দীর্ঘদিন চালের বাজার অস্থির থাকার পর পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীতে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তা ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, দামে লাগাম টানতে সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে।
এ কারণে আমদানিকারকরা প্রচুর চাল আমদানি করছেন। একই সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি শুরু করেছে সরকার। এতে বাজারে কমছে চালের দাম।
এদিকে চট্টগ্রামের দুটি পাইকারি বাজারে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। কিন্তু দাম কমার পর বাজারে চালের বিক্রিও কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পাইকারি চালের বাজার বাবুবাজার, জোয়ারসাহারা বাজার, মধ্য বাড্ডা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে খুচরায় মোটা চাল ব্রি-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে, যা গত দুই দিন আগে বিক্রি হয় ৬০ টাকা কেজি। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। ভালোমানের নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৩ থেকে ৮২ টাকায়, দুই দিন আগে বিক্রি হচ্ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়।
গতকাল রাজধানীর চালের পাইকারি বাবুবাজারে সব ধরনের চালের বস্তা (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে বিক্রি হয়। মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি বস্তা ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল মিনিকেট প্রতি বস্তা ৩২৫০ থেকে ৩৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিকন চাল নাজিরশাইল প্রতি বস্তা ৩৫০০ থেকে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে ব্যবসায়ী সলিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে আমদানি চাল ঢুকতে শুরু হয়েছে। এ কারণে সব ধরনের চালের দাম কমছে। এরই মধ্যে পাইকারিতেই ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমে গেছে। সামনের সপ্তাহে চালের দাম আরো কমবে। ’
জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গত কয়েক দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চালের দাম কিছু কমেছে। আমরাও কেজিতে দুই-তিন টাকা পর্যন্ত কমিয়ে বিক্রি করছি। প্রতি কেজি মোটা চালের মধ্যে ২৮ এখন খুচরা ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৭২ থেকে ৭৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭৩ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ’
তিনি বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে এখন খোলা আটার দামও কিছুটা কমেছে। খোলা আটা কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ টাকা। প্যাকেট আটা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। চিকন মসুর ডাল ১৪০, মোটা মসুর ডাল ১১০, পেঁয়াজ কেজি ৪৫, রসুন দেশি ৮০ এবং আমদানি রসুন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা কমার খবরে খুশি নন ভোক্তারা। তাঁরা বলছেন, গত দুই মাসে চালের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন চাল আমদানির খবরে কেজিতে দুই-তিন টাকা কমেছে, এটি তেমন আনন্দের খবর না। তবে আমদানি চলমান থাকলে চালের দাম আরো কমবে। আমদানি চাল মজুদ করে ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট করে বিক্রি করতে না পারেন সেদিকে সরকারকে নজর রাখতে হবে বলেও তাঁরা জানান।
এদিকে ডিমের দাম কমে রাজধানীর বাজারগুলোতে ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ১৬০ থেকে ১৭০, সোনালি ২৭০ থেকে ২৮০ এবং দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তেলাপিয়া মাঝারি সাইজের কেজি ১৮০, পাঙ্গাশ ১৬০, রুই এক-দেড় কেজি ওজনের ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় রুই ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ ১২০০ থেকে ১৪০০ গ্রাম ওজনের বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়, ৪০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল জোয়ারসাহারা সবজি বাজারে আগাম শীতের সবজি দেখা গেছে। শিম কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ছোট আকারের বাঁধাকপি ও ফুলকপি প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০, গোল বেগুন কেজি ৮০, লম্বা বেগুন ৬০, দেশি শসা ৮০, চিচিঙ্গা ৫০, কচুমুখী ৫০, বরবটি ৮০, পটোল ৫০, লম্বা লাউ আকারভেদে ৫০ থেকে ৬০, চালকুমড়া ৪০ এবং ঢেঁড়স ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা কমে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুল্ক কমানোর কারণে পাইকারিতে প্রতি কেজি চাল তিন থেকে পাঁচ টাকা কমেছে। আর ৫০ কেজির বস্তায় ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে ভারত থেকে আসা বেতি চালের দাম। এর প্রভাবে একই ধরনের দেশীয় অন্য চালের দামও কমেছে। দাম কমার কারণে বাজারে বিক্রি বেশির কথা থাকলেও উল্টো হয়েছে। হঠাৎ করেই বিক্রি কমেছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন