স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেসব সমস্যা আছে তা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মানবসম্পদ অপ্রতুল, প্রতিদিনের তথ্য আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি। অতীতে সেই তথ্যগুলোও আমাদের হাতে ছিল না। একই সঙ্গে ডিজিটাল তথ্য ব্যবস্থাপনার কারণে আমরা তা জানতে পারছি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক পদায়নের চেষ্টা করছি।
‘স্বাস্থ্যনীতি সংলাপ’ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি থিংকট্যাংক-এর উদ্যোগে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারি স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সুষম বণ্টন’ শিরোনামে গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাপরিচালক এসব কথা বলেন। ‘স্বাস্থ্যনীতি সংলাপ’ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সমর্থিত, আইসিডিডিআর,বি’র স্ট্রেন্থদেনিং হেলথ, অ্যাপ্লায়িং রিসার্চ এভিডেন্স (শেয়ার) প্রকল্পের উদ্যোগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম শুরু করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চতুর্থবারের মতো স্বাস্থ্য বিষয়ক সংলাপটির আয়োজন করা হয়।
এবারের সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়কারী ড. মুশতাক হোসেন। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর রোবায়েত ফেরদৌস।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বি’র ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ও বিজ্ঞানী ড. ইকবাল আনোয়ার। তিনি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সরকারি স্বাস্থ্য খাতে চিকিৎসকের সুষম বণ্টন- চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবসম্মত সমাধান বিষয়ে আলোকপাত করেন। মূল বক্তব্যে উঠে আসে যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবা মূলত শহরকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চাহিদার বিপরীতে চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফসহ জনস্বাস্থ্যকর্মীর ব্যাপক সঙ্কট রয়েছে। এই সঙ্কটের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রমুখী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, তদারকি ও সুশাসনের কার্যকরী কাঠামোর অভাব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাব, সেবাদানকারীদের জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনার অভাব, প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসকদের নাগরিক জীবনযাপনের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা না থাকা- বিশেষ করে চিকিৎসকদের সন্তানদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবস্থা প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অনুমোদিত পদের বিপরীতে প্রায় ২০ দশমিক ৪ শতাংশ পদ খালি পড়ে রয়েছে, যা সার্বিকভাবে সরকারি খাতে এই চিকিৎসক সঙ্কট সৃষ্টি করছে।
একই সঙ্গে ৭৮৩ পদের বিপরীতে প্রায় ৪ হাজার ৭৪৯ চিকিৎসক বিশেষ ভারপ্রাপ্ত (ওএসডি) পদে ঢাকা বিভাগেই নিযুক্ত আছেন। এতে করে বাংলাদেশের জেলা শহরে সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক সঙ্কট মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সমন্বিতভাবে এ থেকে সমাধানের পথ বের করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক সকল কার্যালয়ের মাঝে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের পদায়নের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন আলোচকরা।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, এই সংলাপের মাধ্যমে বাস্তবধর্মী সমাধানের প্রস্তাবনা এসেছে, তা নীতিনির্ধারক বরাবর তুলে ধরা হবে, আগামীতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বাস্তবমুখী সমাধানে পৌঁছানোর লক্ষ্যে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন