ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের সার্বিক উন্নতি, প্রগতি ও কল্যাণের মহান বার্তা নিয়ে ইসলাম আগমন করেছে ধরণীর বুকে। জীবন চলার পথে, কোন কাজে মানুষের কল্যাণ, কোন কাজে মানুষের অকল্যাণ তার রূপরেখা প্রনয়ণ করে দিয়েছে ইসলাম। এমনকি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়েও এতে রয়েছে কালজয়ী দিকনির্দেশনা। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রোযার চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিষেধক হতে পারেনা। হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন: “রোযা রাখো, সুস্থ থাকবে”। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন “তোমরা যদি রোযা রাখো, তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, যদি তোমরা তা উপলদ্ধি করতে পারো।” (সূরা বাকারা:১৮৪)
বস্তুত, অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা রোযার বহু উপকারিতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করে উপরোক্ত আয়াতের সত্যতা প্রমান করেছেন। পাশ্চাত্যের প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদগণ এক বাক্যে স্বীকার করেছেন “রোযা রাখা অবস্থায় শরীরের ক্ষমতা ও সহ্যশক্তি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। সঠিকভাবে রোযা পালনের পর শরীর প্রকৃতপক্ষে নতুন সজীবতা লাভ করে। প্রতি বছর এক মাস রোযা রাখলে মানব শরীরের উপর এর বিরাট প্রভাব পরে। রোযা একই সাথে দেহে রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এজন্য একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের তিন সপ্তাহের জন্য উপবাস পালনের নির্দেশ দিতেন।
মহা বিজ্ঞানময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা তার প্রিয় বান্দাদের কে নিছক কোন কারণে রোযা পালনের নির্দেশ দেননি, বরং তাতে রয়েছে বিরাট রহমত ও বরতক। ড. লুট জানারের মতে, “খাবারের উপাদান থেকে সারা বছর ধরে মানুষের শরীরে জমে থাকা কতিপয় বিষাক্ত পদার্থ (টক্সিন), চর্বি ও আবর্জনা থেকে মুক্তি পাবার একমাত্র সহজ ও স্বাভাবিক উপায় হচ্ছে উপবাস। উপবাসের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে দহনের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ সমূহ দূরীভ‚ত হয়ে যায়। রোযা স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। রোযা মানুষকে চর্মরোগ, বাত, টিউমার, এযইমাস রোগ থেকে বাঁচায়। তাছাড়া এটি ডায়াবেটিক্স রোগীদের জন্য বিরাট নিয়ামত। কারণ, উপবাসের ফলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়। অনেক লোক আছে যারা পেপটিক আলসারের কথা বলে রোযা না রাখার বাহানা করে। তাদের জানা উচিত যে, রোযা রাখার ফলে পেপটিক আলসার হ্রাস পায়। ১৯৯৭ সালে করাচির এক প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে গ্যাষ্টিক বিশ্লেষনে দেখা গেছে যে, রোযা অবস্থায় পাকস্থালীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড বাড়ে না বরং কমে।
রোযা একটি ডিটোক্সিফিকেশন থেরাপি। ডা. আব্রাহাম জে. হেনরি বলেছেন, “রোযা হলো পরমহিত সাধনকারী ঔষধ। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে রোযার (উপবাস) মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এমনকি জার্মানির এক স্বাস্থ্য ক্লিনিকের গেইটে লেখা আছে, “রোযা রাখো, স্বাস্থ্যবান হবে”।
ডা. লুইস ফ্রন্ট বলেছেন, “রোযা পালনে মানব দেহ যথেষ্ট পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ হয়ে থাকে। মুসলমানরা নিশ্চয় রোযার মাসকে সুস্বাস্থ্যের মাস হিসেবে গণ্য করে থাকে।
রোযা যে শুধু মাত্র শারীরিক উন্নতি সাধন করে তা নয়, বরং তা আমাদের মানসিক উন্নতিও সাধন করে থাকে। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড নারায়ন্ড বলেন, “রোযা মনস্তাত্তি¡ক ও মস্তিস্কের রোগ নির্ম‚ল করে দেয়”।
ইসলাম রোযাকে মুমিনের জন্য রোগ মুক্তি বলে ঘোষণা দিয়েছে। সঠিক ভাবে রোযা পালনের মধ্যেই রয়েছে আমাদের সর্ব রোগের মহাঔষধ। এ প্রসঙ্গে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রখ্যাত প্রফেসর মুর পল্ডি দিল তার আত্মজীবনীতে লিখেন, “আমি বহু বইপত্র অধ্যয়ণ করেছি। যখন রোযার অধ্যায়ে পৌঁছলাম, তখন আমি বিস্মিত হলাম যে, ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এক মহৎ ফর্মূলা শিক্ষা দিয়েছে। ইসলাম যদি শুধু রোযার ফর্মূলায় শিক্ষা দিত, তাহলে এর চেয়ে উত্তম কোনো নেয়ামত তাদের জন্য হতো না।
মহান আল্লাহর বিরাট নিয়ামত রোযার বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্য মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আমাদেরকে এই কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, আমরা রোযা রাখি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাকওয়া হাসিলের জন্য, বৈজ্ঞানিক উপকারিতার জন্য নয়। তবে বৈজ্ঞানিক উপকারিতা আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে এক্সটা প্রতিদান!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন