বাংলাদেশের এখনকার ক্ষুদে ফুটবলাররাই আগামীতে দেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন ও ভারতে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হওয়া বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলারদের নিয়ে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, একদিন এই তারকারাই বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আমরা থাকলাম।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েরা সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও ভারতে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হয়েছে। এসব খেলোয়াড় এখান থেকেই উঠে এসেছে। যারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন। আমার আশা, আজকের খুদে খেলোয়াড়রা আগামীতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। সরকার খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চাকে গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।
বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজে অত্যন্ত আনন্দিত। খেলাও দেখলাম। আর, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পূর্ব উজানটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২-১ গোলে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। আর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপের ফাইনালে ঝিনাইদহের শৈলকুপার দোহার সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয় টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে ময়মনসিংহের নান্দাইলের পাঁচরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিরোপা জিতে। ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৬১১ জন ছাত্রী এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ১০ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৬ জন ছাত্র অংশগ্রহণ করে।
দুই চ্যাম্পিয়ন দল পেয়েছে ট্রফি ও এক লাখ টাকা। চ্যাম্পিয়ন দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়রা পেয়েছেন সোনার পদক ও ১০ হাজার টাকা। রানার্স-আপ দল দুটি পেয়েছে ট্রফি ও ৭৫ হাজার টাকা। এই দু’দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়রা একটি রূপার পদক ও সাত হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছে। তৃতীয় স্থান অধিকারী দল দুটি পেয়েছে ট্রফি ও ৫০ হাজার টাকা। এই দু’দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়রা একটি করে ব্রোঞ্জ পদক ও পাঁচ হাজার টাকা পেয়েছে।
দুই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এই দুই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী সব খেলোয়াড়কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এত বিপুল সংখ্যক খেলোয়াড় আর কখনও যোগ দেয়নি। খলাধূলা আর সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শক্তি গড়ে উঠবে, শৃঙ্খলাবোধ শেখা হবে, অধ্যবসায় আসবে এবং দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, আশা করি, যারা ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলে উঠে আসছে; তারা আগামীদিনে বাংলাদেশকে অনেকদূর নিয়ে যাবে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স-আপ দলগুলোকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আশা করি, এখান থেকেই একদিন এমন খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে-যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহŸান প্রধানমন্ত্রীর
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি পুনরায় আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু-এসইএআরও) আঞ্চলিক প্রধান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহŸান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানবতার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চাপ অবশ্যই রাখতে হবে। তিনি বলেন, এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে।
প্রেস সচিব জানান, শেখ হাসিনা হু-এসইএআরও’র আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিংকে বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্যান্য সম্পদ ছাড়াও আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা ও সেবার কাজে বাংলাদেশের ২৮ হাজারের মতো লোকবল দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।
পুনম ক্ষেত্রপালকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক, যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন ও পরিচয়পত্র প্রদান করেছে, যাতে তাদের প্রত্যাবাসন কাজ সহজ হয়।
ক্ষেত্রপাল সিং রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে বিশাল এক কাজ করেছে। তিনি টিকাদান ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতারও আশ্বাস দেন।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সংখ্যাকে ভুটানের মোট জনসংখ্যারও বেশি বলে উল্লেখ করে ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, তাদের ব্যবস্থাপনার কাজটি একটি ‘বিশালকায় কাজ’। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে হু’র কর্মকর্তাদের ভয়ও হচ্ছে যে, রোহিঙ্গারা আসন্ন বর্ষায় পানিবাহিত রোগ ও স্যানিটেশন সমস্যাসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকটে পড়বে। তিনি স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানের চলমান স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে অটিজম প্রসঙ্গও আলোচনায় আসে এবং বিশ্ব জুড়ে অটিজমের ওপর সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডারসের চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এ জাতীয় উদ্যোগেরও স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল হক খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনাকে ‘মেডেল অব ডিসটিংকশন’ সম্মানে ভূষিত করেছে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল
লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল দরিদ্র, অসহায়, বিশেষ করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সেবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মেডেল অব ডিসটিংকশনে’ ভূষিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, সফররত লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ড. নরেশ আগরওয়াল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই মেডেলে ভূষিত করেন।
লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট মানবিক গুণাবলী বিশেষ করে মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় আপনার এই গুণের জন্য ইতোমধ্যে আপনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপন্ন মানবতার সেবা হচ্ছে তার দায়িত্ব। আপনারা (লায়ন্স সদস্যরা) সাধারণ মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন, একইভাবে আমরা রাজনীতিবিদরা তাদের খাদ্য, বস্ত্র ও আশ্রয়সহ মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
ড. আগরওয়াল বলেন, তার সংস্থা বাংলাদেশে বিপন্ন মানবতার জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসা করে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট বলেন, এই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে।
লায়ন্স ক্লাব’স ইন্টারন্যাশনালের সাবেক পরিচালক শেখ কবির হোসেন, সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক এবং ক্লাবের গুডউইল এ্যাম্বাসেডর মোসলেম আলী খান, ক্লাবের বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিচালক কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশের কাউন্সিল চেয়ারপার্সন লায়ন্স এম কে বাসার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন