শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

আইন কি সব সময় নিজস্ব গতিতে চলে?

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষ এবং সচেতন নাগরিকদের মধ্যে এ ধারণা জন্মায়, তিনি সহজে জেল থেকে বের হতে পারবেন না। বিএনপির সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ ধারণা পরিলক্ষিত হয়েছে। মানুষের এ পারসেপশন বা ধারণা জন্ম নেয়ার কারণ আইনের স্বাভাবিক গতির জন্য নয়, বরং তারা মনে করছে, সরকারের পরোক্ষ প্রভাবের কারণে খালেদা জিয়ার জেল থেকে ছাড়া পাওয়া কঠিন হবে। আবার আইনের মাধ্যমে এক মামলায় তার জামিন হলেও অন্যান্য মামলায় একের পর এক তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আটকে রাখা হবে। মানুষের এ ধারণা যে অমূলক নয়, তা ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সাজা পাওয়া মামলার জামিন নিয়ে আইনের যে মারপ্যাঁচ শুরু হয় এবং হাইকোর্টে জামিন পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারি পক্ষ যেভাবে আইনের সব ফাঁকফোকর বন্ধ করার ক্ষেত্রে তৎপর, তাতে বোঝা যায় খালেদা জিয়ার জেল থেকে বের হওয়ার পথটি খুবই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। কবে ছাড়া পাবেন, তা অনিশ্চিত। ইতোমধ্যে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া ৪ মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছে। এ প্রেক্ষিতে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা কাজ করছে, আইন সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইন পুরোপুরি অন্ধ নয়, কারো কারো ক্ষেত্রে চোখ মেলেও তাকায়। লোক বুঝে গতিপ্রাপ্ত বা ধীর হয়। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে খালেদা জিয়ার জামিনের ক্ষেত্রে আইনের যেসব বিধি-বিধান মেনে চলা হচ্ছে, তাতে মনে হতে পারে আইন খুবই গতিপ্রাপ্ত এবং তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ হচ্ছে। সরকার যতই অস্বীকার করুক, সে আদালতের উপর কোনো প্রভাব বিস্তার করছে না বললেও সাধারণ মানুষের কাছে তা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। তারা ইতোমধ্যে দেখেছে, সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও মন্ত্রীত্ব ও এমপিত্ব করে যাচ্ছেন। অবশ্যই আইন তাদের এ অধিকার দিয়েছে। অন্যদিকে তুলনামূলক কম শাস্তি পাওয়া এবং হাইকোর্টের রায়ে জামিন হওয়ার পরও খালেদা জিয়ার জামিন পেতে কতই না আইনি মারপ্যাঁচে পড়তে হচ্ছে। এটাও আইনের মধ্যেই হচ্ছে। তারপরও মানুষের মধ্যে এ ধারণা কাজ করছে, আইনি কাঠামোতে থেকেও আইনের সমপ্রয়োগ কোথায় যেন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ কথাও সত্য, মানুষই আইন তৈরি করে আবার মানুষই তা প্রয়োগ করে। আবার আইন যারা প্রয়োগ করে, তারাও মানুষ। তাদের বিবেক এবং বোধ-বিবেচনার উপরও আইনের প্রয়োগের তারতম্য হতে পারে। বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আদালত মানুষের বিবেক। কোনো কিছুর প্রভাব ব্যতিরেকে নির্মোহভাবে যদি তার বিবেক পরিচালিত হয়, তবে সঠিক বিচার পাওয়া সম্ভব। আর যিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন, তার বোধ-বুদ্ধি, বিবেক ও বিচক্ষণতা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি শানিত। এক্ষেত্রে যখন কোনো ব্যত্যয় ঘটে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক হয়।
দুই.
হাইকোর্ট বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার পর আইনমন্ত্রী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এতে প্রমাণিত হয়েছে, বিচার বিভাগের ওপর সরকারের কোনো হাত নেই। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকও একই কথা বলেছেন। দেখা গেল, তার দুই দিন পর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করেছেন। জামিন স্থগিত হওয়ার পর আইনমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তা হলে প্রশ্ন এসে যায়, খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার পর আদালতের ওপর সরকারের হাত নেই, এমন বক্তব্য দেয়া কি আইনমন্ত্রীর উচিত হয়েছে? তিনি এ প্রতিক্রিয়া না দিলেও পারতেন। অন্যদিকে জামিন স্থগিত হওয়ার পর সাধারণ মানুষ যদি এটা ধরে নেয়, আদালতের ওপর সরকারের প্রভাব ছিল বলে জামিন স্থগিত হয়েছে, তবে তাদের কি দোষ দেয়া যাবে? কাজেই বক্তব্য দেয়ার সময় মন্ত্রীদের এমন কিছু বলা উচিত নয়, যাতে মানুষের মধ্যে দ্বিধা-দ্ব›দ্ব ও সংশয়ের সৃষ্টি করে। সাধারণ মানুষ যদি ধরে নেয়, এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’-এ প্রবচনের প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং এ থেকে যদি তারা বুঝে নেয়, পরোক্ষভাবে আদালতের ওপর সরকারের প্রভাব রয়েছে, তবে তাদের এ বুঝ উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সম্প্রতি স্যাটেলাইট টেলিভিশন বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনা বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত আইনবিদ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয় বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে এক মামলায় জামিন দিয়ে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানোর বিষয়টি আইয়ুব খানের স্বৈরশাসনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে এরকম করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সেই মামলায় আমিও উকিল ছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে এক মামলায় জামিন দিলে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতো। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও এরকম দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের আচরণ তো স্বৈরশাসকের মতো। এখন তো আইয়ুব খানের শাসনামল নেই, তাহলে কেন এমন হবে?’ তার এ কথার মধ্য দিয়ে এটাই প্রতীয়মান হয়, সরকার যতই বলুক বিচার বিভাগের উপর তার প্রভাব নেই, সাধারণ মানুষ তা মনে করে না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের দ্বারাও আদালত প্রভাবিত হয়। আর বিচার বিভাগ যেহেতু সরকার থেকে দূরে নয়, তাই তাতে সরকারের প্রভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। বিচারকদের নিয়োগ সরকারই দেয়। আর আমাদের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি তাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতাসীন দল তার মনোভাবাসম্পন্ন লোকদেরই নিয়োগ দিয়ে থাকে। সব আমলেই তা দেখা গেছে। আর বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সময় সর্বত্র দলীয়করণের অভিযোগ বহুলভাবে প্রচারিত। যারাই সরকারের সাথে দ্বিমত পোষণ করছে, তাদের চরমভাবে হেনস্থা হতেও দেখা গেছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে যেভাবে অপমান ও অপদস্ত হয়ে বিদায় নিতে হয়েছে, তা যে সরকারের সাথে বিরোধের কারণেই হয়েছে, তা সকলেরই জানা। তার বিদায়ের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়র বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমন নজির আগে থাকলেও তার ধারাবাহিকতা সরকার ধরে রেখেছে। এ নিয়ে আইনজ্ঞরা অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দোষের কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট। সাধারণত তিনি সরকারি দলের লোক হন এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। এ বিবেচনায় প্রেসিডেন্টের সরকার দলীয় মনোভাবের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে বিচারবিভাগে সরকারও ও তার প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেহেতু দলীয় প্রভাব উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে স্বয়ংক্রিয় বা স্বপ্রণোদিত বা স্বতন্ত্রভাবে রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গের কাজ করার মতো পরিবেশ ও পরিস্থিতি আমাদের দেশে সৃষ্টি হয়নি, তাই পাবলিক পারসেপশন বা সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ ধারণা কাজ করে যে আদালতসহ সবক্ষেত্রেই সরকারের প্রভাব রয়েছে। সরকারের বেশ কয়েক জন মন্ত্রী-এমপি যে সাজা পেয়েও জামিনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছেন, তা কখনোই সম্ভব হতো না যদি আদালতে সরকার পক্ষ খালেদা জিয়ার মামলার মতো তাদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিত। কাজেই, আইন যে সবসময় সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ হয়, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার ১৫ দিন আগে সরকারের অংশীদার একজন মন্ত্রী নির্দিষ্ট করে বলেছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে এবং সেখানে তার নেতার মতোই কাটাতে হবে। তিনি এ কথা বলেছিলেন, ২২ জানুয়ারি। আর খালেদা জিয়ার রায় দেয়া হয় ৮ ফেব্রæয়ারি। দেখা যায়, তার কথা অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা আগাম বলতে থাকেন, খালেদা জিয়কে জেল যেতে হবে। তারও আগে থেকে তারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে একাধিকবার বলেছেন, খালোদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিদায় করতে হবে। কাজেই, আদালত যে সরকারের প্রভাবমুক্ত নয়, সাধারণ মানুষের এ ধারণা কেমন করে বদলাবে যখন তারা দেখে, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তাদের এসব বক্তব্য মিলে যাচ্ছে?
তিন.
খালেদা জিয়ার জেল এবং জামিন নিয়ে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনা গেছে। অনেক কথার মধ্যে একটি হচ্ছে, সরকারের তরফ থেকে নাকি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তাকে জামিন দেয়া হবে এবং তিনি জামিন পেয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। নির্বাচনের আগে দেশে ফিরতে পারবেন না। এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিবকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষুদ্ধস্বরে বলেন, এসব কথা আপনারা কোথায় পান? এ ধরনের সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে আইনি লড়াই ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে তাকে নিয়েই সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো। অনেকের মধ্যে এ ধারণা জন্মেছে, সরকারের সাথে যতক্ষণ না বেগম জিয়ার সমঝোতা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি জেল থেকে বের হতে পারবেন না। অনেকেই বলছেন, ওয়ান-ইলেভেন সরকার যা করতে পারেনি, তা এ সরকার তাই করে দেখিয়ে দিতে চাইছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময় বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়। তিনি দৃঢ়তার সাথে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বলেছিলেন, দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না। মরলে এ দেশেই মরবো। তার এই দৃঢ়তার কাছে ওয়ান-ইলেভেন সরকার হার মেনেছিল। বেগম খালেদা জিয়ার যে আপসহীন চরিত্র, তাতে এ ধরনের সমঝোতায় তিনি রাজী হবেন এমনটা পর্যবেক্ষকরা মনে করেন না। বিএনপির আট সদস্যের যে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল জেলখানায় খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তারা সক্ষাৎ শেষে বের হয়ে বলেছেন, তিনি অত্যন্ত দৃঢ় মনোবল নিয়ে আছেন। তার এই দৃঢ়চেতা মনোবলের কথা বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, জীবনের শেষ বেলায় এসে তিনি কোনো আপস করবেন বলে মনে হয় না। তিনি ফিরে গিয়েছেন স্বৈরশাসকের সময়কার আপসহীন নেতৃত্বের মধ্যে। তিনি তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এবং দেশের ইতিহাসে সংসদে একবার সর্ববৃহৎ বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ দুইবার বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি ওয়ান-ইলেভেনে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত হওয়ার মাইনাস ফর্মূলায় পড়েছিলেন। অর্থাৎ সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাকে বারবার কঠিন সংকটকাল অতিক্রম করতে হয়েছে। তবে এবারের মতো এতো কঠিনতর পরিস্থিতিতে তিনি কখনো পড়েননি। তিনি যে এই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন তা হয়তো আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যবান এবং তার মতো ভাগ্যবান তিনি নন। এ থেকে তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, সরকার আইনি প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হলেও তাকে সাজা দেবে এবং তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হবে। তার এই ধারণা ভুল হয়নি। পাবলিক পারসেপশনও তার এই ধারণার বাইরে যায়নি। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া ভাল করেই জানতেন তাকে সাজা দেয়া হবে, তাই তিনি সরকারের সাথে অযৌক্তিক কোনো আপসরফায় যাবেন, আপাতত এমন মনে করার কারণ নেই।
চার.
আইন নিজস্ব গতিতে চলতে গিয়ে কখনো কখনো যে হোঁচট খায় বা প্রভাব বিস্তারের কবলে পড়ে, তা গত ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করা নিয়ে তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের আহাজারি থেকে কিছুটা হলেও বোঝা যায়। তিনি খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটি নজিরবিহীন এবং অনভিপ্রেত আদেশ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে আদেশটি দিলেন, এতে আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি। তিনি বলেন, আমরা নজিরবিহীন বলতে বাধ্য হচ্ছি এই কারণে যে, অতীতে এ ধরনের আদেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালত দেননি। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, নিম্ন আদালতগুলো এই সরকার গ্রাস করে ফেলেছে। উচ্চ আদালতকেও মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে গ্রাস করার চেষ্টা করছে। আদালতকে এই জন্য আমি বলেছি, মাননীয় আদালত, দেশের মানুষ আপনাদের কাছে বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে আসে। তারা আশাহত হলে এই বিচারপ্রার্থী মানুষের আস্থা থাকবে না। অতীতে কখনো আপনারা (আদালত) ইন্টারফেয়ার করেননি। হে মাননীয় আদালত, হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি কান্ট্রি। সারা দেশের মানুষ আসে এখানে বিচার পাওয়ার জন্য। বিচারপ্রার্থীরা মানুষেরা জানতে চায় কী আদেশ দিলেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিলেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিভ গ্র্যান্ট করলেন। সেটা তো কেউ জানল না। আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমার জানার অধিকার আছে। সমিতির সদস্যদের জানার অধিকার আছে। তখন আদালত বললেন, আমরা এই সমস্ত কনভিকশন ইত্যাদি ইত্যাদি কনসিডার করে অর্ডার দিলাম। তখন আমি বললাম, আমরা তো মেরিটে এখানে আর্গুমেন্ট করি নাই। তার কোনো সদুত্তর মাননীয় আদালত আমাদের দেননি। আমি আদালতকে এটাও বলেছি, আপনারা যে শর্ট সেন্টেন্সে বেইল দিয়েছেন, তার কী হবে! আদালত সেটির কোনো আদেশ দেননি। দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, আমরা মর্মাহত, আমরা ব্যথিত। আমরা মনে করি, এটি একটি নজিরবিহীন আদেশ হয়েছে।’ পাঠক, আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করা নিয়ে যে আদেশ দিয়েছেন, তার আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের এই প্রতিক্রিয়া থেকে কী বোঝা যায়, তা আপনারা ভাল করেই বুঝতে পারছেন। এ নিয়ে আর বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
নাসির ২৩ মার্চ, ২০১৮, ৩:৪৫ এএম says : 0
আইন আদালত নিয়ে কথা বলতে তো আবার সমস্যা। তাই সবাই চুপ।
Total Reply(0)
গনতন্ত্র ২৩ মার্চ, ২০১৮, ৯:৪৬ এএম says : 0
জনগন বলছেন, আইনের কোন গতি নাই, মানুষের বিবেকই আইনের গতি ৷যেমন সৌদিআরবে চুরি করলে কব্জি কাটে অথচ ৩০০ জনকে র্দুনীতির দায়ে আটকানো হলো এবং জরিমানা দিয়ে মুক্ত ৷ আইন কাল ও পাত্র বেদে রং দেখায় ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন