কর্মরত ৩০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন
মোঃ হুমায়ূন কবির আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : টানা ৪ দিনের ভারী বর্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ৪ শতাধিক চাতালকল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চাল উৎপাদন। আর এসব চাতালকলে সিদ্ধ ও ভিজিয়ে রাখা প্রায় এক লাখ টন ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাতালমিল মালিকরা। পরবর্তীতে রোদে শুকিয়ে এসব ধান দিয়ে চাল উৎপাদন করা হলে চালের মান যেমন নষ্ট হবে তেমনি দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে বিক্রি করতে হবে অর্ধেক দামে। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাতাল মালিকরা। এদিকে চাতাল বন্ধের কারণে আর্থিক দৈন্যদশায় পড়েছেন ‘কাজ নাই মজুরি নেই’ চুক্তিতে কর্মরত প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। এতে করে বেকার হয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। এমনকি পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে শ্রমিকরা ।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় ৪ শতাধিক চাতালকল রয়েছে। দেশের এই চাল উৎপাদন কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে প্রতিদিন ৪/৫ হাজার টন চাল সরবরাহ করা হয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই ওইসব মোকামে চাল সরবরাহ সম্ভব হবে না। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলার চাতালকল গুলোতে ধান শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে চাল উৎপাদন। বর্তমানে এসব চাতালে ধান ঢেকে রাখায় এবং হাউজে ভিজিয়ে রাখার কারণে নষ্ট হচ্ছে। কোনো চাতালে ধান পচে গিয়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে চাতাল মালিকদের কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চালের বাজারে এর প্রভাব পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ শাজাহান সিরাজ জানান, এ বছর চাতালকল মালিকদের দুর্যোগের বছর। ধান সংকটের কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক চাতালকল। আবার ১২শ থেকে ১৩শ টাকা দরে ধান কিনে এখন টানা বৃষ্টির কারণে এ ধান শুকানো যাচ্ছে না। বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে চালের ব্যবসায় ধস নামবে।
এদিকে এসব চাতালে কর্মরত আছে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। বর্তমানে টানা বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় মজুরি পাচ্ছেন না তারা। ধার-দেনা করে কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। এ ব্যাপারে চাতাল শ্রমিক চানবক্স, শাপলা, হজরত আলী ও মুস্তাফাসহ অনেকে জানান, বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় তারা কোনো মজুরি পাচ্ছেন না। ছেলেমেয়ে নিয়ে ধার-দেনা করে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছি। কেউ কেউ মালিকের কাছ অতিরিক্ত দাদন নিচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, বন্যায় হাওরের ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আশুগঞ্জ মোকামে ধানের আমদানি এমনিতেই সর্বনিম্নে নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে উপজেলার শতাধিক চাতালকলেপ্রায় অর্ধলক্ষ টন ধান সিদ্ধ করে রাখা আছে। বাকি চাতালগুলোতে অর্ধলাখ টন ধান হাউজে ভেজানো রয়েছে । টানা বৃষ্টির কারণে এসব ধান শুকানো যাচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন