শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৯৩ মেট্রিক টন চাল

দিনাজপুর জেলায় ১ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

| প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর থেকে : গত বছরের বন্যায় ভেসে আসা পলি কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। মাঠজুড়ে ইরি-বোরো ধানের গাছে বাতাসে দোল খাচ্ছে। স্মরণাতীত কালের বন্যার মতো এবার স্মরণাতীত কালের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাজারে ধান-চালের দামও ভালো। কৃষকেরা বুক বেঁধে আছেন। মহান রাব্বুল আলামিন গত বন্যায় যা হারিয়েছে তার দ্বি-গুণ দিয়ে দেবে। ফলন দ্বিগুণ হলেও প্রান্তিক চাষিরা ভালো নেই। আবাদ করতে বীজ, সেচ সার ও কিটনাশক যোগান দিতে যেয়ে পাওয়ার আগেই সব হারাতে বসেছে। ধানের গাছ বাঁচাতে আর ফলন বাড়াতে উপকরণ খাতের নগদ অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। উচ্চ সুদে টাকা নিয়ে লাভের অংশ ইঁদুরে খাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ, বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান এমনকি অর্ধেক মূল্যে ট্রাকটরসহ হালের মেশিন প্রদানের কার্যক্রমগুলো কতটুকু প্রান্তিক চাষিদের কল্যাণে এসেছে তার মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মৌসুম শুরু থেকে ফসল উৎপাদন পর্যন্ত ইউনিয়ন ও বড় বড় বাজারগুলোতে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রোথ সেন্টারগুলোকে কার্যকর করে ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষিদের উচ্চ সুদ থেকে রক্ষা করে ফসলের মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হলে আগামীতে চাল আমদানি নয় রফতানি করা সম্ভব হবে।
শিল্পে অ-উন্নত দিনাজপুর জেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি। আর কৃষি জমির ৬০ শতাংশই বর্গাচাষিরা আবাদ করে থাকে। বাকি ৪০ শতাংশ মধ্যম আয়ের কৃষকেরা নিজেরাই কৃষক-কৃষাণীদের মজুরির ভিত্তিতে আবাদ করে থাকে। বর্গাচাষি হিসাবে ৬০ ভাগ জমি আবাদকারী মূলত ভ‚মিহীন। আবাদের অর্ধেক ফসল পেয়ে থাকেন জোদ্দার অর্থাৎ জমির মালিকেরা। অর্ধেক ফসলের মূল্য দিয়ে বীজ, সার, সেচসহ আনুসঙ্গিক খরচ যোগান দেন ভ‚মিহীন কৃষকেরা। আর এ কারণে ফসল কাটা-মাড়ার শুরুতেই এসকল ভ‚মিহীন কৃষকেরা মাঠ থেকে অথবা মাঠ থেকে সরাসরি হাটে নিয়ে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়। যাবতীয় দেনা পরিশোধের পর বছরের খাওয়ার চাল সংরক্ষণসহ অন্যান্য খরচ সম্পন্ন করে থাকেন। আর জোদ্দার তার প্রাপ্ত ফসল ঘরে সংরক্ষণ করেন। মূল্য বাড়ার পর তা বিক্রি করেন। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সরকারি যে কোনো সুযোগ-সুবিধা নিতে হলে জমির কাগজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যা এসকল বর্গাচাষিদের নেই। ফলে সকল সুযোগ ভোগ করেন জোদ্দাররাই। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, দিনাজপুর জেলায় এক লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদকৃত জমি থেকে ছয় লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর সদরের, দক্ষিণ কোতোয়ালি, উত্তর কোতোয়ালি, বিরল ও চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মাঠে কর্মরত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলানোর পর জোদ্দারের উপস্থিতিতে ওজন করে ভাগ করা হয়। খড় সংরক্ষণযোগ্য না হওয়ায় জমি ও জমির পার্শ্বে রাস্তায় মেশিন দিয়ে মাড়াই করে বস্তা জাত করা হয়। জোদ্দার তার ধান নিয়ে যায় ঘরে। আর কৃষক বিক্রি করে ফড়েয়ার কাছে। মাত্র দুই কাঠা জমির মালিক তফির উদ্দিন নিজের জমি ছাড়াও বর্গা নিয়ে আবাদ করছেন তিন বিঘা জমি। এ দিয়েই দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। সচেতন এই কৃষক বললেন, সার, বীজসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কার্ড দেয়া হয় কৃষকদের। এই কার্ডের মাধ্যমে গোডাউনে ধান চাল ক্রয় করা হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রকৃত কোনো কৃষকই উপজেলা সদর বা জেলা সদরের খাদ্য গোডাউনে ধান ও চাল বিক্রি করার সুযোগ পায় না। এ সকল কার্ড দিয়ে মূলত ফড়িয়া ও মিলাররাই ধান-চাল দিয়ে থাকেন সরকারি গোডাউনে। তার মতে, ইউনিয়ন অফিস অথবা বড় বড় হাটগুলোতে গ্রোথ সেন্টার নামক যে ভবন তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করা হলেই কৃষকেরা লাভবান হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের স্বদ-ইচ্ছা। গ্রোথ সেন্টারগুলিতে স্বাপ্তাহিক বাজারের দিন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা কৃষকদের কাছ থেকে ধান-বা চাল ক্রয় করলেই কৃষকেরা লাভবান হবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা হাজার রাইস মিল সচল হবে। কেননা কৃষকেরা গ্রোথ সেন্টারে চাল দিতে পারলে তারাই ওইসব রাইস মিলে ধান ভাঙাবে। ফলে ন্যায্য মূল্য পাবে কৃষক, আর ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা রাইস মিলগুলো সচল হবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন