‘স্বপ্ন ভাগাভগি করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে আজ অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ২১ তম কমনওয়েলথ গেমসের। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন নগরী গোল্ড কোস্টের কারারা স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে গেমসের উদ্বোধন করবেন প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লস। কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের (সিজিএফ) প্রেসিডেন্ট লুইস মার্টিন এ সময় উপস্থিত থাকবেন।
এবারের আসরে বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথ ভুক্ত ৭১টি দেশের ৬ হাজার ৬০০’র বেশি অ্যাথলেট ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করছে। আসরের মুল আয়োজক গোল্ডকোস্ট হলেও ব্রিসবেন, কেয়ার্নস ও টাউন্সভিলেতেও অনুষ্ঠিত হবে বেশ কয়েকটি ডিসিপ্লিন।
গেমসটির ইতিহাসে সর্বাধিক ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত হবে এবারের আসরে। মোট ২৩টি ডিসিপ্লিনের পাশাপাশি থাকছে ৭টি প্যারা স্পোর্টস। সর্বমোট ২৭৫টি স্বর্ণ পদক জয়ের জন্য লড়বে কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশের ক্রীড়াবিদরা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মাল্টিইভেন্টের গেমে এই প্রথম লিঙ্গ সমতা আনা হয়েছে। গেমেসে সমান সংখ্যক পদক রাখা হয়েছে নারী ও পুরুষ অ্যাথলেটদের জন্য। আসরে প্রথমবারের মত অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে বিচ ভলিবল, প্যারা ট্রাইথলন ও মহিলাদের সেভেন-এ সাইড রাগবি। গোল্ডকোস্ট, ছবির মতোই যেন সাজানো ও পরিপাটি একটি শহর। অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত এই শহরটিকে গেমসকে উপলক্ষ্য করে সাজানানো হয়েছে অপরূপ সাজে। এখানকার পরিবেশ যেমন সৌন্দর্য্যমন্ডিত, ঠিক তেমনি এখানকার মানুষগুলো ততোটাই বৈচিত্যময়। গোল্ড কোস্ট শহরকে ‘সার্ফিং প্যারাডাইস’ বলা হলেও, দৃষ্টি নন্দন খেলাটি এখনো কমনওয়েলথভুক্ত না হওয়ায় স্থান পায়নি প্রতিযোগিতায়। তবে ২০১৪ সালে গøাসগোতে অনুষ্ঠিত সমাপনী অনুষ্ঠানের মত আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে সার্ফিং নিয়ে উপস্থাপনা।
গেমসকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে গড়ে তোলা হয়েছে গোল্ডকোস্ট ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমস কর্পোরেশন (গোলডক)। যার প্রধান কাজ হচ্চে বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রনয়নের মাধ্যমে ইভেন্টটিকে সফল করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সরকারকে সহায়তা করা।
প্রতি চার বছর পর পর আয়োজিত গেমসটি এই নিয়ে সর্বাধিক ৫ম বারের মত আয়োজন করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। ১৯৩৮ সালে সিডনি শহর গেমসটি আয়োজন করার পর ১৯৬২ সালে পার্থ, ১৯৮২ সালে ব্রিসবেন ও ২০০৬ সালে মেলবোর্ন শহরে আয়োজিত হয়েছে কমনওয়েলথ গেমস। তবে অস্ট্রেলিয়ার কোন আঞ্চলিক শহরের উদ্যোগে এই প্রথম আয়োজিত হচ্ছে গেমসটি।
১৯৩০ সালে কানাডার হ্যামিল্টনে এককালের ব্রিটিশ রাজ্যভুক্ত ১১টি দেশের অংশগ্রহনে আয়োজন করা হয়েছির কমনওয়েলথ গেমসের। যেখানে অংশ নেয় ৪০০অ্যাথলেট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে গেমসটি আয়োজিত হয়নি। এরপর থেকে ফের নিয়মিত সেটি আয়োজিত হয়ে আসছে।
প্রথম এই কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। এর পরিচালনায় ছিলেন মেলভিল মার্কস (ববি) রবসন। তিনিই বাস্তবতার নিরিখে বুঝিয়ে আলোচনার মাধ্যমে কমনওয়েলথ ভুক্ত জাতিকে একীভুক্ত করেছেন। যা গত তিন দশক ধরে বিরাজমান রয়েছে। কমনওয়েলথ গেমসের অন্তর্নিহিত অর্থ শুধুমাত্র খেলাধুলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে খেলাধুলার মাধ্যমে কমনওয়েলথভুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা। এর মধ্যে রয়েছে মানবতার জয়গান। গোল্ড কোস্ট থেকে ‘স্বপ্নকে ভাগাভাগি করি’ স্লোগানের মাধ্যমে সেটিই এবার ছড়িয়ে যাবে বিশ্বময়, তেমনটাই প্রত্যাশা আয়োজকদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন