শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

মাঠপ্রশাসনে ব্যাপক রদবদল

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাঠ প্রশাসনে রদবদল সরকারের কর্মকান্ডের সাধারণ প্রক্রিয়ারই অংশ। পছন্দনীয় আমলাদের বদলি ও পদায়ণের মাধ্যমে সরকার তার রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এমনিতেই দলীয় আনুগত্যের মানদন্ডে বছরের পর বছর ধরে আমলাতন্ত্র ও মাঠপ্রশাসনকে নানা স্তরে ঢেলে সাজিয়েছে সরকার। এহেন বাস্তবতায় মাঠ প্রশাসনকে এমনিতেই সরকারের দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা কঠিন। নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর যে কোন উদ্যোগ প্রশাসনকে নিরঙ্কুশভাবে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর প্রয়াস হিসেবেই বিবেচিত হবে। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ৯ মাসে ৪৬ ডিসি,২৯ এসপি এবং ১৩০জন ইউএনও বদলিসহ নির্বাচন কমিশনের ১০ শীর্ষ কর্মকর্তার পদায়ণ করেছে সরকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে ইতিমধ্যে একটি স্পষ্ট ধারনা পাওয়া গেলেও এই নির্বাচনে প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার কোন উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছেনা। বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর দেশের গণতন্ত্র একটি প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় পড়েছে। আমাদের মত দেশে গণতন্ত্র না থাকলে উন্নয়নের কোন লক্ষ্য অর্জনই সম্ভব নয়। এ কথা এখন দেশিবিদেশি নানা মহলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
সরকারের মেয়াদ এবং নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে, আগামী ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিপরীতমুখী রাজনৈতিক অবস্থান থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উপযোগি করে তোলবার কোন উদ্যোগ না থাকায় নির্বাচন নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি। উপরন্তু বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক-এগারো সরকারের দেয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে ও অনিশ্চিত করে তোলা হয়েছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে তোলা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবীর বিপরীতে সরকারী দল সর্বদাই নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনকালীণ দায়-দায়িত্বের কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কতটা নিরপেক্ষতা ও জনগনের আস্থা অর্জন করার মত ভাবমর্যাদায় উপনীত হতে পেরেছে? বিশেষত প্রধান নির্বাচন কমিশনের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় এবং সাম্প্রতিক সময়ের ভুমিকা ও কথাবার্তায় প্রমানীত হয়েছে, তিনিও সরকারের দলীয় আনুগত্যের উর্ধ্বে নন। নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠন থেকে শুরু করে দুর্বল ও দলীয় আনুগত্যের মানদন্ডে নির্বাচিত সিইসি’র ভ‚মিকা থেকে বিরোধিদল বা সাধারণ জনগণ একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে আশাবাদি হতে পারছেনা।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আরো প্রায় ১০ মাস বাকি। এ সময়ের মধ্যে দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সমঝোতার কোন সদিচ্ছার আলামত পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, সরকার আবারো বিএনপিকে বাইরে রেখে একটি একপাক্ষিক নির্বাচন করতে চায়। অথবা এমনভাবে নির্বাচন করতে চায় যেন তাদের বিজয় সহজ ও নিশ্চিত হয়। রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে সরকার নীলনকশা করছে, বিএনপির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ বেশ জোরেশোরেই তোলা হচ্ছে। বিশেষত: দলীয় প্রশাসনের উপর ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরিকল্পনা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আবারো অকার্যকর করে তোলতে পারে। এ ধরনের পদক্ষেপ জনপ্রশাসনের প্রতি জনগনের আস্থার সংকট বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে জনগনের আস্থাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে হলে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠ ভ‚মিকার কোন বিকল্প নাই। সব সময়ই নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে রদবদল ঘটতে দেখা যায়। বিগত সময়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় ব্যাপক হারে প্রশাসনিক রদবদল হতে দেখা গেছে। আগের সরকারের সাজানো প্রশাসনিক রোডম্যাপ অনেকাংশেই ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই একটি বিকল্প প্রস্তাবের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তা’ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে আগামী মাসগুলোতে আরো নতুন নতুন প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হতে পারে। তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর মূল কাজটি নির্বাচন কমিশনকেই করতে হবে। তবে নির্বাচনে রির্টানিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে যে সব মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন, তারা নিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালনে ব্যর্থ হলে তাদের বদলে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ণের পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন এবং সরকারী চাকরীজীবীরা জনগণের সেবক। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতনভাতা সুযোগ সুবিধাদি দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে তারা দলীয় আনুগত্যের বাইরে থাকার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ। বিগত সময়ে একপাক্ষিক ও ভোটারবিহিন নির্বাচনের কারণে দেশের গণতন্ত্র এখন বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। আগামীতে একটি গ্রগণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সরকার, সব রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্রসহ নাগরিক সমাজের নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক ভ‚মিকা ছাড়া সে ধরনের নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন