নাছিম উল আলম : কোডার’স ট্রাস্ট দেশের শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং শেখানোর উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে। দক্ষ ফ্রিল্যান্সারও তৈরি করছে কোডার’স ট্রাস্ট। আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে অন্তত এক লাখ দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানটি। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দক্ষ প্রশিক্ষকগণ বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাশাপশি অনলাইনেও প্রোগ্রামিং শিখিয়ে থাকে কোডার’স ট্রাস্ট। এক্ষেত্রে একজন মেন্টর সরাসরি অনলাইনে প্রোগ্রামিং শেখানোর কাজ করছেন। একা কিংবা গ্রæপভিত্তিক লাইভ ক্লাসের সুযোগ রয়েছে কোডার’স ট্রাস্টের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে। শিক্ষার্থীদের জন্য কোডার’স ট্রাস্টের অনলাইন সাপোর্ট প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় যেকোনো সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের উন্নতমানের শিক্ষা প্রাদানে ঢাকার বনানীতে তাদের কার্যক্রম আরো বড় পরিসরে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন কোডা’রস ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ফার্ডিনান্ড। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই আমাদের সবাইকে অবাক করে বনানীর কড়াইল বস্তির ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। কোনোরকম আর্থিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে বেঁধে রাখতে পারেনি। কোডার’স ট্রাস্ট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম মাস শেষে প্রায় ২০০টি প্রকল্প সম্পূর্ণ করেছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। তারা মোট দুই হাজার ৬৩০টি প্রকল্পে আবেদন করেছে।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য উৎসাহ দিতে সম্প্রতি বিডিং নামের একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কোডার’স ট্রাস্ট। প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণরত বর্তমান শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাবেক শিক্ষার্থীরাও এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এসব শিক্ষার্থীর মধ্য কড়াইল বস্তিতে বসবাসরত অনেক শিক্ষার্থীও ছিল। প্রতিষ্ঠানটির দাবি বিডিং প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা ১২ হাজার ডলারের কাজ পেয়েছে। এদের মধ্যে কড়াইল বস্তির অনেক ফ্রিল্যান্সারও রয়েছে। সম্প্রতি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটারভিত্তিক কোর্স শুরু করেছে কোডার’স ট্রাস্ট। ইউএনডিপি’র উদ্যোগে কোডার’স ট্রাস্ট প্রাথমিকভাবে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে এই কোর্স শুরু করে। এক্ষেত্রে গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। পরবর্তীতে এই কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল।
বাংলাদেশে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে কোডার’স ট্রাস্ট। এ সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ জনেরও বেশি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করেছে বলে দাবি করছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের লক্ষ্য আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে অন্তত এক লাখ দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা। তবে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের অনলাইন কাজ বিক্রি করতে পারবে না এখান থেকে শিখতেও পারবে না। এ জন্য খরচ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে কাজের সুযোগও তৈরি করে দেবে। যখন কোডার’স ট্রাস্টের ব্যবহারকারী আয় করবেন, তখন পূর্বের ঋণ শোধ করতে পারবেন।
কোডার’স ট্রাস্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান কায়ো ফেবিগ বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, গত এক বছরে দেশে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছেন তারা। বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা ও অনলাইন চাকরির বাজারের পরিচয় ঘটিয়ে জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ইয়ান কোডার’স ট্রাস্ট সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী শিক্ষার্থী আছেন যারা প্রোগ্রামিং দক্ষতাকে উন্নত করতে চান, তাদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান কোডার’স ট্রাস্ট। কোডার’স ট্রাস্টের সহযোগী হিসেবে রয়েছে মাইক্রোসফট, ব্যাংক এশিয়া ও ব্র্যাক।
কোডার’স ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান প্রধান নির্বাহী ফার্ডিনান্ড কেয়ারলেফ ড্যানিশ আর্মির একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা। ইরাকে একটি রিকভারি প্রজেক্টে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাকে। যার মূল কাজ ছিল ইরাকের মানুষের কাছে ইন্টারনেট এবং ই-লার্নিংয়ের সুযোগ পৌঁছে দেয়া। প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হন তিনি। মূলত কোডার’স ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা তিনি ইরাক থেকেই পেয়েছিলেন। আর সহযোগিতা পেয়েছেন ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ‘ডানিডা’ থেকে। প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-লার্নিংয়ের সুযোগ তৈরি করা। তারই ধারাবাহিকতায় কোডার’স ট্রাস্ট বিশ্বের ৬টি দেশে তাদের কার্যক্রম চালু করেছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন