আজ ১৪ শাবান দিনগত রাতে পবিত্র শবে বরাত। পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা অনুযায়ী এ রাত মর্যাদাময় রাত। পবিত্র শবে বরাত যে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ রাত এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। অতীত ও বর্তমান মুফাসসিরিন ও মুহাদ্দিসিনে কেরাম এ রাতকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন। কারণ পবিত্র এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা বহুল প্রমাণিত। শবে বরাতের রাতে মানুষের বার্ষিক ভাগ্যলিপি লেখা হয় এবং বিগত বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণীতে দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করেছেন। এ রাতে এক বছরের হায়াত-মউত-রিজিক দৌলত তথা ভাগ্য নির্ধারণ হয়। এই রাতে আল্লাহ পাক বান্দার দিকে বিশেষ রহমতের নজরে তাকান। এই রাতে ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিয়ে জিবরাঈল (আ.) দুনিয়াতে আসেন এবং আল্লাহর রহমত বন্টন করেন। আরবের বনী কালব গোত্রের ৩০ হাজার বকরির পশমের সংখ্যারও অধিক গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় এ রাতে। এ রাতে কবিরা গুনাহ ব্যাতীত অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং তওবা করলে কবিরা বা বড় গুনাহগারকেও আল্লাহ ক্ষমা করেন।
এ রাতে নফল নামাজ, তিলাওয়াত. যিকির আযকার, দান-খয়রাত, কবর জিয়ারত করা উত্তম। এই রাতে আগামী এক বছরের যাবতীয় বিষয়াদি নির্ধারিত হয় এবং শবে কদরে সংশ্লিষ্ট ফেরেস্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই রাতে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শাফায়াতের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র এই রাতটি বিশ্বের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযোগ্য মর্যাদায় এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে পালন করবে। এ পবিত্র রাতের এবাদতের অন্তর্ভুক্ত থাকবে কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, ওয়াজ, জিকির আজকার, জিয়ারত, মিলাদ ও মুনাজাত।
শবে বরাত উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটি। প্রিন্ট মিডিয়ায় আজ ছুটি। কাল পত্রিকা প্রকাশ হবে না। এ উপলক্ষে বিভিন্œ মিডিয়া বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করবে এবং বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। কিছু ভ্রান্ত মতবাদীরা মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য আলোচনা ও লেখনিতে সর্বদা বলে বেড়াচ্ছে যে, লাইলাতুল বরাতের বিষয়ে কোন দলীলাদি কুরআন ও হাদিসে নেই। অথচ শবে বরাত সম্পর্কে বুখারি, মুসলিম ও তিরমিযিসহ বিভিন্ন সহি হাদিস গ্রন্থে ২০ জন সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনায় এ হাদিস বিদ্যমান। এই ২০ জন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে রয়েছেন হযরত আবু বকর (রা.), হযরত আলী (রা.), মা খাদিজা (রা.), মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)সহ বিশিষ্ট সাহাবাগণ।
অথচ কুরআনুল কারিমের নির্ভরযোগ্য তাফসিরের ভাষ্য হচ্ছে- বিশিষ্ট তাবেয়ি হযরত ইকরামা (রা.) হতে তাফসীরে তাবারীর ১০ম খন্ডের ২২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত মধ্য শাবানের রাতে বছরের জন্য সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয়। জীবিত ও মৃতদের তালিকাও তৈরী করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না।”
ইবনুল মুনজির (রা.) ও ইবনু আবি হাতেম (রা.) তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে একই বর্ণনা করেছেন। একইভাবে বিশিষ্ট ৬৫টি তাফসির গ্রন্থে শবে কদর এবং ১৪ শাবানের দিবাগত রাত শবে বরাতের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তাঁর কিতাব মুকাশাফাতুল কুলুবের ৬৪০ পৃষ্ঠায় ইমাম সুবকীর বরাতে উল্লেখ করেন, শবে বরাতে এবাদত সারা বছরের গুনাহ মাফের জন্য বদলা হয়। একইভাবে শবে কদরের রাতের এবাদত জিন্দেগীর গুনাহ মাফের বদলা হয়। আর সপ্তাহের গুনাহ মাফের বদলা বা উছিলা হয় প্রতি বৃহস্পতিবার দিনাগত রাতের এবাদত বন্দেগী।
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রæতা পোষণকারী ব্যাক্তিকে ক্ষমা করেন না। এছাড়াও হাদীসটি যেসব গ্রন্থে বর্ণিত আছে ইমাম ইবনে হিব্বান এর ‘সহীহ ইবনে হিব্বান’ এর হাদীস নাম্বার ১৯৮০, পৃষ্ঠা-৩৫৫, খন্ড-১৩। আহলে হাদীস তথা লা-মাযহাবীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নাসির উদ্দিন আলবানীর সিলসিলাতুল আহাািদস আসসহীহাহ-এর ৩য় খÐের ১৩৫ পৃষ্ঠা, হাদিস নং-১১৪৪, ইমাম তাবারানী তার বিখ্যাত কিতাব “মু’জামুল কবীর” এর ১৫ খন্ড, ২২১পৃষ্ঠা। ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান” এর হাদিস নং ৩৮৩৩। “ফাজায়েলুল আওকাত”-এর হাদীস নং-২২, পৃষ্ঠা-১১৯। “আত তারগীব ওয়াত তারহীব” এর ২য় খন্ড-২৪১ পৃষ্ঠা। “মাজমাউয যাওয়ায়েদ” এর ৮ম খন্ড- ৬৫ পৃষ্ঠা। “আল হিলয়াহ” এর ৫ খন্ড-পৃ-১৯১। “আস সুন্নাহ” এর হাদীস নং-৫১২।
উল্লেখ্য, বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হাদিসটি অন্যান্য ওলামায়ে-কেরাম ছাড়াও শবে বরাতের বিরুদ্ধবাদী আলেমগণও সহীহ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এরপরও যারা শবে বরাতের বিরোধিতা করে তারা রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামদের বিরোধিতা করেন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম ও মহাখালীস্থ মসজিদে গাউসুল আজমসহ দেশের প্রায় সকল মসজিদ, দরবার, খানকা ও মাজারসমূহে রাতভর নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর আযকার এবং ওয়াজ মাহফিল শেষে আল্লাহর অশেষ রহমত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন