অর্থনৈতিক রিপোর্টার: উত্তরের জেলা দিনাজপুর দিয়ে ভারতের সঙ্গে রেল ট্রানজিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দুই দেশের মধ্যে রেল ট্রানজিট গড়তে রংপুরের কাউনিয়া থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত বিদম্যান ৫৭ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘পার্বতীপুর হতে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শিরোনামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ভারত সরকারের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে এক হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। বাকি ৩১৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে বিদ্যমান মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ শেষ করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দিনাজপুরের পার্বতীপুর হতে রাধিকাপুর এবং পার্বতীপুর হতে কাউনিয়া সেকশনটি এখন মিটারগেজে চলছে। মিটারগেজের কারণে বিরল সীমান্ত দিয়ে ব্রডগেজ লাইনের মাধ্যমে আন্তঃদেশীয় রেল যোগযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না। এজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর-কাউনিয়া সেকশনের বিদ্যমান মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে যাত্রী, মালামাল পরিবহন ও ট্রান্স বর্ডার রেলওয়ে ট্রাফিক সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রেলওয়ে লিংক এবং রাধিকাপুর-বিরল ব্রডগেজ রেলওয়ে লিংক করিডোর দুটির মাধ্যমে ভারতসহ নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেলওয়ে ট্রানজিট স্থাপন করা সম্ভব হবে।
এদিকে ২০১৬ ও ২০১৭-ওই দুই বছরে বন্যায় যেসব জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব জেলার অবকাঠামো উন্নয়নে গতকালের একনেক সভায় আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ‘বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে দুই হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। পুরো টাকাই খরচ হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে দুই হাজার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন করা হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে এক হাজার কিলোমিটার সড়ক পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া নতুন করে সড়ক নির্মাণ ও পুরনো সেতু নির্মাণ হবে তিন হাজার ৩০০ মিটার। ৬৪ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩৮ টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
গতকালের একনেক সভায় পূর্বাঞ্চলের গ্রিড নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়াতে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুত বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে তিন হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, একনেক সভায় সড়ক, রেল, বিদ্যুতসহ মোট ১৫ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৭ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে আসবে ১১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। বাকি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। মন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুত আমাদের প্রাণ। দেশের যে কোনো ধরনের শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুত জরুরি। আবাসিক খাতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে পরিমাণ বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে রয়েছে, সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রæটির কারণে তার সবটুকু গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না। সে কারণে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে’। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছি তিনগুণ; আর বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থা বেড়েছে দুই গুণ। এখন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থার সক্ষমতাও বাড়ানো হবে’। সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকার শিল্পায়নের দিকে মনোযোগ বাড়ালেও কৃষিকে বাদ দেওয়া যাবে না। কৃষিতে পুরনো কর্মকৌশলের পরিবর্তে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এটি করতে পারলে উৎপাদন বাড়ানো, সময় ও ব্যয় কমানোর পাশাপাশি তরুণ প্রজš§কে কৃষিতে আগ্রহী করে তোলা সম্ভব হবে’।
ব্যাংক খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের টাকা না নিলেও এবার বিমা খাতের উন্নয়নে বহুজাতিক সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। গতকাল একনেক সভায় বিমা খাতের উন্নয়নে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৬৩২ কোটি টাকা। এরমধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ৫১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার যোগান দেবে। যদিও দেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর আর্থিক অনিয়ম বন্ধ করতে গত বছর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের গোপনীয় তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে এমন আশঙ্কা থেকে ওই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের টাকা নেয়নি সরকার।
গতকালের একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৮১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালীতে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট এর জন্য ভ‚মি অধিগ্রহণ, ভ‚মি উন্নয়ন ও সংরক্ষণ, ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন, ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নবসংযুক্ত নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এবং ৬৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরন (বরিশাল জোন) প্রকল্প।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন