শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বালাগাল উলা বিকামালিহি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হযরত ওমর (রা:) এর বিশ্লেষণ দ্বারা প্রমাণ প্রতিষ্ঠা :
হযরত কায়াব আহ্বার (রা:)-এর বর্ণনার মধ্যেও পাওয়া যায়। তিনি বলেন, আমি হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা:)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি সে সম্প্রদায়কে চিনি ও জানি যে, যদি তাদের উপর সে আয়াত নাজিল হত, তাহলে তারা সেই দিনকে ঈদ হিসেবে পালন করত। হযরত ওমর (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, সে আয়াত কোনটি? আমি বললাম: আয়াতটি হল-আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম ওয়া আত্মামতু আলাইকুম নি’মাতি ওয়া রাদিতু লাকুমুল ইসলামা দীনা। আর্থাৎ আমি আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে ইসলামকে (পরিপূর্ণ জীবনবিধান রূপে) পছন্দ করলাম। [(ক) আসকালানী : ফতহুল বারী, খন্ড-১, পৃষ্ঠা ১০৫, বর্ণনা সংখ্যা ৪৫। (খ) সূরা মায়েদাহ : আয়াত-৩] একথার প্রেক্ষিতে হযরত ওমর (রা:) বললেন : আমি জানি আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম আয়াত কোন্ দিন নাজিল হয়েছে, তা ছিল শুক্রবার আরাফাতের দিন। জুমা এবং আরাফাত এই দুদিন পূর্ব থেকেই আমাদের নিকট ঈদের দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। [(ক) তাবরানী আল মুজামুল আওছাত : খন্ড-১ পৃষ্ঠা-২৫২; বর্ণনা সংখ্যা ৮৩ (খ) আসকালানী : ফতহুল বারী খন্ড-১ পৃষ্ঠা ১০৫, বর্ণনা সংখ্যা ৪৫; (গ) ইবনে কাছির : তাফসিরুল কোরআনিল আজীম খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৪।] উপরোল্লিখিত বর্ণনাসমূহ প্রমাণ করে যে, ইহুদীদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক ছিল। এ জন্য একে বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যথায় হযরত ওমর (রা:) শুরুতেই একে বাতিল করে দিতেন এবং একথা অবশ্যই বলতেন, ইসলামী শরীয়ত আমাদের জন্য ঈদের দিন নির্ধারণ করে রেখেছে। এ জন্য আমরা উপরোক্ত আয়াত নাজিলের দিনকে আলাদাভাবে ঈদ হিসেবে উদযাপন করতে পারছি না। অন্য কথায় বলা যায় যে, হযরত ওমর ঈদ হিসেবে উদযাপন করতে পারছি না। অন্য কথায় বলা যায় যে, হযরত ওমর ইহুদীকে একথা স্বীকার করতে বাধ্য করেছেন যে, এই দিনটি যদি তোমাদের নবীর হত তাহলে তোমরা সে দিনকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করতে। কিন্তুু আমরা তো দুই ঈদ পালন করি। একটি হচ্ছে আরাফাত দিন এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে জুমার দিন। এ পর্যায়ে আমরা যে অর্থ ও ও মর্মকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, তা বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে সংকলিত বর্ণনার দ্বারা আরও শক্তিশালী ও গ্রহণীয় হয়ে উঠে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:)-এর ঘটনাটি হচ্ছে এই যে, একবার তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন : ‘আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম ওয়া আতমামতু আলাইকুম নিমাতি ওয়া রাদিতু লাকুমুল ইসলামা দীনা। তার কাছে একজন ইহুদী দাঁড়িয়ে ছিল। ইহুদী লোকটি বলল : যদি এই আয়াতটি আমাদের ওপর নাজিল হত, তাহলে আমরা এ দিনকে ঈদের দিনের মত উদযাপন করতাম। ইহুদীর কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বললেন, নিশ্চয়ই এই আয়াত দু’ঈদের দিন অর্থাৎ জুমা এবং আরাফাতের (হজের) দিনে নাজিল হয়েছে। [(ক) জামে তিরমিজী, কিতাবু তাফসিরুল কোরআন, বাবু মিন চুরাতিল মায়িদাতি, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা ২৫০, বর্ণনা সংখ্যা ৩০৪৪। (খ) তাবরানী : আল মুজামুল কবীর, খন্ড-১২, পৃষ্ঠা ১৮৪ বর্ণনা সংখ্যা ১২৮৩। (গ) তাবারী : জামেউল বয়ান ফী তাফসিরিল কোরআন, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮২। (ঘ) মারুজি : আজামু কাদারিছ ছালাতি, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৩৫২, বর্ণনা সংখ্যা ৩৫৪১। (ঙ) ইবনে কাছির : তাফসিরুল কোরআনিল আজীম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৪, (চ) ইবনে মুসা হানাফী : মুতাছিরুল মুখ তাছারা : খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৯।] উল্লেখিত হাদীসসমূহের দ্বারা একথা প্রতিপন্ন হয় যে, ‘নেয়ামত নাজিল হওয়ার দিনকে ঈদ হিসেবে উদযাপন করা যায়েজ ও বৈধ কাজ। যেভাবে তাকমিলে দীনের আয়াত অবতীর্ণের দিনকে ঈদের দিন বলে গণ্য করা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই সেদিনকে যেদিন হযরত রহমতে আলম (সা:) স্বয়ং দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং যার সদকায় আমাদেরকে শুধু সে আয়াতই নয় বরং পরিপূর্ণ কোরআনুল কারীমের মত নেয়ামত দান করা হয়েছে, সে দিনকে ঈদ হিসেবে কেন উদযাপন করা যাবে না? আসল কথা হচ্ছে এই যে, ঈদে মীলাদ উদযাপন করা মূলত ঈমানের মিষ্টতার (আস্বাদের) প্রতীক। কিন্তুু এর জন্য জরুরী হল হুব্বে রাসূল (সা:)-কে ঈমানের বুনিয়াদ বলে স্বীকার করতে হবে, অন্যথায় এই হাকিকতটি বুঝে আসবে না। সেই পবিত্র সত্ত¡া যার সদকায় সকল বিশ্বের দুটি ঈদ নসীব হয়েছে, তার মীলাদের আনন্দ উদযাপনের জন্যে অন্তরে স্থান সংকুলান না হওয়া কোন ধরনের অবস্থা এবং কোন প্রকার ঈমানের চিহ্ন বহন করে? প্রকৃতপক্ষে আল কোরআনের উম্মতে মোহাম্মদীকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে এবং তাদের স্বরূপ ও আসল অবস্থার বিশ্লেষণ পুরোপুরীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যথা : (ক) মুসলিম, (খ) মুমিন এবং (গ) মুনাফিক। যারা সত্যিকার মুসলিম ও সত্যিকার মুমিন তাদের অন্তর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মহব্বত থেকে খালি হতে পারে না। মহব্বতের পরিমাণ হয়ত ব্যক্তি বিশেষে কম-বেশি হতে পারে, কিন্তুু রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মহব্বতে ও স্মরণে তাদের অন্তর সজীব, তরুতাজা উজ্জীবিত ও উদ্বেলিত এবং তরঙ্গায়িত হবেই। কিন্তুু যারা মুনাফিক তাদের কথা আলাদা। তাদের সম্পর্কে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত না করাই শ্রেয় বলে আমরা মনে করছি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন