ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশফাক আল রাফী শাওনকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। তবে শাওনের পরিবার এ হত্যাকান্ডের বিচারের জন্য আইনের দ্বারস্থ না হওয়ায় খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘ধামাচাপা’ পড়তে যাওয়া এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীই।
পুলিশের ভাষ্যে, শাওনের পরিবারের অনীহার কারণেই ঘটনার পর পরই ৩ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে আটক করা হলেও পরবর্তীতে ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, গত ২৫ ফেব্রæয়ারি দিনগত মধ্যরাতে নগরীর মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোড এলাকায় রহস্যজনকভাবে গুলিবিদ্ধ হন ছাত্রলীগ নেতা শাওন। পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ০৮ মার্চ দুপুরে মারা যান শাওন।
সূত্র মতে, এ ঘটনার প্রথম দিকে শাওন নিজের গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে রহস্যজট খুলতে থাকে। ঘটনার পর পরই পুলিশ বেশ কিছু বিষয় সামনে নিয়ে শাওনের তিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সঞ্জয় দত্ত, ছাত্রলীগ নেতা পিচ্চি আরিফ ও হিমেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। কিন্তু শাওনের পরিবার থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ না করায় তাদেরকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে শাওনের প্রথম জানাজায় নিজের বক্তৃতায় বাবা, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ.কুদ্দুস বলেন, ‘হে আল্লাহ যারা শাওনের এ অবস্থা করেছে তাদেরকে তুমি জনগনের সম্মুখে ধ্বংস করে দিও।’
গতকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষীপুর এলাকায় দাফনের আগেও একই রকম কথা বলেন শাওনের বাবা। জানাজার আগে ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্তসহ বেশিরভাগ বক্তাই এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম জানান, শাওন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। আমরা জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটকও করেছিলাম। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় ৫৪ ধারায় তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, আমরা শাওনের বাবা-মা ও পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের সাড়া পাইনি। গত বৃহস্পতিবার (০৮ মার্চ) জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে কোন আইনগত পদক্ষেপ নেবেন না বলে আমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শাওনের বাবা। ফলে ময়না তদন্ত ছাড়াই তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
ওসি জানান, শাওনের পরিবার অভিযোগ করলে কোন কিলারকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।’
এ বিষয়ে শাওনের বাবা জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ.কুদ্দুস বলেন, আমি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহ’র কাছে বিচার চেয়েছি।’
জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ার আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, মূলত আমি পোস্টমর্টেম ছাড়াই আমার ছেলের দাফন সম্পন্ন করতে এ আবেদন করেছি।’
পুলিশের হাতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নেই
অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ৬৫ কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরা নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হলেও ময়মনসিংহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। এজন্য বাতির নিচে অন্ধকার। ফলে আলোচিত শাওন হত্যাকান্ডের কোন ফুটেজ পুলিশের হাতে নেই। অথচ এখানে সিসি ক্যামেরা থাকলে শাওন হত্যাকান্ডের খুনিদের সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি জানান, ময়মনসিংহ নগরীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন