সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

ধারাবাহিক : মসনবী শরীফ

মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ./ কাব্যানুবাদ : রূহুল আমীন খান | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উযিরের উত্তর

৬৩২. বলল উযির, থামো থামো, দিওনাকো যুক্তি আর

বল্ছি যা তা শোনো সবাই, করো যা দিই কার্যভার।

৬৩৩. তুলছ কেন এই অভিযোগ মোর পরে কি আস্থা নাই ?
থাকেই যদি আকাশটাকে বললে যমীন মানবে তাই।

৬৩৪. আমি যদি কামিলই হই বলছ যেমন উক্তিতে
সেই কামিলের কথার খেলাফ করছ সে, কোন যুুক্তিতে ?

৬৩৫. ফিরবনা আর লোক সমাজে এই ব্যাপারে হও একীন
অতিন্দ্রিয় তপস্যাতে থাকব আমি আত্মলীন।

মুরীদানের পুনঃ আপত্তি ও আকুল আবেদন

৬৩৬. বলল : এ নয় অস্বীকৃতি, আনুগত্যে নেইকো খাদ
ভিন্ন বেগানার কথা এ নয়, ভক্তগণের আর্তনাদ।

৬৩৭. নালিশ নহে আর্তনাদ এ, শোনো দয়াল কামিল পীর
বিয়োগ ব্যথায় বুক ফেটে যায় চক্ষে বহে অশ্রু নীর।

৬৩৮. ধাত্রী সাথে অবোধ শিশু করেনা বিবাদ লড়াই
মন্দ ভালো বোঝেনা সে, জানে কেবল কান্নাটাই।

৬৩৯. আমরা হলাম সারেঙ্গী আর ‘জখমা’১ তুমি সারেঙ্গীর
আমরা হলাম কান্না ধ্বনি- তুমিই কাঁদাও মোদের, পীর !

৬৪০. আমরা বাঁশী আর তুমিতো সুরধ্বনি ওই বংশীটার
আমরা সবাই গিরিধ্বনি, প্রতিধ্বনি তুমিই তার।

৬৪১. আমরা হলাম দাবার ঘুটি হার ও জিতের এই খেলায়
হার কি বা জিত উভয় তোমার যা’ ঘটে মোদের বেলায়।

৬৪২. নাস্তি মোরা, অস্তি তুমি, তুমিই মোদের সত্তা তাই
তোমাতেই বিলীন মোরা, ভিন্ন মোদের সত্তা নাই।

৬৪৩. অস্তি কোনো নেই আমাদের তোমার মাঝেই আমরা লীন
তুমিই মূল সত্তা মোদের, যদ্যপি রূপ বর্ণহীন।

৬৪৪. সিংহ মোরা কেবল ছবির- বায়ূর বেগেই সঞ্চলন
এই কাগুজে পশুরাজের বায়ূর বলেই আক্রমণ।

৬৪৫. দর্শীগণের চক্ষে পড়ে আক্রমনই, বাতাস নয়
শক্তিটাই আসল বটে, সেইটি যেন রয় হৃদয়।

৬৪৬. সত্তা মোদের, শক্তি মোদের দৃশ্য ও অদৃশ্যমান
সব কিছুই সৃষ্ট তোমার- সব কিছুই তোমার দান।

৬৪৭. তুমিই দিলে অস্তিহীনে অস্তি লাভের আস্বাদন
করলে তুমি অস্তিকে ফের তোমার দিকে আকর্ষণ।

৬৪৮. প্রদান করে আপন হাতে পাত্র শরাব ফল তাজা
ফেরৎ নিয়ে যেয়োনাকো এই উপহার এই মযা।

৬৪৯. প্রদান করে কেড়ে নিলে রুখবে তেমন সাধ্য কার ?
চিত্রকরের বিরুদ্ধে কি লড়তে পারে চিত্র তার ?

৬৫০. নাইবা তুমি দেখলে চেয়ে কী হাল দশা এ সত্তার
তাকাও বরং আপন দয়া দানের পানে একটি বার।

৬৫১. ছিলেম নাকো আমরা যখোন, ছিলনা চিহ্ন আকাঙ্খার
শুনতে তুমি না বলা আর না চাওয়া সেই সময়টার।

৬৫২. শিল্প, তুলির ’পরে যেমন নাইকো ছবির ইখতিয়ার
আমরা তেমন সামর্থ্যহীন শিশুর মতো গর্ভে মা’র।

৬৫৩. বল্ ক্ষমতা নেই কাহারো সম্মুখে মহান খোদার
সূচ ও সূচিকারের হাতে বস্ত্রে যেমন ফুল নিসাড়।

৬৫৪. শিল্পী যেমন আঁকে ছবি- কভু দানো১, ইনসানের
আবার কভু আঁকে ছবি বিষাদ কিবা আনন্দের।

৬৫৫. কার্যে তাহার দিবে বাধা ছবির তো নেই তেমন হাত
প্রতিবাদী নেই কেহ তাঁর করতে কাজের প্রতিবাদ।

৬৫৬. লক্ষ্য কর, কালামে পাক স্পষ্ট ভাবে বলচে যা
রাসূল তুমি ছুড়নিক, ছুড়েছে স্বয়ং খোদা।

৬৫৭. আমরাই তীর ছুড়ে থাকি এই কথাই ভাবছি সার
মূলত তীর ছুঁড়েন খোদা আমরা কেবল ধনুক তাঁর।

৬৫৮. আসল মানে এই বয়াতের আল্লা’ পরম শক্তিময়
নয় আকিদা জাবর২ সম- বান্দা কাজে স্বাধীন নয়।

৬৫৯. কান্নাকাটি প্রমাণ করে অক্ষমতা- ইযতিরার৩
দুখ অনুতাপ প্রমাণ করে সক্ষমতা- ইখতিয়ার৪।

৬৬০. মন্দ ভালোর ইখতিয়ারই না রয় যদি বান্দাদের
এই যে অনুতাপ ও দুখ- কোনই মানে হয় না এর।

৬৬১. কেন করেন শিক্ষাগুরু ছাত্রদেরে তিরস্কার
কেন ধরার মানুষগণের নেই সীমা শেষ ব্যস্ততার ?

৬৬২. বলবে তুমি, শিক্ষাগুরুর জাবর মতের জ্ঞান নাই
বলব, মেঘে পড়ছে ঢাকা হকের উজাল চন্দ্রটাই।

৬৬৩. এসব কথার জবাব যদি চাও শুনিতে বৎসগণ
ত্যাগ কর সব বদআকিদা, দ্বীনের কাজে দাওগো মন।

৬৬৪. রোগ-বিমারে পড়লে মানুষ বোঝে কোথায় ত্রæটি তার
দগ্ধিত হয় অনুতাপে সঠিক পথে ধায় আবার।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন