্ট লঘুচাপটি ধাপে ধাপে ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ ও সংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। গতকাল দুপুরে এটির অবস্থান ছিল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন বাংলাদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায়। (২২.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ)। স্থল গভীর নিম্নচাপটি স্থলভাগের উপর দিয়ে আরও পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কবাণীতে গতকাল আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থিত সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর ও মাদারীপুর অঞ্চলসহ খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বা বলয় বর্তমানে ভারতের বিহার, উড়িষ্যা, গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রস্থল, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় এবং উত্তরাঞ্চলে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে জোরদার অবস্থায় রয়েছে।
আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টিপাত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়, এ মাসের প্রথমার্ধের মধ্যে বর্ষা তথা মৌসুমি বায়ু বিদায় নিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন