বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আসন ফেনী-১। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া- এ তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। আগামী নির্বাচনেও বিএনপি অংশ নিলে খালেদা জিয়া হবেন এ আসনের প্রার্থী। ১৯৯১ সাল থেকে যতবারই খালেদা জিয়া নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা তাকে বিমুখ করেননি। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তাকে নির্বাচিত করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসনটি ছেড়ে দেন। তখন উপনির্বাচনে তার ভাই সাঈদ এস্কান্দার নির্বাচিত হন। এখন সাঈদ এস্কান্দারও প্রয়াত। আগামী নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি। তারপরও আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জাসদ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজ করছেন পুরোদমে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারণার ঢেউ শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামের হাট-বাজারেও লেগেছে।
বিএনপির প্রার্থী বেগম খালেদা জিয়া অনেকটা নিশ্চিত হলেও নির্ধারণ হয়নি আওয়ামী লীগ থেকে তার প্রতিদ্ব›দ্বী কে হচ্ছেন? সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ আসনে ১৯৯১ সালের ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০০৮-এর ৯ম জাতীয় সংসদ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। বেগম খালেদা জিয়ার জম্মস্থান ও নির্বাচনী এলাকা ফেনী-১ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় নিজেদের মধ্যে দিধা বিভক্তি ও নেতাকর্মীরা মামলা হামলার শিকার হয়ে অনেক আত্মগোপনে থাকায় দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থগিরতা দেখা দিয়েছে। দলের প্রবীন নেতারা মনে করে বর্তমানে এই তিন উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই নাজুক। এসব উপজেলায় কয়েকদফা বিএনপি নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করলে ও দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকার কারণে সফল হয়নি। ফেনী- ১ আসনটি ধরে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতকর্মীরা। বিএনপি প্রধানের পক্ষে স্থানীয় নেতা- কর্মীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা দিবসকে ঘিরে বেগম জিয়ার শুভেচ্ছাবার্তাও সাঁটানো হয়। অবশ্য নেতা- কর্মীদের প্রত্যাশা বেগম জিয়াই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে একক কেউ ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন করেনি। আগামী একাদশ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ আসনে দলীয় প্রার্থী চান। মহাজোট থেকে অন্য দলের প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই প্রার্থীর হয়ে ভোটযুদ্ধে নামবেন না বলে তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ¯পষ্ট করেই জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আসনে বিজয়ী হতে হলে তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী দিতে হবে। যদিও বর্তমানে ফেনী-১ আসনের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ স¤পাদক শিরীন আখতার এমপি রয়েছেন। শিরীন আখতার আবারো মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ সামনে রেখে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিরীর আখতার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর জাসদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা গতি আসছে। এমপির প্রতিনিধি হিসেবে ফেনী জেলা জাসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপ্রতি কাজী আব্দুল বারী দলের কার্যক্রম গতিশীল করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জোটের মনোনয়ন পেলে আবারও এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, বর্তমান এমপি তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন না। ফলে জাসদ নেত্রীর বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করেন না। । উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবত উপজেলা আওয়ামীলীগের জোরালো দাবী জানিয়ে আসছেন। বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ফেনী আওয়ামী লীগের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ৯৬-এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম পর্দার অন্তরালে থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নেতৃত্ব, স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচন এবং কেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার প্রভাব রয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে প্রার্থী হিসেবে চাইলেও তিনি সব সময় পর্দার অন্তরালেই থাকতে চান। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতায় কি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম আসবেন? দলের নেতা- কর্মীদের প্রস্তাব তাকে ঘিরে। জেলা আওয়ামী লীগ ফেনী- ১-২ আসনের যে কোনো একটিতে তাকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলেও গতবার তিনি সম্মত হননি। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচন করেননি। তবে এবার তিনি নির্বাচন না করলে কে প্রার্থী হবেন তা নির্ভর করছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এর সমর্থন এর উপর। বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত ফেনীতে এখন আওয়ামীলিগের আধিপত্য। শুধু সংসদ নির্বাচনেই নয়। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই আওয়ামীলীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে আওয়ামীলীগ এখানে শক্ত ঘাঁটি করতে মরিয়া।
এদিকে এক সময়ের বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা) মন্ত্রী লে. কর্নেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব.) ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত এ আসনের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বেগম জিয়ার সঙ্গে হেরে যান। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে হয়তো আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।এছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হচ্ছেন, বিগত জাতিয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পাওয়া ও পরবর্তীতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে ছেড়ে দেয়া ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বশর মজুমদার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগকৃত কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমানে ট্রুথ পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী আগামী নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামবেন বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়েছেন।
এছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা নাজমা আক্তার, ফেনী জেলা জামায়াতের আমীর একেএম সামছুদ্দিন আহাম্মদ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলম মজুমদার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলা শাখার সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আল মোবারক ও খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মজলিশের সূরার সদস্য মাওলানা আনোয়ার উল্লাহ ভূঁঞার নামও শোনা যাচ্ছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করার দৃড় প্রত্যয় নিয়ে তৃনমূল পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। আগামী জাতিয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে আমাদের প্রিয় অভিভাবক আলা উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ভাই ও ফেনী গণ মানুষের নেতা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি ভাইয়ের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থীকে নৌকা মার্কায় বিজয়ী করার সুনিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহাম্মদ মজুমদার জানান, বেগম খালেদা জিয়ার নিজ আসন ফেনী-১। এটি খালেদা জিয়ার পারিবারিক সিট। খালেদা জিয়ার রাজনীতির শুরু থেকেই এ সিটে নির্বাচন করছেন। তিনি আমাদের গর্বের ব্যাপার। তার জীবদ্দশায় এ আসনে অন্য কোনো প্রার্থী চিন্তাও করা যায় না। তার পক্ষে দলীয় সব নেতা-কর্মী সব সময়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অতীতের মতো তিনি এ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
ফেনী জেলা জাসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজী আবদুল বারী জানান, শিরীন আখতার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কোন মানুষকে বিনা কারণে হয়রানী করেননি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, দখলবাজীর মত কোন কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত ছিলেননা। বা নিজ দলীয় কোন নেতাকর্মীকে এ ব্যাপারে কোন প্রকার আশ্রয় প্রশ্রয় দেননি। আমি আশাবাদী আগামী নির্বাচনে জনগণ শিরীন আখতারের এ সকল কর্মকান্ডের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষে পুনরায় নির্বাচিত করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন