বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গত শুক্রবার মিসরের সিনাই প্রদেশের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সিনাইয়ের রাজধানী আর-আরিশের ৪০ কিলোমিটার দূরে রাওদা মসজিদে এ হামলা হয়। গুলি ও বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৩৫ জন নিহত এবং ১২৫ জন আহত হয়েছে। স্মরণকালের ইতিহাসে মিসরে এ ধরনের হামলা নজিরবিহীন। হামলা কারা চালিয়েছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৩ সাল থেকে সিনাই অঞ্চলে আইএস সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের কেউ এ হামলা চালাতে পারে। পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারীরা উঁচু-নিচু ও বন্ধুর পথে চলার উপযোগী চারটি গাড়িতে চড়ে প্রথমে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তারপর মসজিদে আতঙ্কিত মুসল্লীদের ওপর গুলি চালায়। হামলাকারীরা এসেই মসজিদ ঘিরে ফেলে। তারপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এ হামলাকে বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন নিন্দা জানিয়েছে। মিসরে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার নাইজেরিয়ার একটি মসজিদেও আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বোকো হারাম এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে দুই দেশের মসজিদে ভয়াবহ হামলার বিষয়টি মুসলমানদের জন্য ভীতিকর হয়ে উঠেছে। মসজিদও এখন সন্ত্রাসী হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এ ঘটনায় আরব লীগের প্রধান নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ অপরাধ আবারও প্রমাণ করল যারা চরমপন্থী সন্ত্রাসী আদর্শ নিয়ে চলে তাদের কাছে ইসলাম নিরাপদ নয়। তারা ইসলামের দুশমন।
সারা বিশ্বে যখন ইহুদী-নাসারারা সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামকে ‘সন্ত্রাসের ধর্ম’ এবং মুসলমানদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত করার জন্য ক্রমাগত বিভিন্ন অপকর্ম ঘটিয়ে চলেছে, তখন ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে পথভ্রষ্ট কিছু লোক একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নেপথ্যে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর সবচেয়ে বড় হামলাটি করা হয় ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কে বিমান হামলা চালিয়ে টুইন টাওয়ার ধ্বংস করার মাধ্যমে। এ হামলা নাইন-ইলেভেন হিসেবে পরিচিত। অথচ এ হামলা যে স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্র করে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর দোষ চাপিয়েছে, তা এখন স্বীকার করা হচ্ছে। এ হামলাকে কেন্দ্র করে এবং আল-কায়দা দমন ও তার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে ধরার নামে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো হামলা চালিয়ে আফগানিস্তানকে তছনছ করে দেয়। বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে ভীতি ছড়িয়ে তা দমনের বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। আইএস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো অভিযান চালিয়ে সিরিয়ার মতো সমৃদ্ধ একটি দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানের লাখ লাখ মুসলমানকে উদ্বাস্তুতে পরিণত করেছে। শুধু সিরিয়া নয়, ইরাক, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলমান রাষ্ট্রগুলোতে হামলা করে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। মুসলমানদের মধ্যকার বিভিন্ন মতাবলম্বীদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পারস্পরিক হানাহানিতে লিপ্ত করিয়েছে। ইরাকে শিয়া-সুন্নীদের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে ইরাককে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখন বিভিন্ন দেশের মসজিদে মসজিদে জঙ্গী হামলা চালিয়ে নিরীহ মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। অথচ ইসলামে মানুষ হত্যা পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম কখনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অনুমোদন দেয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বব্যাপী ইসলামের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতেই বিপদগামী একটি শ্রেণীকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো মদদ দিচ্ছে এবং তাদের দ্বারা নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপ সংস্থা পিউ রিসার্চ-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যে কোনো ধর্মের চেয়ে শীর্ষে থাকবে। দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আর কোনো ধর্মের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটছে না। ইসলামের এই অব্যাহত যাত্রা রুখতেই সংগঠনগুলোকে দিয়ে একের পর এক হামলা চালানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এক ঢিলে দুই পাখি মারার নীতি অবলম্বন করে চলেছে। একদিকে ইসলামকে কলুষিত করা, আরেকদিকে সন্ত্রাস দমনের নামে সমৃদ্ধ মুসলমান দেশগুলোতে হামলা চালিয়ে তাদের সম্পদ হাতিয়ে নেয়া।
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। ওআইসি এবং আরব লীগকে এক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ইসলাম যে শান্তি, শৃঙ্খলা ও মানবতাবাদী ধর্ম, তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। ইসলামের নামে যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে, তাদেরও বুঝতে হবে হামলার মাধ্যমে মানুষ হত্যা করে কখনো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই’ ইসলামের এই শ্বাশত বাণী তাদের ধারণ করতে হবে। ইসলাম নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ষড়যন্ত্র এবং দোষারোপ করার নীতি থেকে তাদের সরে আসতে হবে। মসজিদে হামলা চালিয়ে যেসব মুসল্লীদের হত্যা করা হলো, তাতে তাদের কী লাভ হলো বা ইসলামের কী সেবা করা হলো, তা তাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সিনাই ও নাইজেরিয়ার মসজিদে হামলা করে হত্যার ঘটনার আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
alim ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৪৪ এএম says : 0
“ ওরা ধর্মের শত্রু, ওরা মানবতার শত্রু, ওরা ইসলামের কেউ নয় ৷”
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন