শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

টিউমারের যন্ত্রণায় চলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে পিতৃহারা কাওসার

বরিশাল থেকে নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দ্বীপ জেলা ভোলার দৌলতখানের পিতৃহারা শিশু কাওসার পেটের বিশাল টিউমার-এর যন্ত্রনা নিয়ে তার শরীরকে টেনে নিতে না পারলেও ভিক্ষাই তার পেশায় পরিনত হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তিই যেন তার নিয়তি। নদী ভাঙনে সর্বস্বহারা কাওসার ও তার বড়ভাই নাজিম-এর জন্য হতাশাই এখন সম্বল। পিতৃহারা হবার পরে ভয়াল মেঘনা তাদের মাথা গোজার ঠাইটুকুও কেড়ে নিয়েছে। নিয়তির পরিহাসে কাওসারও জটিল রোগে আক্রান্ত। কিন্তু চিকৎসার খরচও চলছে না। বড়ভাই নাজিম সবজি বিক্রী করে যা আয় করে তা দিয়ে মা ও ছোট ভাই-এর ভরন পোষনের পরে আর চিকিৎসা চলছে না। তাই টিউমার ক্রমশ বড় হবার পাশাপাশি ব্যাথাও বাড়ছে। কিন্তু ক্ষুধার অন্ন যোগানোই যেখান সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে জটিল রোগের চিকিৎসার ব্যায় আসবে কোথা থেকে ?
জন্মগতভাব পেটের বড় ধরনের জটিলতায় ভুগছিল কাওসার। ছোট সময় তার পিতা বশির ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দুদফায় অস্ত্রপচার করালেও বয়স বাড়ার সাথে তার পেট ক্রমশ বড়ই হতে থাকে। চিকিৎসকগন অস্ত্রপচার পরবর্তিকালে নিয়মিত পর্যবেক্ষনে হাসপাতালে যাবার পরামর্শ দিলেও পিতার মৃত্যুর পরে তা আর সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে মেঘনা তাদের মাথা গোজার ঠাইটুকুও কেড়ে নিয়েছে।
বয়স বাড়ছে কাওসারের। এখন ৯বছর বয়সে তার পেটের ব্যসার্ধ ৪৬ইঞ্চিরও বেশী। অথচ পুরো শরীর ক্ষীনকায় হলেও বিশাল ভাড়ী পেট মনে হয় সারা দেহের রক্ত শুষে নিচ্ছে। এভাড়ী পেট নিয়ে চলা ফেরাও কষ্ট হচ্ছে কাওসারের। কিন্তু সে পেটের দায়েই তাকে মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
প্রায়ই কাওসারকে তার ভাই বরিশাল মহানগরীতে রেখে যায় ভিক্ষা করতে। দিনভর ভিক্ষা করে সন্ধার লঞ্চে ফিরে যায় ভোলাতে। প্রায়ই সে বরিশাল মহানগরীর বিভিন্নস্থানে ভিক্ষা করে। তবে হাটতে কষ্ট হওয়ায় এক যায়গায়
দাড়িয়ে বা বসে থেকে ভিক্ষা করে সে। নগরীর পূর্ব বগুড়া রোডের মুখে ইসলামী ব্যাংকের নিচতলায়ও কাওসার হাত পাতছে প্রায়ই। চারতলা ভবনটিতে ওঠা নামার পথে অনেকেই তার হাতে কিছু সাহায্য তুলে দেয়। কিন্তু এ অর্থে তার চিকিৎসা সম্ভব না হলেও কয়েকদিনের খাবার যোগাড় করে থাকে। কাওসারের সাথে আলাপ করে মনে হচ্ছিল চিকিৎসার চেয়েও ক্ষুধা নিবারনই তার কাছে এখন মূখ্য। অথচ বিশাল পেট বয়ে নিয়ে চলার শক্তিও ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে সে। সাথে তলপেটের ব্যাথায়ও যথেষ্ঠ কষ্ট পাচ্ছে। নয় বছর বয়সেও কাওসারের কথায় অনেটাই যড়তা রয়েছে। শারিরিক দূর্বলতায় কথা অনেকটাই অস্পষ্ট।
বরিশাল মহানগরীর প্রানকেন্দ্র সদর রোড ও বগুড়া রোড এলাকায় দাড়িয়ে ভিক্ষাবত্তি করে বিকেলের শেষ লঞ্চেই কাওসার ভোলায় ফিরে যায়। কিন্তু ভিক্ষায় পেটের ক্ষুধার সাময়িক নিরশন হলেও তার চিকিৎসার কি হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি এ শিশুটি। বড়ভাই নাজিম-এর সেল ফোন না থাকায় তার সাথেও কথা বলা সম্ভব হয়নি এ প্রতিবেদকের। ‘শিশু কাওসারের চিকিৎসায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সমাজ সেবা অধিদপ্তরসহ কোন বেসরকারী সংগঠন উদ্যোগ গ্রহন করবে কি ?’ এমন প্রশ্ন বরিশাল মহানগরীর অনেকেরই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন