পরিস্থিতি এখনও থমথমে
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার ব্যুরো : বাংলাদেশ-মিয়ানমার তমব্রæ সীমান্তে মিয়ানমারের রণ প্রস্তুতিতে সীমান্ত উদ্বেগ উত্তেজনা বাড়ছে। এমনকি জিরো পয়েন্টে ঢুকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ তাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বহি:প্রকাশ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। সীমান্ত অস্ত্রও সৈন্য সমাবশের ঘটনায় আবারো উদ্বেগ উত্তেজনা দেখা দিয়েছে সীমান্ত এলাকায়।
তারা বিজিবিকে উস্কানী দিতে বৃহ্স্পতিবার রাতে ফাঁকা গুলি করেছে জিরো পয়েন্টে। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তবাহিনী বিজিবি সদস্যরা। গতকাল জুমাবার বিকেলে দুপক্ষের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও ফলাফল শূন্য বলে জানা গেছে। এতে উত্তেজনা কমেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানের তমব্রæ সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হামলার চেষ্টা করে। এসময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করে ক্যাম্পে অবস্থারত রোহিঙ্গারা। হামলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে নোম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ হামিদুল হক জানান, রাত হলে জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা উদ্বেগ আতঙ্কে রাত কাটান মিয়ানমার বাহিনীর হিং¯্র আচরণে। কালকেও তারা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওই সীমান্তে ভারি অস্ত্রসহ সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেক দেরীতে তারা সাড়া দেয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতর ও স্থানীয় বিজিবির তরফ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আতঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্ঠা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে এই হামলার চেষ্টা চালানো হলো।
এছাড়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রæ সীমান্তের ওপারে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ করায় গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। এরই মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এটি একটি অপকৌশল বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষরা।
এদিকে সীমান্তে হঠাৎ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েনের প্রেক্ষাপটে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানানোর পর এক দিন পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। পতাকা বৈঠক হলেও ফলাফল শূন্য বল জানা গেছে।
বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রæ সীমান্তের পরিস্থিতি এখনও থমথমে। সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে গতকাল বিকাল সোয়া ৩টায় বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম ঢেকিবনিয়া পয়েন্টে পতাকা বৈঠক হয়েছে।
মঞ্জুরুল হাসান বলেন, “গতকাল সকালে মিয়ানমার সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারা শুক্রবার সময় দিয়েছে।”লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান আরো জানান, বিজিবিকে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে, সার্বিক নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
টেকনাফ সীমান্তে সতর্কবস্থায় বিজিবি
মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ : মিয়ানমারের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ঘটনায় বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ির পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কবস্থায় রয়েছেন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যরা। ওই এলাকার এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের পতাকা বৈঠক চলাকালে ও টেকনাফ সীমান্তে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবেলায় শক্ত ও সর্তকভাবে অবস্থান বিজিবি।
গতকাল দুপুরে টেকনাফ বিজিবির ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী, মিয়ানমারের যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জবাব দিতে শক্ত ও সর্তক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, টেকনাফ উপজেলা সীমান্তে হোয়াইক্যং, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলা, লেদা, নোয়াপাড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ সদর, নাজির পাড়া, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিজিবি সর্তকবস্থানে রয়েছে এবং নাফনদীতে মাছ ধরা ও চলাচলে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হোয়াইক্যং লম্বাবিল এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গভীর রাতে মিয়ানমারের ওপারে গুলি বর্ষণের শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। মাঝে মাঝে খুবই ভয়ে ভীতির মধ্যে রাত কাটে।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জোরালো হলে ভিন্ন কৌশল হিসেবে তারা এটি করছেন মনে করেন বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, সীমান্তে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ থেকে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। নাফনদী পেরিয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে যদি কোন রোহিঙ্গা ঢুক পড়ে তাদের মানবিক সহতায় দিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন