বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

দখল ও উচ্ছেদের ইঁদুর-বিড়াল খেলা বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার সুবির্ধাথে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুইভাগে বিভক্ত করার পর নাগরিক সুবিধা বেড়েছে কিনা, জনদুর্ভোগ কমেছে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীগণ যে সব প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়িত হলে এতদিনে যানজট, পানিবদ্ধতাজণিত জনদুর্ভোগ অনেকটা কমে আসতো। শুধু তাই নয়, গ্রীন ঢাকা, ক্লীন ঢাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রæতিও ছিল। বিশেষত: ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক নগরবাসিকে যেমন অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সে অনুসারে কিছু আশাপ্রদ তৎপরতাও দেখিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ড, মহাখালি ও গাবতলি বাসস্ট্যান্ডের অবৈধ দখল উচ্ধেসহ চাঁদাবাজি ও যানজটের রাহুমুক্তির জন্য তার বাস্তব উদ্যোগ নগরবাসির মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল। ঢাকা শহরে দখল ও উচ্ছেদের ঘটনা বহু বছর ধরেই অনেকটা ইঁদুর-বিড়াল খেলার রূপক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদনদী, খাল ও জলাভ‚মি থেকে ফুটপাতের অবৈধ হকার উচ্ছেদ পর্যন্ত একই রকম বাস্তবতা দেখা গেছে। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও ঠিকমত বাস্তবায়ন হয়নি। মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে উচ্ছেদকৃত স্থাপনাগুলো সংরক্ষণেও তার যথেষ্ট নজরদারি ছিল। এক বছরের বেশী সময় ধরে এসব স্থাপনা দখলমুক্ত থাকলেও মেয়রের অসুস্থ্যতার সময় থেকে তা পুনরায় বেদখল হতে শুরু করে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মেয়র আনিসুল হকের উদ্ধার করা স্থাপনাগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পুনরায় বেদল হয়ে গেছে। এ প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ারের নেতৃত্বে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় শতাধিক দ্কোান ও হকার শেড উচ্ছেদ করেছে। এ অভিযানে প্রায় ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি অবৈধ সিড়ি ও বাড়তি জায়গা দখলের জন্য কিছু দোকানকে নগদ জরিমানা করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই উচ্ছেদ কতদিন থাকবে? অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর তা সংরক্ষনে কার্যকর উদ্যোগ ও মনিটরিং না থাকার সুযোগে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তা পুনরায় বেদখল হয়ে যায়। ঢাকায় দু:সহ যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে বাসটার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, রাস্তা ও ফুটপাত অবৈধ দখল, যত্রতত্র গাড়ি থামানো, অবৈধ পার্কিং এবং ট্রাফিক আইন না মানা। কালেভদ্রে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে অবৈধ দখল ও ট্রাফিক আইন বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগের বদলে এসব ক্ষেত্রে সার্বক্ষনিক ও স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকা জরুরী। নাম কাওয়াস্তে জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত তাদের কর্তব্য শেষ করছে বলেই উচ্ছেদের পরক্ষণেই পুর্নদখলের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে দখলবাজরা। কর্পোরেশনের অ্যাক্ট পরিবর্তন করে হলেও আরো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষনা প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক গবেষনা প্রতিবেদন অনুসারে ঢাকার যানজটের কারণে বছরে দেশজ উদনশীলতা বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষতি হচ্ছে শতকরা প্রায় ৩ ভাগ। টাকার অঙ্কে এর পরিমান ধরা হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। যদিও যানজটের ক্ষতি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক মানদন্ডে বিচার করাই যথেষ্ট নয়। এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ভ‚-রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশী। ঢাকায় যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে জনসংখ্যা ও যানবাহন অনুপাতে অপ্রশ্বস্ত রাস্তাকে দায়ী করা হলেও ফুটপাত, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ডের জায়গাগুলোর উপর অবৈধ দখলবাজি, অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও যত্রতত্র গাড়ি থামানো অব্যাহত রয়েছে। রাস্তা ও ফুটপাদ দখলমুক্ত করে সাধারণ পথচারিদের রাস্তা পারাপার, ফুটওভারব্রীজ, আন্ডারপাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে যানজটের তীব্রতা অনেক কমতো। ঢাকায় নতুন নতুন রাস্তা তৈরী করার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও নদী, খাল, নি¤œভ‚মি বা জলাধারগুলোতে অবৈধ দখলদারিত্ব ও দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ সরকারের জন্য তেমন কঠিন বিষয় নয়। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। তবে অবৈধ দখল উচ্ছেদের চেয়ে তা সংরক্ষণ বা টিকিয়ে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। অবৈধ দখলের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি হয়, আবার দখল উচ্ছেদ করতেও সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থাকে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হয়। অনেক ঝক্কি ও আইনগত বাঁধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর তা যথাযথভাবে সংরক্ষনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বড় অঙ্কের জমিানাসহ অন্যান্য শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে সুফল পাওয়া যাবে। বলাবাহুল্য, দখল ও উচ্ছেদের ইঁদুর বিড়াল খেলা নগরবাসি আর দেখতে চায়না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন