রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ওয়ালশের দেখা সেরা অধিনায়ক ইমরান খান

পতৌদি স্মারক বক্তৃতা প্রদান

| প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : একদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর হৃদয় জয় করেছেন নিজের গতি দিয়ে, অনেক ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছেন সেই ক্ষুরধার গতির ঝড়েই। গতির রাজা উসাইন বোল্টের মত তার এই স্বদেশিও নিজের স্বত্তাকে উদ্ভাসিত করেছেন এক-একটি উইকেট প্রাপ্তিতে। ৫১৯ টেস্ট উইকেট- এই টালিটা তাকে যতটা বিদ্ধংসী হিসেবে প্রমাণ করে, খেলোয়াড়ী জীবনে ঠিক ততটাই জেন্টলম্যান হিসেবেও প্রতীয়মান কোর্টনি ওয়ালশ। যার প্রমাণ আজ থেকে ৩১ বছর আগেই ক্রিকেট বিশ্বকে দিয়ে এসেছেন এই ক্যারিবীয়ান কিংবদন্তি।
১৯৮৭ বিশ্বকাপের গ্রæপ পর্যায়ের একটি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান সেলিম জাফর দ্রæত একটি রান নিতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে অনেকটাই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। বোলার ওয়ালশ রানআপের সময় থেমে জাফরকে ইচ্ছা করলেই রানআউট করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে জাফরকে ‘সতর্ক’ করে দেন ক্যারিবীয় পেসের রাজা। ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অথচ, রানআউটটা করলেই ফলাফল উল্টোটা হতো। ম্যাচটা না জেতায় সে বিশ্বকাপে গ্রæপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ওয়ালশের দল।
ঘটনাটি ‘ক্রিকেটীয় চেতনা’র উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ হিসেবেই ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসে। ওয়ালশকেও অমর করেছে। ৩১ বছর পর গতকাল কোলকাতায় ‘পতৌদি স্মারক বক্তৃতা’য় জানালেন, সেদিনের সেই রানআউটটি করেননি বলে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন প্রধান কোচের। ব্যাপারটা নিয়ে সত্যিকার অর্থে সেভাবে ভাবেনওনি ক্যারিবীয় তারকা। পুরো বিষয়টাকেই ফশফন দেখেছেন, ‘স্বাভাবিক ভদ্রতা’ হিসেবে। অথচ, ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী সেদিন ওয়ালশ যদি রানআউটটি করতেন তাকে বলার থাকত না কিছুই, ‘আমি যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছি, সেখানে আমাকে শেখানো হয়েছে কখনোই অন্যকে ঠকানো যাবে না। অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করা যাবে না। আমি সেদিন জাফরকে সতর্ক না করে আউট করতে চাইনি। ওটাকে আমার কাছে সাধারণ ভদ্রতার পরিপন্থী ব্যাপার বলে মনে হয়েছিল। অধিনায়ক ভিভ রিচার্ডসসহ গোটা দলের সমর্থন আমার প্রতি ছিল।’
তবে একটা বিষয়ে ওয়ালশ বেশ দুঃখই পেয়েছেন। গত যুব বিশ্বকাপে তার দেশেরই যুবা ক্রিকেটাররা এমন একটা পরিস্থিতিতে ওয়ালশকে অনুসরণ করেননি। ক্রিকেটীয় চেতনার ধার ধারেননি. ‘ব্যাপারটা দুঃখজনক। যুব বিশ্বকাপে এই ক্রিকেটীয় চেতনা তরুণ ক্রিকেটাররা ধরে রাখবে- এমনটা আশা করেছিলাম আমি।’
ভারতের সাবেক অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদিকে স্মরণ করেছেন ওয়ালশ। বলেছেন, তিনি ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটে স্বর্ণযুগের সূচনাকারী অধিনায়ক। তবে নিজে সেরা অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন ইমরান খানকেই। সেরা ক্যারিবীয় অধিনায়ক তার দৃষ্টিতে দুবারের বিশ্বকাপজয়ী ক্লাইভ লয়েড। অধিনায়ক প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে সেরা অধিনায়ক সে-ই যিনি কোনো দেশের ক্রিকেটকে বদলে দিতে পারেন। ইমরান খান আমার দৃষ্টিতে সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক। তিনি পাকিস্তানের ক্রিকেটকে বদলে দিয়েছিলেন। মনসুর আলী খান পতৌদির অধীনে খেলার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তিনি চার স্পিনার নিয়ে একটা রণকৌশল গড়ে তুলেছিলেন, সফল হয়েছিলেন। লয়েডের অধীনে আমি খেলেছি। আমার অভিষেক সিরিজটিই ছিল তার অধীনে। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম কত বড় অধিনায়ক তিনি। অধিনায়ককে ‘বিগ ব্রাদার’ হতে হয়। পতৌদি, লয়েড, ইমরান- সবাই এমনই ছিলেন।’
পতৌদি স্মারক বক্তৃতায় আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরপরই নাকি বাংলাদেশের ‘প্রধান কোচ’ হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে- ব্যাপারটি উচ্ছ¡সিত কণ্ঠেই বলেছেন ওয়ালশ, ‘টাইগার (পতৌদি) তুমি আমার জন্য সৌভাগ্যের প্রতীক। স্মারক বক্তৃতায় আসার সিদ্ধান্তটা নিতেই বাংলাদেশের প্রধান কোচ হিসেবে আমার নাম ঘোষণা হলো। আমি পদোন্নতি পেলাম।’ সেই সাথে শ্রীলঙ্কায় তার অধীনেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন ওয়ালশ, ‘আমি আশাবাদী। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ উজ্জীবিত পারফরম্যান্স করবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। উঠে আসছে অনেক ক্রিকেটার। যাদের হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বহুদূর।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন