শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আমনের মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম

রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা-চলতি সপ্তাহে মিনিকেট (নাজিরশাইল) ৭২ থেকে ৮০ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা-চলতি সপ্তাহে পাইজাম/লতা ৬৫

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাট-বাজারগুলোতে এখন নতুন আমন ধানের প্রচুর সরবরাহ। সারাদেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিনই হাট-বাজারগুলোতে ধান-চালের এ সরবরাহ বাড়ছে। এ সময় বাজারে চালের দাম কমার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো চালের দাম বাড়ছে। কেন এমন হচ্ছে?
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জ্বালানি তেল তথা, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহণ খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আগে মোকাম থেকে চাল আনতে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এখন তা নেয়া হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া ধানের দামও বেশি। ডিজেলের পাশাপাশি সব ধরনের সারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে ধানের উৎপাদন খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। এর ফলে গত বছরের চেয়ে এবার মণ প্রতি ধানের দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। এর প্রভাবও স্বাভাবিকভাবেই চালের দামের ওপর পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে, যুদ্ধের ফলে ক্ষুধা এখন সারা বিশ্বকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বাইরে থেকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী বছর ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় পড়েছে এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। এসব দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশেরও। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশের মানুষকে সচেতন করেছেন। তবে এই অতিরিক্ত সচেতনতাই যেন কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র আগেভাগেই ব্যাপকভাবে ধান-চাল কিনে মজুদ করছে। এর প্রভাবেও চালের বাজার ভরা মৌসুমে অস্থির হয়ে উঠেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অসাধু ব্যবসায়ী সিডিকেটের কাছে যেন সরকার জিম্মি। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু চাল নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস যেমন তেন, চিনি, ডাল সব জিনিসেরই ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার কিছুই করতে পারছে না। নানান অজুহাতে কারসাজির মাধ্যমে গত আড়াই মাস ধরে বাড়ানো হচ্ছে চালের দাম। দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ কম এবং জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর উৎপাদন ও পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির অজুহাত দেখালেও বাস্তবতা ভিন্ন। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগেও অসৎ ব্যবসায়ীদের একটি চক্র সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত আড়াই মাসে অসাধু সিন্ডিকেট ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা নিয়ে গেছে। পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাননি। অযৌক্তিক এ দামবৃদ্ধির ফলে, গড়ে ৪ টাকা করে হলেও প্রতিদিন ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত যাচ্ছে ২৭ কোটি ৫৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
বাজারের তথ্য অনুযায়ী, আমদানির হুমকিতে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিন বাদে গত আড়াই মাসের মধ্যে লাগাতার বেড়েছে চালের দাম। এ সময়ে বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল মিনিকেট চালের। যার দাম ৭০ টাকা থেকে ৭৮ টাকায় ঠেকেছে। এছাড়া মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৪টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি নাজিরশাইল/মিনিকেট ৭২ থেকে ৮০ টাকা, পাইজাম/লতা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং ইরি/স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। অথচ একদিন আগে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম/লতা ৪৮ থেকে ৫৬ টাকা ও ইরি/স্বর্ণা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের নিত্যপ্রণ্যের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে।
মৌসুমেও চালের দাম বেশি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট মার্কেটের ভাই ভাই রাইস এজেন্সির কর্ণধার আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা মোকাম থেকে বেশি দামে চাল কিনে আনি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে মিল-মালিকরা বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি, এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে। এসব কারণে চালের দাম বেশি। এছাড়া বড় জোতদার ও বড় ব্যবসায়ীরা আরো বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান-চাল মজুত করছেন এমনটাও শুনছি।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা করছে। চাল কিনতে আসা সাইদুল ইসলাম বলেন, দফায় দফায় চালের দাম বাড়ছে। এতে সংসারের খরচ বাড়ছে। কিন্তু আমাদের আয় বাড়ছে না। চাল, ডাল, তেল, লবন প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ায় আমাদের মতো মধ্যবিত্তের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। সংসার চালাতে এখন ঋণ করতে হচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কেউ কারসাজি করে চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই চালের দর বাড়তি। চলতি বছর আগস্টে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পাশাপাশি পণ্যটি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্কও প্রত্যাহার করা হয়েছিল গত অক্টোবর পর্যন্ত। কিন্তু তারপরও বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১০ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এরমধ্যে চাল ১২ দশমিক ৩২ লাখ টন ও গম ২ দশমিক ৭৬ লাখ টন। ফলে দেশে ধান-চালের কোনো সঙ্কট নেই। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বর্তমানে সরকারের গুদামে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্যের মজুত রয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তায় এই মজুদ বৃদ্ধি করতে সরকার সচেষ্ট। কেউ যেন অবৈধ মজুদ করে খাদ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো কারণ ছাড়া চালের দাম বাড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আব্দুল হান্নান ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪০ পিএম says : 0
আজকের ৩১/১২/২০২২ তারিখের রাজশাহীর মোটা চাউলের বাজার 31/12/2022তারিখের রাজশাহীর মোটা চালের দর
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন