বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বই-খাতা-কলম ফেলে ছাত্রলীগ কসাইয়ে পরিণত হয়েছে -রুহুল কবির রিজভী

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ২:২৬ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার : বই-খাতা-কলম ছুঁড়ে ফেলে ছাত্রলীগ ক্রমান্বয়ে কসাইয়ে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর নিষ্ঠুর ও বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। গত দুদিন আগে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে ঢুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বেছে বেছে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ। গত (মঙ্গলবার) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে হল ছাত্রলীগের নেত্রীরা। মোর্শেদা নামের এক ছাত্রীর পায়ের রগও কেটে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ হল শাখার সভানেত্রী জড়িত।
বই-খাতা-কমল ফেলে ছাত্রলীগ যে ক্রমান্বয়ে কসাইয়ে পরিণত হয়েছে তারই প্রমাণ এই রক্তাক্ত ঘটনা। গতকাল (বুধবার) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সরকার নানা বক্তব্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন সাধারণ ছাত্র-ছ্ত্রাীদের আন্দোলন। এখানে উৎসাহ দেওয়া না দেওয়া- এই প্রশ্নগুলো তুলে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সরকার নানা কথা বলে। তিনি বলেন, মতিয়া চৌধুরী (কৃষি মন্ত্রী) জানলেন কী করে যে, এত ছেলে-মেয়ে রাত্রি ১২টার সময়ে হাজার হাজার মেয়েরা বেরিয়ে আসছে হল থেকে। এরা সব রাজাকারের সন্তান? যেখানে সমবেত হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষ ধ্বনিত আওয়াজ তুলছেন তারা রাজাকারের সন্তান? তাহলে রাজাকারের সংখ্যা এতো বেশি? মতিয়া চৌধুরীর কথায় কী বোঝা যায় না যে তারা বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কথাবার্তা বলছেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা ছাত্রলীগকে পানির বদলে রক্তপান করার পরামর্শ দিচ্ছে বলেই এতো সহিংস রক্তপাত শিক্ষাঙ্গনে আওয়ামী নেতৃত্ব কী পরিমাণ আশকারা দিলে ছাত্রলীগ এমন পৈশাচিক বেপরোয়া হয়ে পড়ে। তারই চিত্র আমরা কয়েকদিন ধরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘটতে দেখছি। গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘনঘন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পদচারণা করছেন তাতে আমরা কোন প্রতিকার দেখছি না, বরং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরী প্রার্থীদের আন্দোলনের ওপর রক্তাক্ত আক্রমণেরই ধারাবাহিক সহিংস ঘটনা দেশবাসী লক্ষ্য করছে।
তিনি এধরণের ঘটনার ধিক্কার জানিয়ে বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মনে হয় ছাত্রলীগের ছাড়পত্র ব্যতিরেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভ, প্রতিবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের লাগামহীন বক্তব্যের কারণে শিক্ষার্থীরা আরও বেশী ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় বিশ^বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ সরকারের তল্পিবাহক ছাড়া কোন আদর্শ শিক্ষকের ভূমিকা পালন করেননি। সরকারের কাছে নিজেদের বিবেককে অঞ্জলি দিয়েছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের যে তাÐবলীলা চলছে সেটির তীব্র ধিক্কার ও নিন্দা জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ মেধাবী লোক পছন্দ করে না মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, শিক্ষা বিনাশী সরকার আওয়ামী মহাজোট সরকার-এরা মেধাবী লোক পছন্দ করে না। এই কারণেই এদের সময় সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, খাতায় কিছু না লিখেও ‘এ’ প্লাস পাওয়া যায়। এরা ক্ষমতায় আসার পর দেশের শিক্ষাঙ্গন দুর্বৃত্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এজন্য ছাত্রলীগ ভর্তি বাণিজ্য, সিট বানিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য ইত্যাদিতে রমরমা বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আর এগুলো জারি রেখেই শেখ হাসিনা জনগণকে চোখ রাঙানি দিয়ে অপশাসনের পৌষ মাস চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে প্রধানমন্ত্রীর চোখে চিরকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকার স্বপ্ন।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে অশুভ চক্রান্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। বিশে^ এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, যারা দেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে নিজের দেশের স্বার্থের পক্ষে অবিরাম সংগ্রাম করেছেন তাঁদের মতো তাঁকেও নানা কায়দায় এক শোচনীয় পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কী না সে বিষয়ে চারিদিকে জমাট সন্দেহ প্রকট আকার ধারণ করেছে। সকলে দেখেছে কিভাবে জাল নথি তৈরির মাধ্যমে মিথ্যা সাজানো মামলায় সরকারি হুকুমে বেগম জিয়াকে সাজা দিয়ে কারবন্দী করে রাখা হয়েছে। কারাগারে তাঁকে ন্যুনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তাঁকে একটি সূর্যালোকহীন, নির্জন, স্যাঁতসে্যঁতে পুরোনো ও বসবাস অযোগ্য ভবন-যা বহুদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণহীন ও সাধারণ কয়েদিদের জন্যেও বাসযোগ্য ছিল না, সেখানেই বিএনপি চেয়ারপার্সনের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি যেন মধ্যযুগীয় কায়দায় বন্দি নির্যাতনের শামিল। ডিভিশন দেওয়া হলেও তাঁর বিছানা বালিশ ও আসবাবও অত্যন্ত নি¤œমানের ও ব্যবহার অযোগ্য। এটাও এক প্রকার বর্বর নির্যাতন। তিনি বলেন, একজন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর সুচিকিৎসা নিয়ে সরকারের তামাশা আর টালবাহানা জাতি দেখেছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, এই পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষেরও নানা মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে তাঁর আগে থেকে তিনি যতটুকু অসুস্থ ছিলেন সেটিসহ আরও নানা ব্যাধির তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
একতরফা নির্বাচনের আলামত: আরপিও সংশোধনীর আইনের খসড়ায় সশস্ত্র বাহিনীকে বাদ দেওয়াকে একতরফা নির্বাচনের আলামত বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, সশস্ত্রবাহিনী যুক্ত হচ্ছে না- এই বিধান সংযোগ করে আরপিওর আইনের খসড়া করা হয়েছে। ওই খসড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংজ্ঞা দিচ্ছেন যেখানে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ আছে। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী থাকবে না। তারা যে একতরফা নির্বাচন করবেন, সেই নির্বাচনেরই একটা আভাস ফুটে উঠছে, এর আলামত আমরা দেখতে পারছি।
বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুধীজন-সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবী যারা নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ করেছেন তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন। সেটাকে বন্ধ করার জন্য সরকারের এই উদ্যোগ। আমরা মনে করি এটি হীন উদ্দেশ্য প্রণোদিত, সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের পরিপন্থি উদ্যোগ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন