সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

একনেকে ১৭,৭৮৭ কোটি টাকার ১৮ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ১২:০১ এএম

আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পসহ ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৮১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩ হাজার ৯৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস এবং আইএমইডির সচিব জিয়াউল ইসলাম।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ায় আর্থিক ও ভৌত অভিগম্যতার উন্নয়ন, নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্যাকেজের মাধ্যমে বিশেষ করে দারিদ্রদের সেবা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ, বিশেষ করে দরিদ্র মহিলা, নবজাতক এবং শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, প্রকল্প এলাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরন, ম্যান্ডেট অনুসারে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা করা হবে এবং নগর স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর অধিকার ও প্রতিশ্রুতি শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম টেকসইকরণ করা হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে পণ্য সরবরাহে কোন সমস্যা নেই। তাই আগামী মাস গুলোতেও মূল্যস্ফীতি বাড়বেনা। এদেশের সব মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করবো। চীনের হোয়াংহো নদীর মতো বিপদজনক নদী যদি শাসন করা যায়। তাহলে আমরা কেন পারবো না। আমাদের দেশের প্রত্যেকটা নদী পর্যায়ক্রমে শাসন করা হবে। ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, চট্টগ্রাম জোন’ যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে, এই প্রথম প্রকল্প, যার মাধ্যমে নদীর নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সন্দীপের সব জনগণ বিদ্যুৎ পাবে। ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন’প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক এমপির তালিকা অনুযায়ী ৬টি করে মাদ্রাসা উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া বিশেষ বিশেষ বিবেচনায় আরো ২০০টি মাদ্রাসা উন্নয়ন করা হবে।
অপরদিকে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সেলে ছিলেন, সেটির অবয়ব ঠিক রাখার নির্দেশ দিয়ে একনেক সভায় পাশ হলো ‘পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন, সংরক্ষণ, ও পারিপাশ্বিক উন্নয়ন’ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এই প্রকল্পের আওতায় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে ছয় তলা ভিতের ওপর ছয় তলা। চক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে দুই তলা ভিতের ওপর দুই তলা। একটি অত্যাধুনিক স্কুল নির্মাণ করা হবে পাঁচতলা ভিতের ওপর পাঁচতলা। ল্যান্ডস্কেপিংসহ, ওয়াকওয়ে, অভ্যন্তরীণ রাস্তাও নির্মাণ করার কথা রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়।
সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন, পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সেলে ছিলেন, সেটির অবয়ব ঠিক রাখতে হবে। একই সঙ্গে জাতীয় চার নেতা যে সেলে ছিলেন, সেটির অবয়বও ঠিক রাখতে হবে। কিছুতেই যাতে পরিবর্তন করা না হয়।
একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-২ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া নদীর উপর নির্মাণাধীন পিসি গার্ডার ব্রিজের অমাপ্ত নির্র্মাণ কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি টাকা। ফরিদপুর জেলার আড়িয়াল খাঁ নদী তীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম জোনের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সাভারস্থ পরমানু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ৩ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন গবেষণা রিঅ্যাক্টর ফ্যাসিলিটির সেফটি সিস্টেমের সমন্বয়সাধন, আধুনিকীকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও বর্ধিতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জামালপুর জেলার ৮টি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসার ভূ-উপরিস্থত পানি শোধনাগারের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভুমিসমূহ সংরক্ষণ ও সৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। জামালপুর-ধানুয়া-কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা জেলা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ১৩টি নদী বন্দরের প্রথম শ্রেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বরিশাল বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯২০ কোটি টাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন