বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বালাগাল উলা বিকামালিহি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কাবাগৃহের গিলাফ পরানোর দিনটিকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করার দ্বারা প্রমাণ প্রতিষ্ঠা :
জাহেলিয়াতের যুগে মক্কার কুরাইশরা আশুরার দিন রোজা রাখত এবং এই দিনটিকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করত। হিজরতের পূর্বে হুজুর নবী আকরাম (সা.) ও সেদিন রোজা রেখেছেন। তারা এ দিনকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করত, কারণ এ দিনে সর্বপ্রথম কাবাতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর)-এর উপর গিলাফ চড়ানো হয়েছিল। এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। যার কারণে হিজরতের পরে হুজুর নবী আকরাম (সা.) ইহুদীদের আশুরার দিন রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। (১) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি:) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে রেওয়ায়েত করেছেন যে, উম্মুল মুমিনীন সাইয়্যেদাহ আয়েশা (রা.) বলেছেন যে, জাহেলিয়াতের যুগে কুরাইশগণ আশুরার দিন রোজা রাখতেন এবং হুজুর রাসূল আকরাম (সা.) ও রোজা রাখতেন। [(ক) সহীহ বুখারী : কিতাবুস সাওম, বাবু সিয়ামে ইয়াওমে আশুরা খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৭০৪, বর্ণনা সংখ্যা-১৮৯৮। (খ) সহীহ বুখারী : কিতাবুল মানাকেব, বাবু আইয়্যামিল জাহিলিয়্যাহ, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১৩৯৩, বর্ণনা সংখ্যা-৩৬১৯, (গ) সহীহ মুসলিম : কিতাবুস সিয়াম, বাবু সাওমে ইয়াওমে আশুরা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৭৯২, বর্ণনা সংখ্যা-১১২৫, (ঘ) জামে তিরমিজি : কিতাবুস সাওম, বাবু মা-জ্বাআ ফির রুখসাতি ফী তারকি সাওমে আশুরা, খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-১২৭ বর্ণনা সংখ্যা-৭৫৩] জাহেলিয়াতের যুগে যখন প্রথমবার কাবাগৃহকে গিলাফ দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়, তখন এ দিনটি ছিল ১০ই মুহররম অর্থাৎ আশুরার দিন। সে সময় হতে শুরু করে মক্কার লোকদের মধ্যে এ ব্যবহারিক ধারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সৌভাগ্যপূর্ণ বেলাদতের পরেও অব্যাহত ছিল। এবং বর্তমানেও অব্যাহত আছে। হুজুর নবী আকরাম (সা.) ও কাবাগৃহের উপর গিলাফ চড়ানোর দিন রোজা রাখায় অভ্যস্ত ছিলেন। কাবাগৃহের উপর গিলাফ চড়ানোকে আরবী ভাষায় ‘কিছওয়াতুল কাবা’ বলা হয়। (২) ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি:) স্বীয় সহীহ কিতাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন-আরবের লোকেরা মাহে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন রোজা রাখত। (এর কারণ ছিল এই যে) এই দিনে কাবাগৃহের উপর গিলাফ চড়ানো হতো। তারপর যখন আল্লাহপাক রমজান মাসের রোজাকে ফরজ করে দিলেন, তখন রাসূল আকরাম (সা.) এরশাদ করলেন-তোমাদের মধ্যে যারা রোজা রাখতে চায়, তারা যেন ঐদিনে রোজা রাখে আর যারা রোজা রাখতে চায় না তারা রোজা পরিহার করতে পারে। [(ক) সহীহ বুখারী : কিতাবুল হজ বাবু কাওলিল্লাহি জায়ালাল্লাহুল কা’বাতাল বাইতাল হারাম, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৫৭৪, বর্ণনা সংখ্যা-১৫১৫, (খ) তাবরানী : আল মুজামুল আওছাত, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২৭৮, বর্ণনা সংখ্যা-৭৪৯৫, (গ) বায়হাকী : আস সুনানুল কুবরা, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-১৫৯, বর্ণনা সংখ্যা-৯৫১৩, (ঘ) ইবনে আবদুল বার, আততাসহীদু লিমা ফিল মুয়াত্তা মিনাল মায়ানিয়ে ওয়াল আছানিদে, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২০৪]। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন (৭৭৩-৮৫২ হি:) উপলোল্লিখিত হাদীসের মর্মার্থ বিশ্লেষণপূর্বক লিখেছেন যে, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জাহেলিয়াত যুগ হতেই মক্কার অধিবাসীরা কাবাগৃহের উপর গিলাফ চড়িয়ে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত এবং এর প্রচলন তারা প্রতিষ্ঠিত রেখেছিল। [আসকালানী : ফাহহুল বারী খন্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪৫৫)। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীন (৭৭৩-৮৫২ হি:) অন্য এক স্থানে কুরাইশগণের কাবার গিলাফ চড়ানোর দিনে রোজা রাখার কারণ বিশ্লেষণ করে লিখেছেন যে, আশুরার দিন কুরাইশদের রোজা রাখার কারণ ছিল এই যে, সম্ভবত তারা পূর্ববর্তী শরীয়ত হতে এই বিষয়টি লাভ করেছিলেন এবং এ জন্যই সে দিনের সম্মানার্থে কাবাগৃহের উপর গিলাফ চড়ানোর কাজ অব্যাহত রেখেছিলেন। (আসকালানী : ফাতহুল বারী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা ২৪৬)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন