যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ রোববার দিবাগত রাতে পালিত হবে পবিত্র শবে বরাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতে দেশের প্রতিটি মসজিদে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির আযকার এবং মিলাদ মাহফিলসহ ইবাদত-বন্দেগি করবেন। এ উপলক্ষে বাণীতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।
‘শবে বরাত’ হলো সৌভাগ্যের রজনী, যাকে আরবিতে বলা হয় ‘লাইলাতুল বরাত’। হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহান আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন। মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুলভ্রান্ত্রি ও পাপের জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাকাটি করেন।
বর্ণিত আছে যে, এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নূরের তাজাল্লি পৃথিবীর নিকট আসমানে প্রকাশ পায়। তখন আল্লাহপাক বলতে থাকেন, ‘আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী, যাকে আমি ক্ষমা করব? আছে কি কেউ রিজিকপ্রার্থী, যাকে আমি রিজিক প্রদান করব? আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, যাকে আমি বিপদমুক্ত করব?’ আল্লাহ তায়ালার মহান দরবার থেকে প্রদত্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে ফজর অবধি। বস্তুত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় লাইলাতুল বরাত।
প্রতিটি কল্যাণকামী মানুষ এ সুযোগরে পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে থাকেন। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয়ে রাত অতিবাহিত করেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য অল্লাহর রহমত কামনা করেন। মুসলমানরা এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি ছাড়াও মৃত স্বজনদের কবর জিয়ারত ও দান-ছদকা আদায় করে থাকেন । অনেকে নফল রোজাও রাখেন। শবে বরাত উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ বাদ মাগরিব থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রাতব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। বাদ মাগরিব ‘শবে বরাতের ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন তেজগাঁও মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আযহারী। রাত ৯টা ৫ মিনিটে ‘ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম।
রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ‘শবে বরাত ও রমজানের তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ পেশ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা এহসানুল হক জিলানী। রাত ১টা ৫৫ মিনিটে ‘তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত’ শিরোনামে ওয়াজ ফরমাইবেন এবং বাদ ফজর আখেরি মুনাজাত পরিবচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে আজ রাজধানীর মহাখালিস্থ বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে লাইলাতুল বরাত মাহ্ফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মাহফিলে বাদ এশা থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও ইসলামি চিন্তাবিদ আলহাজ্ব মুফতি মাওলানা শামছুল আলম মুহীব্বী এবং রাত ১১টা থেকে লাইলাতুল বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর আলোচনা করবেন আলহাজ্ব মুফতি মাওলানা ওসমান গনী ছালেহী। আলোচনা, মিলাদ-ক্বিয়াম শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করবেন গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব আলহাজ্ব মাওলানা সামছুল হক। আয়োজিত এ মহিমান্বিত মাহফিলে মহিলাদের বসার জন্য আলাদা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্থান রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই ও বোনদের এ মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আতশবাজি ও পটকাবাজি নিষিদ্ধ
এদিকে, পবিত্র শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং অনুষ্ঠানটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন নিশ্চিতকরণে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিস্ফোরকদ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি, অন্যান্য ক্ষতিকারক ও দূষণীয় দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঢাকা মহানগর এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য ডিএমপি অধ্যাদেশের অর্পিত ক্ষমতাবলে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া এ নির্দেশ দেন। নগরবাসীকে এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
চট্টগ্রামে শবে বরাতের ব্যাপক প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমি চট্টগ্রামে মহিমান্বিত রজনী পবিত্র শবে বরাত পালনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নফল রোজা, মসজিদ, খানকা ও বাসাবাড়িতে রাতভর ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে শবে বরাত পালন করবে এ অঞ্চলের মানুষ। নগরীর ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ইবাদতের জন্য সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ধুয়ে-মুছে পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে মসজিদের আশপাশের এলাকাও। কারণ শবে বরাতে বেশিরভাগ মসজিদে মুসল্লির উপচেপড়া ভিড় নামে। মসজিদে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ছাদে, বারান্দায় এমনকি পাশের সড়কেও বিস্তৃত হয় মুসল্লিদের কাতার।
নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, হযরত আমানত খান দরগাহ মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ, মুরাদপুরের মসজিদে বেলাল, অলিখাঁ মসজিদ, পাঠানটুলী চট্টেশ্বরাই গায়েবী মসজিদ, সিজিএস কলোনী মসজিদ, জাম্বুরী ময়দান জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, আলী শাহ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ এ অঞ্চলের প্রতিটি মসজিদ ও খানকায় মুসল্লিদের ঢল নামবে।
রাতভর মসজিদে ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার করবেন মুসল্লিরা। এ উপলক্ষে মসজিদগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইবাদতের পাশাপাশি পিতা-মাতাসহ মুরব্বি ও পীর-মাশায়েখদের কবর ও মাজার জেয়ারত করবেন মুসল্লিরা। ঘরে ঘরে শবে বরাতের প্রস্তুতি চলছে। নানারকম খাবার তৈরি করে তা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। এর পাশাপাশি দান, খয়রাতও করবেন অনেকে। নগর পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইবাদত পালনের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শবে বরাতের দিন আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন কর্মসূচি
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদার সাথে পবিত্র লাইলাতুল বরাত (শবে বরাত) পালিত হচ্ছে। শবে বরাত উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে।
শবে বরাত উপলক্ষে বরিশাল মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম এ মাহফিলে ওয়াজ করেন। তিনদিনের মাহফিল শেষে শুক্রবার রাতে মছজিদের হেফজখানার ৭ ছাত্রকে পাগড়ী প্রদান করা হয়।
এদিকে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে আজ মাগরিব নামাজ থেকে এবাদত বন্দেগী শুরু হবে। সমবেত জাকেরান ও আশেকানব ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় ছাড়াও রাতভর নফল নামাজ আদায়, জিকির, পবিত্র কোরআন তোলাওয়াত, ফাতেহা শরিফ ও খতম শরিফ আদায় করবেন। আগামীকাল বাদ ফজর আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন