বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চালের দামের ঊর্ধ্বগতি, ভোক্তারা কাহিল

আজ জরুরি সভা ডেকেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আমন ধান কাটা প্রায় শেষ। ভরা মৌসুমে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কমবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। বরং আমনের ভরা মৌসুমে দেশের সব জেলায় চালের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং এ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার বিকেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও সভায় উপস্থিত থাকবেন।
চাল থেকে তৈরি ভাত দেশের কম-বেশি ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য। আমনের ভরা মৌসুমে চালের দাম কেন বাড়ছে এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে চালের দাম ক্রেতা-ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সরকারকে কেন এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চাল আমদানিতে বাড়তি জোর দিচ্ছে। চলতিমাসে ভারতের সঙ্গে দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। আরো দেড় লাখ টন আমদানির বিষয়টি আগে থেকেই প্রক্রিয়াধীন ছিল, যার বড় অংশও ভারত থেকে আসছে। ভারতীয় চালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা। সরকারিভাবে চাল আমদানিতে বাড়তি জোর দেওয়ার কারণ, খাদ্য অধিদফতরের গুদামে চালের মজুত গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পরিমাণের দিক দিয়ে যা সাড়ে ৫ লাখ টন। ওদিকে চালকলমালিকেরা ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে দাম প্রতি কেজি ৪১ টাকা না করলে নতুন আমন মৌসুমের চাল সরকারকে দিতে রাজি নন। ফলে আমদানি ছাড়া বিকল্পও নেই।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, আমনের এই ভরা মৌসুমেও চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষক লাভবান হয়েছেন। সরকার আমদানি করে মজুত বাড়াবে। তবে সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টনের বেশি আমদানি হবে না।
খাদ্যসচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম এ বিষয়ে ইনকিলাবকে বলেন, সরকার আমদানি করেই মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতে চালের দাম সবচেয়ে কম। দেশটির সঙ্গে চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে বেসরকারি আমদানি উৎসাহিত করতে কর কমানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
ঢাকার খুচরা বাজারে এখন মোটা গুটি ও স্বর্ণা চালের দাম ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি পাইজাম, বিআর-২৮সহ বিভিন্ন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। আর সরু মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৬০ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের দাম প্রায় ৪৮ শতাংশ, মাঝারি ২৩ ও সরু চালের দাম ১৭ শতাংশ বেশি। পুরান ঢাকার বাবুবাজারের চালের আড়তে মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৪ টাকার আশপাশে, মাঝারি চাল ৪৮-৫২ টাকা ও সরু চাল ৫৬ থেকে ৬৩ টাকা দরে বিক্রি হয়। কুষ্টিয়া ও নওগাঁ সেখানেও চালের দাম বাড়তি। গত দুই সপ্তাহ আগে যখন আমনের চাল মোটামুটি ভালো পরিমাণে আসতে শুরু করে, তখন দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে যায়। এরপর দেখা গেল, সরবরাহ আর বাড়ছে না। ফলে দাম বাড়তে শুরু করে।
জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে ৩ কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে ১ কোটি ৪০ লাখের মতো আসে আমনে। এ মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় দেশের বাজার থেকে ২ লাখ টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। গত ৭ নভেম্বর থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু করে গতকাল পর্যন্ত খাদ্য অধিদফতর চাল কিনতে পেরেছে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টনের মতো। গত বোরোতেও সরকার লক্ষ্য অনুযায়ী চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। এবার আমনের ভরা মৌসুমে চাল সংগ্রহ করতে পারছে না বলে জানা গেছে।
বাজারে দাম বাড়তে থাকলেও কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, চালের কোনো ঘাটতি নেই। মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, এবার আমনে লক্ষ্যের চেয়ে ১৫ লাখ টন চাল কম উৎপাদিত হয়েছে। তারপরও আগামী জুন পর্যন্ত দেশে চাহিদার চেয়ে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। সরকারি গুদামে চালের মজুত কমলেই বাজারে দাম বাড়তে থাকে। এ বছর চালের দাম ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশি থাকলেও বাজারে খুব বেশি হস্তক্ষেপ করতে পারেনি সরকার। আবার শুল্ক কমিয়ে দিলে বিপুল চাল চলে আসে, যা ধানের দাম কমিয়ে কৃষককে বিপাকে ফেলে।
রাজধানীর বাবুবাজারের শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান ইনকিলাবকে জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে যখন আমনের চাল মোটামুটি ভালো পরিমাণে আসতে শুরু করে, তখন দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে যায়। এরপর দেখা গেল, সরবরাহ আর বাড়ছে না। ফলে দাম বাড়তে শুরু করে।
চালকলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে ধানের দাম কমতে দেখছি না, বরং বাড়ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে বেশির ভাগ মিল চাল দিতে পারছে না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান মনে করেন, আমদানিতে পরিমাণে চাল চলে না আসে, সেটি সরকারকে তথ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের দিকে ৬ লাখ টনের ঘাটতির কথা বলে দেশে প্রায় ৪০ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছিল। প্রয়োজনের অতিরিক্ত চালের কারণে টানা তিন বছর কৃষক ধানের ভালো দাম পায়নি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়, গত কয়েকদিন চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। সরকারি বাণিজ্য সংস্থার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসাব অনুযায়ী, এক মাস আগে যেখানে মাঝারি মানের চালের কেজি ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা, সেটার দাম গত রোববার ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। এখন ৪৫ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল পাওয়া যায় না, কিছুদিন আগেও যা ছিল ৪৪ টাকা। চিঠিতে বলা হয়, আজ সোমবার বিকেল ৩টায় অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও চালের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় খাদ্যমন্ত্রী, প্রতিযোগিতা কমিশন, খাদ্য অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, কৃষি বিপণন অধিদফতর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং আট আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ চালকল মালিক, চাল আমদানিকারক, চাল ব্যবসায়ীরা সভায় যুক্ত থাকবেন বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৩৪ পিএম says : 0
O'Muslim wake up and establish the Law of Allah only then we will be able to live in our country in peace with human dignity and there will be no more poor people.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন