শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

আমরা যদি না বদলাই দেশ বদলাবে না

হারুন-আর-রশিদ | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নানা কিসিমের সরকার দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে দেশ শাসন করে চলছে। এখন ব্রিটিশ, মোগল ও পাঞ্জাবিরা দেশ শাসন করছে না। খাঁটি বাঙালি বলে পরিচিত দল হিসেবে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগই অনেক দিন ধরে বাংলাদেশের কা-ারি। এই ৪৫ বছরের বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর শাসনকালে দেশের লাভ-ক্ষতির হিসাব নির্ণয় করলে ক্ষতির অংকটিই বড় আকারের হবে বলে অনেকে স্বীকার করবেন। ৪৫ বছরে ৪৪টি বাজেটই ছিল ঘাটতি বাজেট। এর অর্থ দাঁড়ায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। বাজেটে এই ঘাটতির অংকটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আসন্ন ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার আরো একধাপ বাড়িয়ে তা ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগাম জানিয়েছেন। বিগত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) বাজেটে ঘাটতি ছিল ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ যে বাড়বে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ধরুন তিন লাখ কোটি টাকার ওপর বাজেটে যদি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে তাহলে এই ঘাটতি পূরণের জন্য জনগণের টাকার ওপর নির্ভর করতে হবে। আর জনগণের টাকা থাকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক এবং বিনিয়োগকৃত নানা সঞ্চয়পত্র খাতে।
বিনিয়োগকৃত সাধারণ মানুষের টাকার ওপর যে কয়টা টাকা সুদ বা লভ্যাংশ বাবদ পায় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে উচ্চমূল্যের বাজারে। বর্তমানে সব ব্যাংকেই স্থায়ী আমানতের ওপর সুদের হার এতটাই কমেছে, যা অতীতের দুই দশকের সময়কালকেও হার মানিয়েছে। সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপরও সুদের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে অদ্যাবধি শেয়ারবাজারে ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের চেয়েও কমেছে। বিগত চার বছর ধরে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ কমেছে। তাদের ঘোষিত ক্যাশ এবং স্টক ডিবিডেন্ডের শতাংশের হার নি¤œগতি। একমাত্র ওষুধ কোম্পানিগুলো ছাড়া পুঁজিবাজারে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বাস্থ্য ভালো যাচ্ছে না। এ জন্য অনেকেই পুঁজিবাজারকে জুয়ার এবং ফাঁকির বাজার হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বাংলাদেশে আর্থিক খাতের বিরাজমান অবস্থা অত্যন্ত নাজুক বলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা তাদের লেখায় এবং বিবৃতিতে বারবার বলে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে না নেয়ার কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। গণমাধ্যমগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে কোনো কোনো গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ভাইয়েরা ৮ থেকে ১০ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ২০১৬ আমি অর্থপাচার ও লুটপাটের মহোৎসব নিয়ে দুটি নিবন্ধ লিখেছি। মার্চ মাসে এসে দেখলাম স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই এ ধরনের ঘটনা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন ব্যাংকের গভর্নর। আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ হলো দেশের রাজকোষ। সেখানেই চলেছে বড় ধরনের ডাকাতি! আটশ কোটি টাকার ওপর লোপাটের রহস্যজনক কাহিনী দেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি লিড নিউজ লিখেছে বিদেশের খ্যাতিমান মিডিয়ায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই অর্থ চুরি হলেও পুরো বিষয়টি চোরদের (হ্যাকার) নজরদারিতে ছিল আরও আগ থেকেই। কথায় বলে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’Ñখোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেই হয়েছে মূল ষড়যন্ত্র। সেই সঙ্গে ছিল ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বের চরম গাফিলতি।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বলছে, রিজার্ভের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সুইফটের বার্তা আদান-প্রদানে যেসব কম্পিউটার নির্দিষ্ট করা, এ ক্ষেত্রে সুইফট নেটওয়ার্কটি ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কটিও সংযুক্ত ছিল। ফলে প্রথমে ইন্টারনেটের কোনো একটি পথ দিয়া থার্ডপার্টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সব ধরনের প্রতিরোধ ভেঙে সেখানে ঢুকে যায় এবং সেই নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে সুইফটে ঢুকে পড়ে। তৃতীয় পক্ষটি কীভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি সিস্টেমে ঢুকে পড়েছে সেটা এখনো জানা যায়নি। এ জন্য সাইবার বিশেষজ্ঞকে দিয়ে ফরেনসিক তদন্ত করানো হচ্ছে। এ তদন্ত শেষ হলেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল তা কিছুটা আঁচ করা যাবে।
আমরা মনে করি, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অর্থ লুণ্ঠনের রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হবে। ঘটনার ৪০ দিন পার হয়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক মামলা করল ১৫ মার্চ ২০১৬ মতিঝিল থানায়। তাদের উদাসীনতার কারণে সন্দেহটা আরো ঘনীভূত হয়। যা হোক বিলম্বে হলেও গভর্নর আতিউর রহমান ১৫ মার্চ ২০১৬ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন। ব্যর্থতার দায় স্বীকার করা শুভ লক্ষণ। কিন্তু সময়টা অতি দীর্ঘ হয়ে গেছে। ১৫ মার্চ বিকালে সরিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকে। অপসারণের তালিকায় নাম রয়েছে আরও চারজনের। তারা হলেন দুজন নির্বাহী পরিচালক ও দুজন মহাব্যবস্থাপক। এই চারজন ব্যক্তি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ (আইটি) এবং হিসাব বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। এর পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমকে সরানো হয়েছে। একই দিন নতুন গভর্নরও নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি হলেন সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ ফজলে কবির। তিনি সর্বশেষ সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন।
অর্থ লুণ্ঠনের অনেক কাহিনী থাকলেও হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম ঘটল। মিডিয়ায় এ কথা প্রচার করা হয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে উচ্চবিত্তের দুর্বৃত্তরা। ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর টাকা এভাবে বিশ্বে কোথাও লুণ্ঠন হয়নি। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে কিন্তু এই তথ্য প্রযুক্তিকেই সাইবার অপরাধীরা লুণ্ঠনের কাজে ব্যবহার করছে। সাধারণ মানুষ এর নাম দিয়েছে ডিজিটাল চুরি। তথ্য প্রযুক্তিকে রক্ষণাবেক্ষণ সুষ্ঠু পদ্ধতিতে কীভাবে করা যায় তার কোনো আইনি ব্যবস্থা না থাকার কারণে হ্যাকাররা বাংলাদেশে প্রতিদিন অশ্লীল কার্যকলাপসহ এটিএম বুথের টাকাও লুট করছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এসব ব্যাপারে যথেষ্ট তৎপর নয় বলেই জানা যায়। তথ্য প্রযুক্তি ছাড়াও ব্যাংকের লোকদের যোগসাজশে সোনালী ব্যাংকের দুটো শাখা-একটি পুরান ঢাকায়, অন্যটি ঢাকার বাইরে অবস্থিত সেখান থেকেও দীর্ঘ সুরঙ্গপথে কোটি টাকার অধিক অর্থ লুটপাট করে। পরে ডাকাতরা র‌্যাবের হাতে ধরাও পড়ে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে এমন কথা শোনা যায়নি। দেশের সরকারি ৫টি ব্যাংক ছাড়া প্রাইভেট ব্যাংকেও অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এসব কাজে চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে এমডি, ডিএমডি, জিএম, ডিজিএম পর্যায়ের লোকজন জড়িত বলে পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে বিশ্বে নাকি এখন এক নম্বরে আছে। সোনালী, বেসিক, অগ্রণী, রূপালী, জনতা ব্যাংকের দুর্নীতির খবর প্রায় সময় পত্রিকার পাতা উল্টালে চোখে পড়ে। দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো দুর্নীতির ঢালাও প্রচার থেকে কিছুটা নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে বলে আমরা মনে করি। দেশে সুশাসনের অভাব ঘটলে এবং মেধাহীন অযোগ্য অসৎ লোকদের উচ্চ পদে সমাসীন করলে দুর্নীতির ডালপালা আরো ছড়াবে।
কিছু দিন আগে পুরান ঢাকায় গিয়ে পথ চলতে কষ্ট হচ্ছিল। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে যখন আমার অসুবিধা হচ্ছে তখন একজন পুলিশ সার্জনকে বললাম ভাই এভাবে আর কতদিন আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্ট করতে হবে। ওনার বক্তব্য শুনে আমার চক্ষু স্থির হয়ে গেল। অনেকটা হতভম্ব হয়ে গেলাম। আপনাদের মতো বয়োবৃদ্ধ মানুষদের এখন রাস্তায় বের হওয়া ঠিক নয়। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। ভাবলাম পুলিশরাও সচেতন, তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার উপায় নেই।
দুর্নীতি এখন দেশের আনাচে-কানাচে অনুপ্রবেশ করেছে। অর্থ রোজগার করার একটা অবৈধ পথ খুঁজে বের করতেই হবে, বৈধ পথে টাকা রোজগার করা ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন কঠিন হয়ে পড়েছেÑএটাই যেন সবার ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাকরি যেন এখন সোনার হরিণ। দলবাজি যারা করে তারাও মোটা অংকের টাকা ছাড়া এখন চাকরি পায় না। চাকরি এবং ব্যবসার নানা বিজ্ঞপ্তিসহ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাও বের হয়। সেখানেও শোনা যায়, নানা তেলেসমাতি ঘটনার কথা। বাংলাদেশের মেধাবী লোকরা বিদেশে আজ প্রচুর সুনাম অর্জন করছে। অথচ তারা দেশে মূল্যহীন। আজ নানা রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু এ কথাটা স্বাধীনের পরপরই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই সোজাসাপ্টাভাবে উত্তর দিয়েছিলেনÑ ‘মানুষ পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’। একদিন বঙ্গবন্ধুর চোখে এদেশের মানুষ ছিল সোনার মানুষ। ক্ষমতায় বসে টের পেলেন এবং বলে ফেললেন, ‘আমি বিদেশ থেকে টাকা ভিক্ষা করে আনি আর লুটেরার দল সব লুটেপুটে খাচ্ছে’। বাস্তব বড়ই কঠিন বঙ্গবন্ধু সেটা বুঝতে পেরেছিলেন ক্ষমতার আসনে বসে।
চারজন বিশিষ্ট ছাত্রনেতার কথা মনে পড়ল। ছোট বয়সে আমরা চার খলিফা বলতাম। তাদের সবার বয়স বহু আগেই ষাট অতিক্রম করেছে। বেঁচে আছেন তিনজন এখনো। আমরা অধিকাংশ মানুষ তাদের চিনি। দেশের জন্য তাদের অনেক অবদান রয়েছে। চার খলিফাই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। যদিও বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলটির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। কেন তারা প্রিয় দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছেন তা উপলব্ধি করা সম্ভব। ১৪ মার্চ ২০১৬ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠনো এক বিবৃতিতে একসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আ স ম আবদুর রব বলেছেন, চরম অনিশ্চয়তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে প্রিয় মাত্রভূমি বাংলাদেশ। এরকম দুঃসময় আর কখনো হয়নি। তিনি বলেছেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, শেয়ারবাজার থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে শেয়ারবাজার। এসব বিষয় মানুষ এত দিনে ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি খোদ রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিম্মা থেকে আটশ’ কোটি টাকা চুরি হয়ে যাওয়ায় মানুষের উদ্বেগকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কার্গো বিমান যোগাযোগ বাতিল হওয়া তাদের দেশের এক কোম্পানির হাতে আমাদের বিমান বন্দরের নিরাপত্তার ভার তুলে দিতে হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়েছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে ১৫ লাখ শ্রমিক পাঠানোর চুক্তিও বাতিল হয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শান্তি মিশনে এক সময়ে সুনামের অধিকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থান নিয়ে বহু জায়গায় প্রশ্ন উঠেছে। অথচ সরকার এসব বিষয়ে কার্যকর কূটনৈতিক সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এই ছাত্রনেতা আরো বলেছেন সরকারকে ইঙ্গিত করে, দেশ তাহলে আজ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে। আমরা কি সারা দুনিয়া থেকে বিছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে লাখো মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে উন্নয়নের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তার সব কিছুই কি শুধু ক্ষমতার স্বার্থে বিলীন হয়ে যাবে?
সম্প্রতি মিডিয়ায় উঠেছে ২০০৩-২০১৫ পর্যন্ত এক যুগে কমপক্ষে ৩ হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় বাড়ির জন্য দরখাস্ত করেছেন। আবেদনের শর্ত ৫ লাখ রিঙ্গিত বা এক কোটি ৬ লাখ টাকা মালয়েশিয়ার ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে হবে। মাসিক আয় হতে হবে নি¤œতম ২ লাখ ১২ হাজার টাকা। এই আয়ের লোকের অভাব নেই বাংলাদেশে। একটা কবিতার প্রথম লাইনের কথা মনে পড়লÑ স্বাদের লাউ বানাইছে আমারে বৈরাগী। ’৭১-এর রক্ত¯œাত স্বাদের বাংলাদেশ শুধু বিবৃতি ও অনুষ্ঠাননির্ভর শব্দ চয়নে পরিণত হয়েছে। সবকিছুই মেকী অর্থাৎ এ দেশ ছাড়তে পারলেই বাঁচি। এ জন্য প্রয়োজন অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন। আর সেই উপার্জনের টাকা দিয়ে মালয়েশিয়া বা ইউরোপ, আমেরিকায় স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার কামনা এখন অনেকেরই। বাংলাদেশটাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসলে কখনই আমরা অবৈধ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতাম না। ‘দেশপ্রেম’ এখন একটা কবিতার শব্দ। অনেকের মুখেই শুনি দেশের জন্য নয়, নিজের স্বার্থ চরিতার্থেই দেশ স্বাধীন করেছি। কথাটা একেবারেই অযৌক্তিক বলা যাবে না। কারণ বাস্তব সে কথাই সম্মতি দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ৪০ বছর আগে একই কথা বলেছিলেন।
য় লেখক : গ্রন্থকার, গবেষক ও কলামিস্ট
harunrashidar@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন