শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রমজান তাকওয়া অর্জনের মাস

রফিক তালুকদার | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পবিত্র রমজান তাকওয়া অর্জন ও মুত্তাকী হওয়ার মাস। বরকতময়, কল্যাণময়, অফুরন্ত রহমতের মাস। আল্ল­াহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। (হাদীসে কুদসী) এতে বুঝা যায়, পবিত্র রমজান আমাদের জন্য কত গুরুত্বময়। তাকওয়া শব্দের শাব্দিক অর্থ দূরে থাকা, কোন কর্ম থেকে বেঁচে থাকা, কোন কিছু ত্যাগ করা। আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে কোন কাজ করা বা তা থেকে বিরত থাকাই তাকওয়া। আর এ গুণ যারা অর্জন করতে পারে তারাই মুত্তাকী। মোমিনগণ রোজা রেখে হিংসা, বিদ্বেষ, দুর্নীতি, মিথ্যা, জুলুম, ঠকানো, চুগলখোরী, অযথা আলোচনা, বেহায়াপনা, অন্যায় কাজসহ সব রকম পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা চালায়। রাসুল (দ.) বলেন, যে ঈমানদারী ও আত্মসমালোচনার সাথে রোজা রাখবে আল্ল­াহ তার আগের সব গুণাহ ক্ষমা করে দেবেন।
মোমিনগণ রোজা রেখে সারাদিন ইবাদত বন্দেগীতে কাটায়। নামাজ, কোরআন তেলোয়াত, অজীফা তেলোওয়াত, তসবীহ তাহলীল, জিকির আজগারসহ ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে। মনের ভিতর খোদা ভীতি জাগ্রত থাকে। তাকওয়া অর্জিত হয়। রাসুল (দ.) বলেছেন, আলল্লাহতালা (মাহে রমজানে) দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং ডেকে বলেন, কে আছ এমন যে আমার কাছে নিজের গুণাহ মাফ চাইবে আর আমি মাফ করে দেব। (বুখারী ও মুসলিম)। রাসুল (দ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখল এবং ইবাদতের জন্য রাত জাগল তার পূর্ববর্তী গুণাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। তাই রোজাদারগণ সারাজীবনের গোনাহের ক্ষমা চায়। আল্লাহতালার সন্তুষ্টি অর্জনের ফরিয়াদ জানায়। তিন ভাগে বিভক্ত মাহে রমজান মাস। প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা বা মাগফিরাত, শেষ দশদিন নাজাত তথা দোযখের আগুন থেকে পরিত্রান। (মিশকাত)
এ মাস আত্মশুদ্ধি ও খোদার নৈকট্য লাভের সহজ পথ ও উসিলা। আল্ল­াহতালা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর যাতে তোমরা খোদা ভীরু হতে পার। (সূরা আল বাকারা: ১৮৩) এক কথায় মাহে রমজান বান্দার জন্য আল্ল­াহর মহান নেয়ামত। এ মাসে ঈমানদারগণ রোজা রাখে। রোজাদারদের জন্য সুসংবাদ যে রাসুল (দ.) বলেছেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়্যান, কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে একমাত্র রোজাদার প্রবেশ করবে। অন্যকারো এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার থাকবে না। আল্ল­াহর পক্ষ থেকে ডাকা হবে রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে। আর সবাই ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ হয়ে যাবে। আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)।
রমজানে মসজিদ হয় কানায় কানায় পূর্ণ। মুসল্লি­দের সমাগমে অন্যরকম দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ইসলাম ও মুসলমানের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। ইমানদারগণ এ মাসে আল্ল­াহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট থাকে। সমস্ত পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে চাই। রাসুল (দ.) বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং একটি দরজাও তখন আর খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এ মাসে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিতে থাকেন, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী অগ্রসর হও। হে পাপাসক্ত বিরত হও। আর এ মাসে আল্ল­াহর পক্ষ থেকে জাহান্নামী বহু লোককে মুক্তি দেওয়া হয়। এবং প্রতি রাতে এরূপ হতে থাকে।
রমজানে মুমিনগণ একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা, গরীব দুঃখিদের দান খয়রাত করে থাকে। রাসুল (দ.) বলেন, রমজান মাসে যে একটি ভালো কাজ করল সে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে একটি ফরজ আদায় করল সে ৭০টি ফরজ আদায় করল। বিভিন্ন স্থানে ইফতারের আয়োজনের মাধ্যমে রোজাদারদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। এতে সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্বের ঐক্য ফুটে উঠে। এক কথায় মাহে রমাজানের আল্ল­াহর সন্তুষ্টি র্অজন, ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি ও জীবন শৃঙ্খলাযুক্ত হয়। পবিত্র কোরআন অবতীর্ণের মাস। আল্ল­াহ বলেন, আমি মানুষের হেদায়তের জন্য পথনির্দেশনার বিস্তারিত বর্ণনাসহ সত্য মিথ্যার মাপকাঠি হিসেবে এই রমজান মাসেই কোরআন নাজিল করেছি।
সহস্র রাতের চেয়ে উত্তম রাত পবিত্র লায়লাতুল কদরের রজনী এ মাসে। রাসুল (দ.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের (ইবাদতের জন্য) রাত জাগরণ করে, তার পূর্ববর্তী গুণাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধসহ ইসলামের নানা ঘটনাপূর্ণ এ মাস। এ মহান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাসুল (দ.) তাদের প্রতি আক্ষেপ করেছেন যারা মাহে রমজান পেয়েও গুণাহ থেকে মুক্ত হতে পারেনি। গুণাহ থেকে মুক্ত হওয়া মানে সাধারণ গুণাহ থেকে মুক্ত হওয়া। গুণাহে সগিরা থেকে মুক্ত হওয়া।
কিছু মানুষ রমজান শরীফকে পুঁজি করে নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চায়। পণ্য সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট, ভেজাল, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ওজনে ঠকানো, দুর্নীতিসহ নানা অপারাধমূলক কর্মকাÐের মাধ্যমে পাপচারে লিপ্ত থাকে। আল্লাহ সবাইকে হেদায়ত করুন। সকলকে এ মহান মাসের ফজিলত হাসিল করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
গনতন্ত্র ১৭ মে, ২০১৮, ১২:৪৯ এএম says : 0
জনগন বলছেন, “ সময় –২০১৮ “ রোজা রাখি, নামাজ পড়ি মিথ্যা বলি লাগাতার, রোজার নিয়ম হল কি পালন উপবাস নয় কি নাম তার ৷ রোজা রেখে গীবত করি রোজা কি পালন হল আমার, ঘুষের টাকায় বাড়ী / গাড়ী সম্পদের প্রতিযোগিতায় নেমেছি এবার ৷ রোজা রেখে খাদ্যে ভেজাল মাদক ব্যবসা / নকল ঔষধ বাজারজাত, নয় / ছয়ে মানুষ ঠকানো কি হবে কাল আখিরাত ? গায়ে একটু ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি / গালিগালাজ / মারামারি, রোজার শর্ত হল কি পূরন দেখিনা পবিত্র কোরান / হাদিস পড়ি ? গরীবের উপর জুলুম / অবিচার ক্ষমতার দাপটে সন্মানিরা অপমান, ধর্ষন / চাদাবাজী নীরহ হত্যা কালহাশরে কোথায় হবে আমার স্হান ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন