স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল (ডেভেলপিং) দেশের তালিকায় নাম লেখাতে যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতিপত্র পেলো বাংলাদেশ। এই স্বীকৃতি পাওয়া সরকারের মনোভাবকে আরো চাঙ্গা করেছে। সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়া। তবে এখন আশা করা হচ্ছে যে, হয়তো ২০৪০ সালেই সেই লক্ষ্য অর্জিত হবে। বাংলাদেশ ২০৪০ সালে ধনী দেশের তালিকায় যাবে, এমন আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এমডিজি বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০১৫ প্রকাশ করতে গিয়ে অনেক আগেই একথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, আমরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে যাবো। জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যে সাফল্য লাভ করেছে, আসন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে তার চেয়েও বেশি সাফল্য আসবে। এসডিজির ত্রেগুলো আমরা নির্ধারণ করে রেখেছি। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ ঘোষিত আসন্ন এসডিজির লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে আরো বেশি সক্ষম হবে। সরকারের লক্ষ্য শতভাগ মানুষ শিক্ষিত হবে এবং তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকবে, আর সেই লক্ষ্য নিয়েই সরকার এগুচ্ছে। এমডিজি অর্জনে প্রতি বছর দারিদ্র্য কমছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি নিয়মিত ৭ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এমডিজি অর্জনে দারিদ্র্য কমানোর ল্যমাত্রা ১ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ। সরকারের চলতি মেয়াদে প্রণয়ন করা হবে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০৪১’। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে আগামী ২৬ বছরের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়া। বিশ্ব ব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ। আশা করা হচ্ছে, ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০২৪ সালের মধ্যেই চূড়ান্তভাবে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। এ জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে এসব পদক্ষেপের ফলে ঘোষিত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশের কাতারে শামিল হতে সক্ষম হবে। সরকার তার স্বপ্নের দিগন্ত আরও প্রসারিত করেছে। ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সোপানে আরোহণ এবং মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিক উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে শামিল হওয়া সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তবে এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। মাথাপিছু জাতীয়, মানবসম্পদের অবস্থান এবং অর্থনীতির ঝুঁকিগ্রস্থতা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন দেশ বা অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ৪টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যদিও বিশ্ব ব্যাংক অ্যাটলাস পদ্ধতিতে পরিমাপকৃত মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে এটা নির্ধারণ করে থাকে। এই হিসেবে বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়ের অর্থনীতি, যেখানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলারের উপরে কিন্তু ৪ হাজার ১২৫ ডলারের নিচে। উচ্চ মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হবে ৪ হাজার ১২৫ ডলারের উপরে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের নিচে। আর উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দেশ হতে মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলারের উপরে। সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পরই রূপকল্প-২১ ঘোষণা করেছিল। এই ঘোষণার মূল লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য কমিয়ে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। একই সঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত মিলিনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল বা এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘোষণা অনুযায়ী এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাসে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শিক্ষা ও স্যানিটেশনে দ্রæত সফলতা এসেছে। বেড়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয়। দেশ হয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুত চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজও অনেক এগিয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা, বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। এছাড়া ওই সময়ের মধ্যে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নিয়ে আসা, দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে বলে সরকার আশা করছে সরকার।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন